|
|
|
|
|
|
|
নাটক সমালোচনা... |
|
বাঁধ ভেঙেছে চোখের জলে
বহুরূপীর ‘রাজার খোঁজে’। লিখছেন বিপ্লবকুমার ঘোষ |
সময় বদলে যায় দ্রুত। স্থান পরিবর্তিত হয় আরও দ্রুত। বদলে যায় মানুষের চাওয়া-পাওয়াও। কিন্তু বদল হল না জোর করে আলাদা করার রাজনীতি। তাই শুরু হয় কাঁটাতারের সীমানা ভেঙে ফেলার প্রতিবাদ। জোরালো পদক্ষেপ। প্রতিধ্বনিত হয় সেই বাণী, ‘আমাদের ঘর না থাকার ইতিহাস অন্যদের ঘর ছাড়া করার অধিকার দেয় না। কোনও অত্যাচার সহ্য করার ইতিহাস অত্যাচারী হয়ে ওঠার অধিকার দেয় না।’ সত্যিই তাই। প্রতিবাদ ছড়িয়ে যায় পোল্যান্ড থেকে প্যালেস্তাইন, আফগানিস্তান থেকে আফ্রিকা। নানা প্রান্তে।
বহুরূপীর প্রযোজনায় ‘রাজার খোঁজে’ নাটকটি বহু দিন পরে কলকাতার মঞ্চে এমনই শিহরন জাগাল, যেখানে বাঁধ ভেঙেছে চোখের জলে। সমবেদনার পাশাপাশি জন্ম নিল ক্রোধ ও ঘৃণা। তা আরও মূর্ত হয়ে ওঠে নাটকের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র অ্যাডেকের কণ্ঠে, ‘আপনিই তো শিখিয়েছিলেন ঠাকুরদা, গণতন্ত্র, ভোট মেজরিটি, কিন্তু ভোট দিয়ে কি ময়দা কেনা যায়? আপনি একটি বন্দুক দিলেন না কেন আমায়?’ |
|
বা ডাক্তার চরকের সেই স্বীকারোক্তি, ‘সব গুলি খাওয়া মানুষের চিত্কার এক। সব মানুষের বাঁচার ইচ্ছাও এক।’ আসলে এই নাটকের সময়কাল ১৯৪২। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকাল। ওয়ারশ শহর। যেখানে নাত্সি বাহিনীর ক্ষমতা দখলে কোণঠাসা হতে থাকে ‘অনার্য’ ইহুদির দল। তার মধ্যেও অদ্ভুত ভাবে লড়াই চালিয়ে যান ডাক্তার করজ্যাক। যিনি সর্বদাই আগলে রাখেন ফুলের মতো এক ঝাঁক অনাথ ইহুদি শিশু কিশোরকে। কিন্তু নকল রাজার হুংকারে করজ্যাক দিশেহারা হয়ে পড়েন। বিপদের আঁচ পেয়ে যান ইডা, স্টেফা, অ্যালিসিয়া। বুঝতে পারেন শিশুরা মৃত্যুর দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। এ বার তাদের নিয়ে যাওয়া হবে বধ্যভূমির দিকে।
শেষমেশ এল সেই চরম বার্তা। উল্লসিত হয়ে ওঠে আর্যের দল। কিন্তু না। মৃত্যুর গন্ধে ভীত নয় অনাথ শিশুরা। বরং উপেক্ষার হাসি তাদের চোখে মুখে। কোথা থেকে এল এত সাহস? কে-ই বা শেখাল মৃত্যুঞ্জয়ী মন্ত্র? আসলে এ নাটকের গভীরে কোথায় যেন রবীন্দ্রনাথের ‘অমল’ জীবন-দর্শন। সরাসরি, বা পরোক্ষ ভাবে। অমল ও দইওয়ালার মতো এখানেও চিজওয়ালার সঙ্গে অ্যারিয়েলের সেই কথোপকথন। ছোট্ট রিমিল সেন অভিনয় গুণে সব দর্শককেই কাঁদিয়ে ছেড়েছে। অভাবনীয় সুন্দর অভিনয়। ওর শুধু শুভেচ্ছা নয়, আশীর্বাদও প্রাপ্য।
রংগন চক্রবর্তীর এই নাটকে ডাক্তারের ভূমিকায় দেবেশ রায়চৌধুরী আরও একবার দেখালেন অভিনয় কাকে বলে। অভিনয়ের গতিকে আরও দ্রুত করেছেন প্লাবন সেনগুপ্ত, গৌতম বসু, সৌমিতা বিশ্বাস, তুলিকা দাস, ঝিনুক সরকার, মনমিতা চৌধুরী। এ ছাড়াও নজর কাড়ে উদন্যা, শিঞ্জিনী, ঈশানী, তন্নিষ্ঠা, মনস্বিতা, আর্য, সোহম। ধন্যবাদ পাবেন পরিচালিকা তুলিকা দাশ। আবহে দেবজ্যোতি। মঞ্চ অমিতাভ মালাকারের।
|
মূকাভিনয়ে বিবেকানন্দ |
|
সম্প্রতি পদাবলীর পরিচালিত তিন দিনের মূকাভিনয় উত্সব হয়ে গেল যোগেশ মাইম অ্যাকাডেমিতে। প্রকৃতি দত্তের মন্ত্রপাঠের মাধ্যমে শুরু হল উদ্বোধন। রূপশীর্ষ ও রাজশীর্ষ মাঙ্গলিক সঙ্গীত পরিবেশন করেন। উপস্থিত ছিলেন সুনন্দ সান্যাল। সংবর্ধিত হন কনিষ্ক সেন। প্রথম দিন মূকাভিনয় ছিল ‘আর রক্ত নয়’, ‘রোবট’, ‘আমাকে বাঁচতে দাও’। দ্বিতীয় দিনে ছিল যোগেশ মাইম অ্যাকাডেমির ‘স্বামী বিবেকানন্দ’। তৃতীয় দিনে বর্ধমান ‘নির্বাক’ উপস্থাপন করলেন বেশ কিছু অভিনয়। তার মধ্যে ‘ফাস্ট ফুড’, ‘মোবাইল’, ‘পড়ার চাপ’ প্রত্যেকটিই প্রশংসার দাবি রাখে। পঞ্চপাণ্ডবের ‘চোর পুলিশ’ সবাইকে স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দ দেয়।
শেষ অনুষ্ঠান হয় শিবিরে অংশগ্রহণকারী ৫০জন ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে। শ্রীকান্ত বসুর পরিচালনায় দিল্লির মর্মান্তিক কাহিনিটি নিখুঁত ভাবে ফুটে ওঠে। অনুদীপা মুখোপাধ্যায়ের ভাষ্য-নৃত্য সকলকে মুগ্ধ করে। |
|
|
|
|
|