আমার ভাই একাংশ-র কথা শুনে চমকে উঠলাম। বলে কী ছেলেটা? “ভাইয়া, তুমি ক্রিকেটের জন ম্যাকেনরো নাকি?” চমকে ওঠার কারণটা কিন্তু অন্য, আপনারা হয়তো অন্য কিছু ভাবছেন। ওর বয়সি একটা ছেলেও ম্যাকেনরোর কথা জানে! ওদের প্রজন্মের ছেলেরা তো জকোভিচ আর ফেডেরারেই মজে। এতটাই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম যে কিছুক্ষণের জন্য ভুলেই গিয়েছিলাম যে, আমি তখন সদ্য ভেজিটেবল স্যুপটা শুরু করেছি। ধাতস্থ হয়ে যখন ফের সেটাতে মন দিলাম, তখন বুঝলাম, একাংশ আসলে আমার জন্য বেশ চিন্তিত।
কোথাও একটা পড়েছিলাম, টেনিসের ইতিহাসে ম্যাকেনরোই একমাত্র প্লেয়ার, যিনি কোর্টে প্রায়ই রাগে ফেটে পড়া আর ভাল খেলা, দুটো এক সঙ্গে চালাতে পারতেন। আমার ক্ষেত্রে কিন্তু সেটা প্রযোজ্য নয়। রিং ব্যাক করে সেটা একাংশ-কে জানানোর ইচ্ছা ছিল আমার। বলার ছিল, ক্রিকেটটা আমি মন-প্রাণ দিয়ে খেলি, সততার সঙ্গে খেলি, দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার মধ্যে যেমন স্বচ্ছতা বজায় রাখি, তেমন সব সময় জেতার জন্যই খেলি। এটাই আমার ক্রিকেট দর্শন। ফোন করে আর ভাইকে কথাগুলো বলা হয়ে ওঠেনি। তবে এই লেখাটা বেরোলে ও নিশ্চয়ই তা জানতে পারবে। আম্পায়ারদের সম্পর্কে ম্যাকেনরোর কী ধারণা ছিল, তা নিশ্চয়ই সবার জানা। এও নিশ্চয়ই সবাই জানেন যে, আমি কোনও দিন ভুলভাল অ্যাপিল করে আম্পায়ারকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করি না বা তাঁদের চাপে ফেলার জন্য ভয়ঙ্কর অঙ্গভঙ্গিও করি না।
বিরাটের সঙ্গে আমার সে দিন যা হল, তা আসলে জয়ের জন্য মরিয়া দুই পেশাদার ক্রিকেটারের সংঘাত। তবে মাঠে যা হয়, তা মাঠেই রেখে আসাটা আমার অভ্যাস। চিকু, মানে বিরাটও সে রকমই। ওকে তো আমি ছোটবেলা থেকেই দেখছি। ম্যাচটা শেষ হয়ে যাওয়ার পর আমরা দু’জন একে অপরের সঙ্গে কথা বলেছি, সব মিটেও গিয়েছে। যাঁরা ঘটনাটার মধ্যে থেকে অনেক কিছু বের করে টিআরপি খোঁজার চেষ্টা করছেন, তাঁদের বলি, এর মধ্যে সে রকম কিছুই নেই। চিকু আর আমি আবার একসঙ্গে দিল্লি ও ভারতের হয়ে খেলব। সিনিয়ররা যেমন জুনিয়রদের পাশে দাঁড়ায়, আমিও বরাবর তা-ই করব।
শুক্রবার কলকাতায় এসে গিয়েছিলাম অ্যালবার্ট রোডে এক রেস্তোরাঁ ‘গোবিন্দাজ’-এ। দারুন ভেজিটেরিয়ান ডিশ পাওয়া যায় ওখানে। ওখানে একটা বিশাল ছবি রয়েছে। মহাভারতের সেই বিখ্যাত দৃশ্যটা। ভগবান কৃষ্ণ বিভ্রান্ত অর্জুনকে উপদেশ দিচ্ছেন। আমাদের দলের এক সাপোর্ট স্টাফ জিজ্ঞাসা করে বসলেন, ‘আইপিএলে খেলার সময় তোমাকেও কি একই বিভ্রান্তি ঘিরে ধরে না? তোমাকেও তো ভারতীয় দলের সতীর্থদের বিরুদ্ধেই খেলতে হচ্ছে।’ বললাম, ‘যখন কেকেআরের হয়ে নামি, তখনও যেমন জেতার জন্যই খেলি, তেমন ভারতের হয়েও খেলতে নামি জেতার জন্য। বিপক্ষে কে বা কারা, সেটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়।’ তাই একাংশ-কে বলি, আমি ম্যাকেনরোও নই, অর্জুনও নই। আমি শুধু গৌতম গম্ভীর হতে চাই। |