|
|
|
|
তৃণমূল কর্মীর মৃতদেহ উদ্ধার বাড়ির পাশে খালে
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক |
এক তৃণমূল কর্মীর মৃতদেহ উদ্ধার হল মেদিনীপুর ক্যানেল থেকে।
শুক্রবার সকালে কোলাঘাট থানার আমলহাণ্ডা এলাকার মহিষগোট গ্রামে এই ঘটনার জেরে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। মৃত শেখ আনসার আলি (৪৯) এখন গাড়ি চালালেও আগে কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই খাদানে কাজ করতেন। সেই সূত্রেই তৃণমূল শ্রমিক ইউনিয়নের সক্রিয় সদস্য ছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার রাতে বাড়ি না ফেরায় পরিবারের লোকেরা চিন্তায় ছিলেন। শুক্রবার সকালে কাছেই মেদিনীপুর ক্যানেল থেকে আনসারের মৃতদেহ উদ্ধার করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান ওই ব্যক্তিকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। টাকাপয়সা নিয়ে গোলমাল আর ছাইখাদানে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই আনসারকে খুন করা হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। কিছু দিন আগে প্রায় ৪০ জন শ্রমিককে নিয়ে তৃণমূলেরই অন্য একটি গোষ্ঠীতে আনসার যোগ দিয়েছিলেন। তার জেরেই তাঁকে খুন করা হল বলে অভিযোগ। তবে, নির্দিষ্ট ভাবে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়নি। কোলাঘাটের তৃণমূল বিধায়ক বিপ্লব রায়চৌধুরী শুধু বলেন, “আমি অসুস্থ হয়ে বাড়িতে রয়েছি। আমাদের এক দলীয় কর্মী খুন হয়েছে বলে শুনেছি।” জেলা পুলিশ সুপার সুকেশকুমার জৈন বলেন, “খুনের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ কুকুর আনা হয়েছিল। কিছু সূত্র পাওয়া গিয়েছে। তবে এখনও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।” |
মৃত তৃণমূল নেতার শোকার্ত পরিবার |
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আনসার আলি আগে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই খাদানে ঠিকা শ্রমিকের কাজ করতেন। সম্প্রতি তিনি একটি ছোট গাড়ি কিনে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত একটি সংস্থায় ভাড়া দিয়েছিলেন। নিজেই চালাতেন। ছাই খাদানের কাজ ছেড়ে দিলেও আনসার সেখানের শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে ছাই খাদান সংলগ্ন তৃণমূল শ্রমিক ইউনিয়ন অফিসে একটি বৈঠকে ছিলেন আনসার। রাত ৮টা নাগাদ বৈঠক শেষের পর নিজের গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। তারপর থেকেই তার আর কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। শুক্রবার সকালে বাড়ি থেকে কয়েকশো মিটার দূরে মেদিনীপুর ক্যানেলের ধারে রাস্তার উপর আনসারের গাড়িটি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দাদের সন্দেহ হয়। খোঁজাখুঁজি করে খাল থেকে দেহটি উদ্ধার হয়। এরপর ক্ষুব্ধ তৃণমূল সমর্থকরা পুলিশ কুকুর এনে দোষীদের শনাক্তকরণের দাবি তুলে বিক্ষোভ শুরু করেন। পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করতে এলে এলাকার বাসিন্দারা প্রথমে বাধা দেন। পরে ঘটনাস্থলে যান জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, এসডিপিও ও ওসি-সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী। যথাযথ তদন্তের আশ্বাস দিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায় পুলিশ।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় রাস্তার উপর আনসারের মৃতদেহ ঘিরে রেখে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। মৃতের গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। চোখে, মুখে রক্ত লেগে তখনও। আধ কিলোমিটার দূরে আনসারের একতলা পাকা বাড়ি। বাড়িতে স্ত্রী আনসুরা বিবি, বৃদ্ধ বাবা, এক মেয়ে ও জামাই থাকেন। ১৮ বছরের একমাত্র ছেলে বেঙ্গালুরুতে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। আনসারের স্ত্রী আনসুরা বিবি কাঁদতে-কাঁদতে বলেন, ‘‘ঠিকাদারের গাড়ির টাকা-পয়সা দেওয়া নিয়ে অন্য চালকদের সঙ্গে গোলামাল চলছিল। গতকাল রাতে ইউনিয়ন অফিসে মিটিং ছিল। সেখান থেকে দেউলিয়া বাজারে গিয়েছিল। বাড়ি ফেরার সময় রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ আমাকে ফোন করে জানিয়েছিল কোলাঘাটে এসে গিয়েছে। তাড়াতাড়িই ফিরবে। সেই সময় কেউ ফোনটা কেড়ে নিয়েছিল বলে মনে হয়েছিল। বাড়ি না ফেরায় চিন্তা বাড়ে। কিন্তু এমন পরিণতি ভাবতেও পারিনি।” এদিন বিকেলে মৃত আনসারের বাড়িতে যান জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি তথা তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক মামুদ হোসেন। তিনি বলেন, “আনসার আমাদের দলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর কারণ তদন্ত করে দেখতে বলা হয়েছে।” |
|
|
|
|
|