সামনে শুধু বিমান কর্মীদের তৈরি একটা হার্ডল। টপকাতে পারলেই পাহাড়প্রমাণ অবনমনের চাপ থেকে মুক্তি পেয়ে যাবেন ওডাফা-নবিরা!
কল্যাণী স্টেডিয়ামে শনিবারের লড়াইটা তাই শুধুমাত্র করিম বেঞ্চারিফার মোহনবাগান বনাম নৌশাদ মুসার এয়ার ইন্ডিয়ার নয়। ম্যাচটার গুরুত্ব বাগান সমর্থকদের কাছে অপরিসীম। ওডাফারা জিতলে চৈত্র শেষের বাগানে ফুরফুরে দখিনা বাতাস বইবে।
আইসিইউ-তে থাকা তেরো কোটির বাগান আপাতত রয়েছে জেনারেল বেডে। ১০ ম্যাচে শূন্য থেকে গঙ্গাপারের ক্লাবের পয়েন্ট এখন ২০ ম্যাচে ১৯। দু’ম্যাচ কম খেলে বিমানকর্মীদের সমান পয়েন্ট নিয়ে লিগ তালিকায় বারো নম্বরে রয়েছে করিমের বাগান। গোল পার্থক্যের কারণে এয়ার ইন্ডিয়া পিছনে। তেরো নম্বরে। মুম্বইয়ের দলকে শনিবার হারাতে পারলেই দু’ম্যাচ কম খেলে শিলং লাজংকে ছুঁয়ে ফেলবে বাগান। ‘জেনারেল বেড’ থেকে বেরিয়ে আসবে অবনমন-মুক্ত আকাশের নীচে।
অবনমনের আওতায় থাকা দলকে খাদের কিনারা থেকে টেনে বার করার রেকর্ডটাই এই মুহূর্তে তাতাচ্ছে করিমের দলকে। এর আগে সিঙ্গাপুরে ক্লাব উডল্যান্ডস ওয়েলিংটনের হালও একেবারে মোহনবাগানের মতোই ছিল। ১০ ম্যাচে শূন্য পয়েন্ট নিয়ে ধুঁকতে থাকা ক্লাবকে নতুন জীবন দিয়েছিলেন এই মরক্কান কোচই। আবার সালগাওকরের দায়িত্ব নিয়ে তাদের শুধু অবনমনের হাত থেকেই বাঁচাননি, সে বার আই লিগে ছয় নম্বরে শেষ করেছিল তারা। তবে মোহনবাগানের লড়াইটাকে ‘কঠিনতম চ্যালেঞ্জ’ বলছেন করিম। |
শুক্রবার মোহনবাগান প্র্যাক্টিসে ওডাফা-টোলগে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস |
এহেন সাফল্য থাকার পরও আশ্চর্যজনক ভাবে সাবধানী বাগান কোচ। শুক্রবার অনুশীলনের পর বলেও দিলেন, “এয়ার ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে জেতা মানেই নিশ্চিন্ত হওয়ার কিছু নেই। অন্যরা বাকি ম্যাচ জিতে গেলে আমরা আবার সমস্যায় পড়তে পারি।” কোচ সাবধানী হলেও ফুটবলাররা কিন্তু বেশ আত্মবিশ্বাসী। ওডাফা তো বলেই দিলেন, “এই ম্যাচটা জিততে পারলে আমরা অবনমনের ভয় থেকে মুক্তি পাব।”
বাগানের চার কোটির দুই স্ট্রাইকারওডাফা আর টোলগের মধ্যে একে অপরকে ছাপিয়ে যাওয়ার যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, সেটাই এই মুহূর্তে করিমের দলের সাফল্যের আসল ইউএসপি। এ কথা মোহন-কোচও স্বীকার করছেন। এ দিন অনুশীলনের পর বললেন, “ওরা দু’জনই ভাল ছন্দে রয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে দলের জন্য ভাল খবর।”
শুক্রবারের ‘বার্থ ডে বয়’ টোলগে ওজবের জন্মদিনের প্রতিজ্ঞা, “আরও গোল করে দলকে সাফল্য এনে দিতে চাই।” সতীর্থ ওডাফা তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলছেন, “টোলগের জন্মদিনে আমি ওর জন্য প্রার্থনা করব। এখন যে ভাবে ও গোল করে চলেছে, এ রকম আরও গোল করুক। এতে আমরাই লাভবান হব।”
নৌশাদ মুসার এয়ার ইন্ডিয়া এ দিন অনুশীলন করল কল্যাণীতে। আই লিগ কমিটির শর্তাবলী না মানায় পরের বছর তাদের ছিটকে যেতে হচ্ছে। কিন্তু সেটাই তাদের ফুটবলারদের এখন মোটিভেশন! কারণ পরের বছর নতুন দল পেতে হলে প্লেয়ারদের নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে। কলকাতায় অনেক বছর খেলে যাওয়া নৌশাদ এই ‘ওষুধ’ দিয়েই তাতাচ্ছেন তাঁর ফুটবলারদের। সেটা জানেন করিম।
সে জন্য জুনিয়রদের বিরুদ্ধে ৪-৩-৩ ফর্মেশনেই দল সাজানোর কথা ভাবছেন করিম। অর্থাৎ চূড়ান্ত আক্রমণাত্মক স্ট্র্যাটেজি। যথারীতি নাইজিরিয়ান-অস্ট্রেলীয় জুটিই এয়ার ইন্ডিয়া ম্যাচের আসল বাজি হবে মোহন-কোচের। সঙ্গত করবেন রহিম নবি। শেষ দু’টি ম্যাচে সাবিথের পারফরম্যান্স ভাল ছিল না। সে জন্য তাঁকে সম্ভবত প্রথম দলে রাখা হচ্ছে না। স্নেহাশিস, মণীশ মৈথানি ও ডেনসনকে নিয়ে মাঝমাঠ সাজানোর পরিকল্পনা মাথায় ঘুরছে করিমের। চোট থাকা সত্ত্বেও রক্ষণে ইচে খেলবেন। ইচে নিজেও বলছেন, “আমার খেলতে সমস্যা নেই।” ফর্মে থাকা নাইজিরিয়ান ডিফেন্ডারের সঙ্গে স্টপারে খেলার সম্ভাবনা রয়েছে আইবরের। দুই সাইড ব্যাক সম্ভবত নির্মল ছেত্রী ও বিশ্বজিৎ সাহা।
কিন্তু চূড়ান্ত আক্রমণাত্মক হলেই কি জিততে পারবে মোহনবাগান? প্রথম পর্বে ওডাফারা জিতলেও মুম্বইয়ের অফিস দলটা কিন্তু বরাবরই গাঁট বাগানের। |
শনিবারে আই লিগ ফুটবল
মোহনবাগান: এয়ার ইন্ডিয়া (কল্যাণী ৩-৩০)। |