ঝাঁ-চকচকে হাসপাতাল ভবন। ভেতরটাও ঝকঝকে তকতকে। কিন্তু ভরতপুর-২ ব্লক হাসপাতালে রোগীর এতটাই চাপ মাত্রাতিরিক্ত। বেডে ঠাঁই হয় না সকলের। মেঝেতেই কাটাতে হয় অনেককে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, চিকিৎসকরা রোগীকে কান্দি মহকুমা হাসপাতালে অথবা কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ‘রেফার’ করেন। যদিও ওই দাবি মানতে নারাজ ভরতপুর-২ ব্লকের স্বাস্থ্য আধিকারিক সত্যজিৎ সরকার। তিনি বলেন, “কথায় কথায় ‘রেফার’ করার অভিযোগ ঠিক নয়। আমাদের সাধ্যমতো চিকিৎসা করি, যে রোগীর চিকিৎসা আমাদের নাগালের বাইরে তাঁদের অন্যত্র পাঠানো হয়।”
রাজ্যের আর পাঁচটা হাসপাতালের মতই এখানেও ঘাটতি রয়েছে চিকিৎসক থেকে সাফাই কর্মীর। ফলে ব্যাহত হচ্ছে পরিষেবা। যেমন ওই হাসপাতালে চিকিৎসক থাকার কথা দশ জন, কিন্তু আছে আট জন। তার মধ্যে দু’জন চিকিৎসক আবার ‘ডিটেলমেন্টে’ পাশের ভরতপুর-১ ব্লক হাসপাতালে দায়িত্ব সামাল দিচ্ছেন। একই ভাবে নার্স থাকার কথা দশ জন, আছে মাত্র ছয় জন। চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরও কমতি রয়েছে। দশ জনের দায়িত্ব সামাল দিচ্ছেন ছ’জনে। সাফাই কর্মী থাকার কথা তিন জন। রয়েছেন তিন জন। একই ভাবে তিন জন ফার্মাসিস্টের পরিবর্তে আছেন মাত্র এক জন। এই কর্মী সংকটে পরিষেবা দিতে সমস্যা হয় না? সত্যজিৎবাবু বলেন, “ম্যানেজ করে চালিয়ে নিতে হয় আর কী?”
শুধু কী কর্মীর অভাব? পাশাপাশি আছে বেডেরও আকাল। ৩০টি শয্যা থাকার কথা, ২৬টি শয্যা দিয়েই কাজ চালাতে হচ্ছে বলে দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। তবে ভর্তি থাকা রোগীরা চাদর, কম্বল পান না বলে অভিযোগ। ওই হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন বহির্বিভাগে প্রায় সাড়ে পাঁচশোর বেশি রোগী আসেন। আবার অন্তঃবিভাগে গড়ে প্রায় ৪৫ থেকে ৫০জন রোগী ভর্তি থাকেন। ডায়েরিয়া আক্রান্ত রোগীদের জন্য পৃথক ঘরের ব্যবস্থা করা থাকলেও, কোনও বেড নেই। রোগীর আত্মীয় আব্দুল আমিন, জাবেদা বিবিরা বলেন, “চিকিৎসকরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেন। তবে বেড নেই, মেঝেতে শুয়ে থাকা রোগীদের বিছানা চাদর কম্বল কোনও কিছুই দেওয়া হয় না।” ভরতপুর দু’নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বদরুল আজম বলেন, “কর্মী ও বেডের অভাবে পরিষেবা ব্যাহত হয়। তবে চিকিৎসকরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেন।” বিএমওএইচ সত্যজিৎ সরকার বলেন, “কর্মী-সঙ্কট ও বেডের অভাব নিয়ে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বহু বার জানিয়েছি। সব থেকে যেটা প্রয়োজন সেটা নার্সের।”
কান্দি মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক ভাস্কর বৈষ্ণব বলেন, “কর্মীর অভাব রয়েছে। ‘ম্যানেজ’ করে চালিয়ে নিতে হচ্ছে। তবে চাদর, কম্বল ও শয্যার অভাব যাতে দ্রুত মেটানো যায় তার চেষ্টা করব।” |