এমনিতে এ মরসুমে ইতিমধ্যে হাফডজন বার ব্যাপারটা হয়ে গিয়েছে ‘এল ক্লাসিকো’! সুপার কাপ, কোপা দেল রে আর লি লিগা মিলিয়ে রোনাল্ডোর রিয়াল মাদ্রিদ এগিয়ে মেসির বার্সেলোনার থেকে। কিন্তু তাতে কী?
এ সব শুকনো পরিসংখ্যানকে সরিয়ে রেখে গোটা বিশ্ব ফুটবল যেটা দেখার প্রত্যাশায়, শুক্রবার ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনাল সূচির ড্র হওয়ার পরেও সেই স্বপ্ন বেঁচে থাকল। ইউরোপিয়ান ফুটবলের সবচেয়ে কঠিন টুর্নামেন্টের ফাইনালে ‘এল ক্লাসিকো’! বার্সা বনাম রিয়াল।
দুই স্প্যানিশ আর দুই জার্মান টিমের লড়াইয়ে দু’টো সেমিফাইনাল লাইন আপই দাড়িয়েছে স্পেন বনাম জার্মানি। এক দিকে রিয়াল বনাম বায়ার্ন। অন্য দিকে বার্সা বনাম বরুসিয়া। ফলে ২৫ মে ওয়েম্বলির ফাইনালে ‘এল ক্লাসিকো’ হওয়ার সোনার সুযোগ সামনে!
এরই সমান এই মুহূর্তে আরও একটা বিষয় ফুটবলপ্রেমীদের চর্চার বিষয়। মেসির ফিটনেস। বার্সেলোনা ক্লাবের সরকারি ওয়েবসাইটের টাটকা খবর অনুযায়ী, মেসি আগামী পনেরো দিন খুব সম্ভবত খেলতে পারবেন না। এর ফলে লা লিগায় জারাগোজা-র বিরুদ্ধে তাঁকে দেখার তো প্রশ্নই নেই। খুব বেশি হলে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালের ঠিক আগে লেভান্তে-র বিরুদ্ধে মিনিট কয়েকের জন্য পরিবর্ত নামিয়ে মেসির ম্যাচ ফিটনেস দেখে নিতে পারেন তিতো ভিলানোভা। নইলে সটান ২৩ এপ্রিল মিউনিখে বায়ার্ন ম্যাচ খেলবেন এল এম টেন। প্যারিস সাঁ জাঁ ম্যাচে বাধ্য হয়ে বার্সা ম্যানেজমেন্ট মেসিকে ম্যাচের এক ঘণ্টার মাথায় নামানোর পর তিনিই পেদ্রোর ১-১ করার গোলের রাস্তা গড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষের দিকে মাঠে কার্যত হাঁটতে দেখা যায় মেসিকে। পাশ দিয়ে বল চলে গেলেও হ্যামস্ট্রিংয়ের যন্ত্রণায় দৌড়ে ধরার শক্তি ছিল না গত চার বারের ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলারের! |
একশো ভাগ ফিট মেসিকে না পেলে সেমিফাইনালে কী হবে তা নিয়ে কিন্তু বার্সা শিবিরের মতো এল এম টেনের অগুণতি ফ্যানও চিন্তিত। প্রাক্তন জার্মান তারকা ফুটবলার তথা বায়ার্ন ক্লাব ম্যানেজমেন্ট বস রুমেনিগে এখনই হুঙ্কার দিয়েছেন, “চার বছর আগের ‘বার্সেলোনা ওয়াটারলু’-র বদলা নিতে এ বার এই ম্যাচে নামা উচিত আমাদের।” সেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কোয়ার্টার ফাইনালে বায়ার্ন ১-৫ চূর্ণ হয়েছিল বার্সার কাছে। সদ্য বুন্দেশলিগা চ্যাম্পিয়ন বার্য়ান কোচ হেইনকেস-ও বলেছেন, “গত কয়েক বছর ধরে বার্সা ইউরোপিয়ান ফুটবলকে শাসন করেছে