|
|
|
|
|
|
|
অঞ্জন-ব্যঞ্জন |
মৎস্য খাইব, খেলিব সুখে
অঞ্জন চট্টোপাধ্যায় |
|
নাম কলকাতা নাইট রাইডার্স, আর তাতে কলকাতার ছোঁয়া থাকবে না, এ হয় না কি? এ বারের আইপিএল তাই শুরু থেকেই মনে আর মেজাজে দস্তুর মতো কলকাত্তাইয়া। আর কে না জানে, মনে প্রবেশাধিকার চাইলে তা শুরু হয় পেট থেকে বা প্লেট থেকেও বলতে পারেন। আর প্লেটে যদি সাজানো থাকে গন্ধরাজ ভেটকি আর কাঁচালঙ্কা-মুরগি তাহলে ইওয়ন মরগ্যান থেকে জ্যাক ক্যালিস মাত হবেন সকলেই। এমনকী, হাসি ফুটবে গৌতম গম্ভীরের মুখেও।
|
|
আসলে, এ বার যখন আইপিএল-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পেটপুজোর দায়িত্বটা আমার ঘাড়ে এসে পড়ল, তখন একটা জিনিস গোড়াতেই ঠিক করে নিয়েছিলাম যে, বাঙালি খানাপিনার অস্বাস্থ্যকর বদনামটা ঘোচাতেই হবে। বিশেষত, সেই খাবার যখন খেলোয়াড়েরা খাবেন তখন স্বাস্থ্যের দিকটা মাথায় রাখতে হবে বই কী। তাই সমস্ত বাঙালি পদ-ই রান্না করা হয়েছে বা হবে কম তেলে, কম মশলায় এবং প্যান ফ্রায়েড। আর এ ভাবেই তৈরি হয়েছে বাংলা রান্নার এক নতুন ঘরানা, যাতে শুধু স্বাদ নয়, রয়েছে স্বাস্থ্যেরও রসদ।
সচিনের বাঙালি রান্নাপ্রীতির কথা এ প্রসঙ্গে না বললেই নয়। ইলিশ আর ভেটকি পাতুরির টানে ‘ফিদা’ হয়ে যাওয়া এই কিংবদন্তি ক্রিকেটার বহু দিন ধরেই আমাদের ওহ! ক্যালকাটা-র মস্ত বড় ফ্যান। মোবিফিস্ট-এর এই আইপিএল বরাতে, আমি নিশ্চিত, তেন্ডুলকর খুশিতে আটখানা। তবে, শুধু সচিন-ই নন, দেহিয়া থেকে ব্রেট লি, বাঙালি রান্নায় মজেছেন এ বার আরও অনেকেই। ভাপা মুরগি বা চিটাগাং আলুর দমের কাছে কোথায় লাগে কন্টিনেন্টাল, এমনও মত পোষণ করেছেন কেউ কেউ।
শুধু কি তাই? মেন কোর্সের আগে বাঙালি স্ন্যাক্সেরও এ বার জয় জয়কার। যে কলকাতাকে মুড়ি, চানাচুর আর সিঙাড়া থেকে আলাদা করা যায় না, আইপিএলের ভিআইপি লাউঞ্জে নাইট রাইডার্সদের অনেকেরই হাতে হাতে ঘুরবে বাঙালির এই এল টাইম ফেভারিট। ইওয়ন মর্গ্যানের প্রিয় কাঠি রোলও থাকছে মেনুতে।
মরগ্যান না কি প্রথম লন্ডনের কোনও ভারতীয় রেস্তোরাঁয় এর স্বাদ পেয়েছিলেন। আর এ বার কলকাতায় এসে অবধি তাঁর জিভে লেগে রয়েছে আমাদের ‘হিলসা টোস্টের’ স্বাদ।
বাঙালির মাছ যে এ ভাবে বিশ্ব জয় করবে কে ভাবতে পেরেছিল বলুন। আসলে, আমরা বাঙালিরা যত বেশি পৃথিবীর নানান দেশের খাবার নিজেদের পেটে ইম্পোর্ট করি, বাঙালি রান্না তুলনায় বিদেশিদের কিন্তু খাওয়াই কম। আর খাওয়ালেও, তা শুধু রসগোল্লাতেই আটকে আছে বহু দিন ধরে। |
|
এটাকেও, আমি বাঙালির কূপমণ্ডূকতাই বলব। আর এখানেই লুকিয়ে আছে এক বিপুল বাণিজ্যিক সম্ভাবনা। আজ দেশে দেশে যেমন চাইনিজের জনপ্রিয়তা, একটু উদ্যোগী হলে, কে বলতে পারে আমাদের ডাব-চিংড়িও এক দিন সাংহাই, বেজিং-এ ঝড় তুলবে না!
এ বারের আইপিএল তাই বাঙালির রসনার ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক ঘটনা। বাঙালি রান্নার এই জয়যাত্রায় যাঁরা সখ্য দিয়েছেন এই সুযোগে তাঁদের সবাইকে আমাদের কৃতজ্ঞতা। বাংলার চিরায়ত প্রবচন, ‘মৎস্য মারিব খাইব সুখে’ যে খেলার মাঠে এমন ওভার বাউন্ডারি হাঁকাবে, ভাবা যায়নি! |
ছবি: শুভেন্দু চাকী |
|
|
|
|
|