|
|
|
|
ছেলের তাগিদে ফের শুরু পড়া, এমএ-তে প্রথম মা |
স্বপন সরকার • পটনা |
ছেলেমেয়েদের মা বলেন, ওরে পড়। কিন্তু গয়ার রচনা ঝা মিশ্রের সংসারে ছবিটা ছিল উল্টো। সেখানে ছেলেই মায়ের পিছনে নিরন্তর লেগে থাকত, “মা, কাজ ছাড়ো। পড়তে বসো।”
ছেলের সেই তাগিদ ‘সোনা’ ফলিয়েছে। ইন্দিরা গাঁধী জাতীয় মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১১-র এমএ পরীক্ষায় ইংরেজিতে ৬৭ শতাংশ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছেন রচনা। ২০১১ সালের পরীক্ষার ফল ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হয়। রচনা হাতের মুঠোয় পেয়েছেন স্বর্ণপদক।
স্বপ্নপূরণের পথ সচরাচর যেমন হয়, রচনার বেলাতেও তা-ই ছিল। কঠিন, কঠোর। বয়স যখন ৯ বছর, তখন তাঁর
|
রচনা ঝা মিশ্র |
বাবা-মায়ের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। মায়ের কাছেই তাঁর বড় হওয়া ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে বিএ ফাইনাল পরীক্ষার এক বছর আগে ১৯ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে যায় রচনার। বিয়ের পর ১৯৮৬-তে স্নাতক হলেও তার পর থমকে যায় লেখাপড়া। শ্বশুরমশাই আর এন ঝা ছিলেন গয়ার অনুরাগ মেমোরিয়াল কলেজের ইংরেজির শিক্ষক। বৌমাকে বলেছিলেন, তাঁর উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু হঠাৎ তিনি হৃদ্রোগে মারা যান। এ দিকে রচনার শাশুড়ির ক্যানসার ধরা পড়ে। সংসার সামলে, শাশুড়ির সেবা করে আর পড়ার সময় পেতেন না রচনা। শ্বশুরের মৃত্যুর পরে স্বামী মৃত্যুঞ্জয় ওই কলেজেই অ্যাকাউন্টসে চাকরি পান। স্বামীর সামান্য মাইনেতে সংসার চালিয়ে শাশুড়ির চিকিৎসার খরচ চালানো ছিল কষ্টসাধ্য। তাই টিউশন শুরু করেন রচনা। ইতিমধ্যে মা-ও হয়েছেন।
২০০৯ সাল। ছেলে মানিক্য তখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। মানিক্যই মাকে বারবার বলত লেখাপড়া করার কথা। শেষ পর্যন্ত মা কথা শুনলেন। পটনায় এসে মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ করে পড়া শুরু করলেন। সংসারের দায়-দায়িত্ব সামলে, টিউশন চালিয়ে, ছেলের পড়াশোনার তদারকির ফাঁকে নিজের লেখাপড়া চালিয়ে যেতেন। ছেলের তাড়ায় মা-ছেলে এক সঙ্গে পড়তে বসতেন। এ ভাবেই গুটিগুটি পায়ে হাঁটতে শুরু করেছিল থমকে যাওয়া স্বপ্নটা। রচনা বলছিলেন, “যে দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের আঞ্চলিক অধিকর্তা কোয়াসিনউদ্দিন হায়দার জানালেন আমি প্রথম হয়েছি, সে দিন চোখে জল এসেছিল। শ্বশুরমশাইয়ের ইংরেজির বই আর নোট আমাকে যথেষ্ট সাহায্য করেছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নোট তো ছিলই।” শ্বশুরমশাইয়ের কথা মনে পড়ে রচনার। ধরা গলায় বললেন, “ওঁর ইচ্ছে ছিল লেখাপড়া করি। তিনিও ছিলেন ইংরেজির শিক্ষক। বিয়ের আগে আমায় বলতেন, ‘তোমাকে আমিই পড়াব।’ নিজের বাবাকে তো এই আনন্দের সঙ্গী করতে পারিনি। বাবা ভেবেছিলাম শ্বশুরমশাইকে।”
ইচ্ছাপূরণের পথেই শ্বশুরমশাইকে ছুঁয়েছেন রচনা। তাঁর কলেজ, গয়ার সেই অনুরাগ কলেজেই আমন্ত্রিত শিক্ষিকা হিসেবে পড়ানোর সুযোগ পেয়েছেন। এ বার নেট পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন রচনা। শুরু হয়েছে নতুন স্বপ্ন দেখা। |
|
|
|
|
|