|
|
|
|
লালগড়ে তৃণমূলের সম্মেলন |
বনবিহারীতেই আস্থা রাখতে বললেন শুভেন্দু
বরুণ দে • লালগড় |
ভোট বড় বালাই! লালগড়ে ‘অধিকার’ প্রকল্পে দুর্নীতি নিয়ে যখন শোরগোল চলছে, দলের অন্দরেই আঙুল উঠছে ব্লক সভাপতি বনবিহারী রায়ের দিকে, তখন ‘বিতর্কিত’ সেই নেতার উপরই আস্থা রাখলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। শুক্রবার লালগড়ে পঞ্চায়েত রাজ সম্মেলনে সাংসদ তথা যুব তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি শুভেন্দু অধিকারীর আহ্বান, “একাংশ সংবাদমাধ্যম কুৎসা করছে। বনবিহারীবাবু পরীক্ষিত নেতা। আপনারা ওঁর পাশে থাকুন।”
গরিব মানুষের বাড়ি তৈরির প্রকল্প ‘অধিকার’-এ দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর এ দিনই প্রথম লালগড়ে দলের বুথ কর্মীদের নিয়ে সম্মেলন হল। নেতৃত্বের কথায় প্রমাণিত হল দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব তাঁদের ভাবাচ্ছে। তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষের কথায়, “বুথে বুথে আর কোনও বিরোধী শক্তি নেই। নিজেদের মধ্যে যে ভুল বোঝাবুঝি রয়েছে, তা মিটিয়ে নিন। নাহলে দলেরই ক্ষতি।” আর এক জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষের মন্তব্য, “ইগো ভুলে আলোচনার টেবিলে বসুন। সামান্য ভুলের জন্য সিপিএম পঞ্চায়েতে জিতলে মানুষ ক্ষমা করবে না।”
‘অধিকার’ নিয়ে শোরগোলের মধ্যেই ইস্তফা দিয়েছিলেন যুব তৃণমূলের লালগড় ব্লক সভাপতি তন্ময় রায়। দলীয় সূত্রে খবর, এই ঘটনার পর বনবিহারীবাবুও ব্লক সভাপতির পদে ইস্তফা দিতে চেয়েছিলেন। তবে জেলা নেতৃত্বের একাংশ তাঁকে বোঝান, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ইস্তফা দেওয়া ঠিক হবে না। তন্ময় এ দিনের সম্মেলনে ছিলেন না। যদিও সম্মেলন শেষে এক প্রশ্নের উত্তরে শুভেন্দু বলেন, “তন্ময় সংগঠনের কর্মী। ওঁকে কাজ চালিয়ে যেতে বলেছি।” |
লালগড়ে পঞ্চায়েত রাজ সম্মেলনে বনবিহারী রায়। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
একাংশ নেতা-কর্মীর আচরণ নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে প্রশ্ন উঠছে। সেই প্রসঙ্গও ওঠে সম্মেলনে। সাংসদ তথা তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী বলেন, “লক্ষ্মণ শেঠ-সুশান্ত ঘোষেরা জেলে গিয়েছেন। আমাদের দলে যদি এমন কোনও নেতার অন্তর্ভুক্তি হয়, তাহলে তাঁর কোথায় জায়গা হবে, উপলব্ধি করে নিন।” সুব্রতবাবুর বক্তব্য, “আর দু’-চার বছর পর বাংলার মাটিতে তৃণমূল ছাড়া আর কোনও দল থাকবে না। ফলে, অনেকেই তৃণমূলের দিকে আসবেন। তবে নজর রাখতে হবে, আমার-আপনার ছত্রছায়ায় থেকে কেউ যেন অসামাজিক কাজকর্ম না করে।” পদ নিয়ে দলের বিভিন্ন স্তরে যে দ্বন্দ্ব রয়েছে, তা স্পষ্ট হয়েছে তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের কথায়। তিনি বলেন, “নেতার পিছনে ঘুরে নেতা হওয়া যায় না।”
লালগড়ের সম্মেলন থেকে অবিলম্বে পঞ্চায়েত নির্বাচনেরও দাবি জানান তৃণমূল নেতৃত্ব। শুভেন্দুবাবুর কথায়, “আদালতে মামলা চলছে। তাই বেশি কিছু বলছি না। তবে লালগড়ের মাটি থেকে দাবি জানাচ্ছি, রাজ্যে অবিলম্বে পঞ্চায়েত নির্বাচন করতে হবে।” নির্বাচন পিছনোর জন্য কমিশনকে দুষে সুব্রতবাবু বলেন, “যাই যাই রব তুলে উন্নয়নের ধারাকে স্তব্ধ করার চেষ্টা চলছে। যাঁরা উন্নয়ন স্তব্ধ করতে চাইছেন, তাঁদের বলব, সতর্ক থাকুন।”
গত মার্চে বিনপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় কম লোক হয়েছিল। যেখানে হাজার পঁচিশেক লোক ধরে, সেখানে জমায়েত হয়েছিল বড় জোর পাঁচ হাজারের। রাজ্যে পালাবদলের পর বহুবার জঙ্গলমহলে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে এত কম জমায়েত কখনও হয়নি। এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে দলে। সামনে আসে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের প্রসঙ্গ। একাংশ নেতৃত্বের মতে, জঙ্গলমহলে দলের কাণ্ডারী শুভেন্দু অধিকারী। তবে মুখ্যমন্ত্রীর ওই সভার আয়োজনে শুভেন্দুকে সে ভাবে দায়িত্বই দেওয়া হয়নি। দায়িত্ব বর্তেছিল তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের উপর। যদিও মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তি ছিল, “এটা গরমকাল। এত রোদে বেলা বারোটার সময় সভা হয় না।” শুক্রবার চৈত্রের দুপুরে গরম ছিল যথেষ্টই। এ দিন তাই ঘেরা জায়গায় সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল। বেলা তিনটেতে অস্বস্তিকর গরমের মধ্যেএ সেখানে যথেষ্ট সংখ্যক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। |
|
|
|
|
|