ঠিকই। ওরা বড় টিম। কিন্তু আমরাও শেষ চার বছরের মধ্যে তিন বার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনাল খেলছি। শেষ তিন বারের মধ্যে দু’বারের ফাইনালিস্ট। আমরাও বড় টিম। বার্সাকে ভয় পাচ্ছি না।” বায়ার্ন অধিনায়ক ফিলিপ লাম আবার বলেছেন, “বার্সার চোখে চোখ রেখে খেলার মতো দল আমরা। ওয়েম্বলিতে আমাদের যাওয়ার সম্ভাবনা ৫০-৫০।” মুলার বলেছেন, “বার্সেলোনার বিরুদ্ধে খেলিনি। ম্যাচটার জন্য মুখিয়ে আছি।” বার্সার সামনে পড়েও রবেন বলছেন, “ডর্টমুন্ডকে সেমিফাইনালে এড়াতে চাইছিলাম।”
এ সবের পাশাপাশি বার্সা শিবির থেকে শুধু ইনিয়েস্তা বলেছেন, “সেমিফাইনালে যখন উঠেছে তখন চারটে দলই টপ টিম। যার মধ্যে আমরাও পড়ছি। ফলে বাকি তিন টিমের কাদের সঙ্গে খেলছি সেটা কোনও বড় ব্যাপার নয়। ফাইনালে ওঠার জন্য নিজেদের সেরাটা দিতে হবে জানি।”
অন্য দিকে রিয়াল সর্বেসর্বা বুত্রাগুয়েনো বলেছেন, “কঠিন লড়াই হবে। তবে সেমিফাইনালে যার সঙ্গেই খেলতে হোক না কেন, সেটা কঠিন লড়াই-ই হয়ে থাকে।” আর বরুসিয়া কোচ ক্লপের কথা, “আমরা খুশি। কারণ আমরা ছাড়া চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এখনও টিকে থাকা বাকি তিন টিমের মধ্যে একমাত্র রিয়ালকে আমরা এ বারের টুর্নামেন্টেই হারিয়েছি গ্রুপ ম্যাচে। রোনাল্ডোদের সঙ্গে আবার খেলতে তাই ভালই লাগবে।”
|
নকআউট নামা |
• বায়ার্ন-বার্সা লড়াইয়ে দু’দলই এক বার করে জিতেছে। ’৯৫-৯৬ উয়েফা কাপ সেমিফাইনালে বায়ার্ন ৪-৩ জেতে। ২০০৮-’০৯ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কোয়ার্টার ফাইনালে বার্সা জেতে ৫-১।
• ইউরোপিয়ান কাপ সেমিফাইনালে বায়ার্ন পাঁচ বার স্প্যানিশ টিমের সঙ্গে খেলে চার বার (সব রিয়াল মাদ্রিদের বিরুদ্ধে) জিতেছে।
• জার্মান প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নকআউট পর্বে বার্সা কখনও হারেনি। সাত ম্যাচে সাত জয়।
• বরুসিয়া-রিয়াল যুদ্ধ এক বারই হয়েছে। ’৯৭-’৯৮ ইউরোপিয়ান কাপ সেমিফাইনালে রিয়াল ২-০ জেতে।
• ডর্টমুন্ড ইউরোপিয়ান নকআউটে স্প্যানিশ দলের বিপক্ষে পাঁচ বার খেলে চার বার জিতেছে।
• রিয়াল জার্মান প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে শেষ দু’টো নকআউটেই হেরেছে। গত মরসুমেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালে তাদের হারায় বায়ার্ন। |
|
শেষ চারে যুযুধান |
• বায়ার্ন মিউনিখ : বার্সেলোনা
(২৩ এপ্রিল মিউনিখ ও ১ মে ন্যু কাম্প) |
• বরুসিয়া ডর্টমুন্ড : রিয়াল মাদ্রিদ
(২৪ এপ্রিল ডর্টমুন্ড ও ৩০ এপ্রিল বের্নাবৌ) |
|