‘বিতর্কিত’ নথি তলব করলেন ভাইস চেয়ারম্যান। জবাবে জানা গেল, নথি গায়েব। এমনকী, থানায় অভিযোগও দায়ের করেছেন কতৃর্পক্ষ। পুলিশও তদন্ত শুরু করেছে। অথচ কয়েক দিন পার হলেও কোনও বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিলেন না কর্তৃপক্ষ। ঘটনাটি বিধাননগর পুরসভার। তার জেরেই নতুন করে বিতর্ক ছড়িয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত, গত সপ্তাহে। বিধাননগর পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্ত এ ই ব্লকের একটি বাড়িতে ট্রেড লাইসেন্স সংক্রান্ত একটি ফাইল দেখতে চান। পাঁচ দিন পরে চলতি মাসের ৯ তারিখ জানা যায় ফাইলটি গায়েব। সে দিনই বিধাননগর দক্ষিণ থানায় অভিযোগ করেন পুর-কর্তৃপক্ষ। সব্যসাচীবাবুকেও সে দিনই জানানো হয়েছিল।
কী ছিল সেই ফাইলে? কেন তা নিয়ে বিতর্ক? পুরসভা সূত্রে খবর, এ ই ব্লকের একটি বাড়ির একাধিক মালিক। অভিযোগ, তাঁদের মধ্যে এক মালিক বাকিদের অনুমতি ছাড়াই বাড়িটি ভাড়া দেন এক বাণিজ্যিক সংস্থাকে। মাত্র এক মালিকের অনুমতির সাপেক্ষে পুরসভার কাছে ট্রেড লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। পুর-কর্তৃপক্ষও আবেদন মঞ্জুর করেন। কিন্তু মালিকপক্ষের সকলের অনুমতি ছাড়া কী ভাবে পুর-কর্তৃপক্ষ ট্রেড লাইসেন্সের অনুমতি দেন, তা নিয়ে বিতর্ক হয়। বাকি মালিকদের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে পুর-কর্তৃপক্ষ অনুমোদন বাতিল করেন। পুরসভা সূত্রে খবর, এক বিভাগীয় কর্মচারীকে ‘শো কজ’ও করা হয়।
প্রথমে ট্রেড লাইসেন্সের অনুমতি কী ভাবে দিল, প্রশ্ন উঠেছিল তা নিয়ে। পুরসভা সূত্রের খবর, ওই ঘটনায় ‘শো কজ’ হওয়া সেই কর্মচারী দায়িত্বরত কোনও উচ্চপদে আসীন ব্যক্তির নির্দেশেই এই কাজ করেছিলেন বলে জানিয়েছিলেন। এ প্রশ্নে পুর-কর্তৃপক্ষের মুখে কুলুপ। গত বছরের মে মাসের পরে বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়।
এ দিকে, অনুমতি বাতিল হওয়ার পরেও ব্যবসা চালু রয়েছে সেই বাড়িতে। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এমন অভিযোগ দায়ের করেন বাড়ির মালিকদের একাংশ। স্থানীয় কাউন্সিলর স্বাতী বন্দ্যোপাধ্যায় পুরসভার দ্বারস্থ হন। এর পরেই ভাইস চেয়ারম্যান লিখিত ভাবে ওই ফাইলটি চেয়ে পাঠান। তিনি বলেন, “চলতি মাসের ৪ তারিখ ফাইলটি দেখতে চেয়েছিলাম। ৯ তারিখ জানলাম ফাইল গায়েব।”
কিন্তু অনুমতি বাতিল হওয়ার পরেও যে ব্যবসা চলছে, তা কেউ জানতে পারল না কেন? স্থানীয় কাউন্সিলরের দাবি, ওই বাড়িতে বাইরে থেকে ‘শাটার’ বন্ধ করে ব্যবসার কাজ হত। ঘটনার কথা জানতে পেরেই পুর-কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। পুলিশ ইতিমধ্যেই পুরসভায় গিয়ে তদন্তের কাজ শুরু করেছে।
এ হেন বিতর্কিত নথি পুরসভা থেকে কী ভাবে উধাও হল? তা নিয়ে কেন এখনও বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ হল না? প্রশ্নের জবাবে বিধাননগর পুরসভার চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী বলেন, “এটি প্রশাসনিক বিষয়। তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।” পুরসভার এগ্জিকিউটিভ অফিসার মলয় মুখোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “ট্রেড লাইসেন্স দফতর থেকে একটি নথি পাওয়া যাচ্ছে না। থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।” কিন্তু বিভাগীয় তদন্ত সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করতে নারাজ। |