|
|
|
|
বহাল শিখ জঙ্গি ভুল্লারের ফাঁসি |
দেরির জন্য মৃত্যুদণ্ড খারিজ নয়: সুপ্রিম কোর্ট |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
দেবেন্দ্রপাল সিংহ ভুল্লারের মৃত্যুদণ্ড মকুবের আর্জি খারিজ করল সুপ্রিম কোর্ট। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে দেরি হওয়াকে এই শিখ জঙ্গির শাস্তি কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড করার পক্ষে উপযুক্ত কারণ হিসেবে মানছে না শীর্ষ আদালত। ভুল্লারের মানসিক অসুস্থতার আর্জিকেও এই ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিতে রাজি হয়নি বিচারপতি জি এস সিঙ্ঘভি এবং এস জে মুখোপাধ্যায়ের বেঞ্চ।
বর্তমানে দেশে মৃত্যুদণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত আসামির সংখ্যা ১৭। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করায় দেরিকে কারণ দেখিয়ে তাদের অনেকে সুপ্রিম কোর্টে শাস্তি কমানোর আর্জি জানিয়েছে। আইনজীবীদের ধারণা, ওই ১৭ জনের ক্ষেত্রেই ভুল্লার রায়ের প্রভাব পড়তে পারে।
খলিস্তান লিবারেশন ফোর্সের জঙ্গি ভুল্লার ১৯৯৩-এর সেপ্টেম্বরে দিল্লিতে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল। তাতে ৯ জন নিহত হন। আহত হন যুব কংগ্রেসের তৎকালীন সভাপতি এম এস বিট্টা-সহ ২৫ জন। ১৯৯৪ সালে জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয় চায় ভুল্লার। কিন্তু সে আর্জি খারিজ করে পরের বছর তাকে ভারতে প্রত্যর্পণ করে জার্মানি। ২০০১ সালে ভুল্লারকে মৃত্যুদণ্ড দেয় দায়রা আদালত। ২০০২ সালের রায়ে তা বহাল রাখে সুপ্রিম কোর্ট। সেই রায় পুনর্বিবেচনার দু’টি আবেদনও খারিজ হয় শীর্ষ আদালতে।
রাষ্ট্রপতির কাছে ভুল্লার ক্ষমাভিক্ষার আর্জি জানায় ২০০৩-এর ১৪ জানুয়ারি। সেই আর্জি খারিজের সিদ্ধান্ত নিতে আট বছর লাগিয়েছিল রাষ্ট্রপতি ভবন। আজমল আমির কসাব ও পরে আফজল গুরুর ফাঁসি কার্যকর করার পর দেশে নানা মহলে প্রশ্ন ওঠে, জীবন-মৃত্যুর ফয়সালায় অত্যধিক দেরি কতটা গ্রহণযোগ্য। ফাঁসির অপেক্ষায় বছরের পর বছর জেলে কাটানোটাই যথেষ্ট শাস্তি বলেও প্রচার শুরু করেন অনেকে। দেরির কারণে মৃত্যুদণ্ড মকুবের আর্জি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজীব গাঁধী হত্যাকাণ্ডের তিন আসামি ও চন্দনদস্যু বীরাপ্পনের ৪ সহযোগী-সহ কয়েক জন আসামি। তাদের ক্ষমাভিক্ষার আর্জি খারিজ করেছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। প্রতিভা পাটিল রাষ্ট্রপতি থাকার সময় এ সব আর্জি ঝুলিয়ে রাখলেও দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রণববাবু। তাঁর আমলেই ফাঁসি হয়েছে কসাব ও আফজলের। রায়ের পর অল্প দিনের মধ্যেই ভুল্লারের ফাঁসি হতে পারে বলে ধারণা।
কিন্তু এই মামলাগুলির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ভাবাবেগ ও রাজনীতির প্রশ্নও। ভুল্লারের ফাঁসির আদেশ বহাল থাকায় রীতিমতো বিমর্ষ শিখ সম্প্রদায়ের নেতারা। আজ সুপ্রিম কোর্টে হাজির ছিলেন ভুল্লারের কানাডাপ্রবাসী স্ত্রী নবনীত কৌর। তাঁর বক্তব্য, “ভুল্লারের পক্ষের বিষয়গুলিকে আমলই দেয়নি কোর্ট।” রায়ের নিন্দা করেছেন শিখ ধর্মীয় সংগঠন শিরোমণি গুরুদ্বার প্রবন্ধক কমিটির সভাপতি অবতার সিংহ মক্কর। তাঁর অভিযোগ, এই রায়ে গণতন্ত্রের মৃত্যু হয়েছে। ভারতের আমলাতন্ত্র শিখ-বিরোধী। শিখদের জন্য এক আইন, অন্যদের জন্য আলাদা। তাই ভুল্লারের ফাঁসি হয়, আর ১৯৮৪ সালের শিখ-বিরোধী দাঙ্গার জন্য দায়ীরা ঘুরে বেড়ায়।
রায় নিয়ে তাই মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে রাজনৈতিক মহলে। ভুল্লার প্রসঙ্গ নিয়ে পঞ্জাবে একটি ভাবাবেগ রয়েছে। লোকসভা ভোটের মুখে এই আবেগের বিরুদ্ধে যেতে চায় না অনেক দলই। কংগ্রেস কৌশলগত ভাবে গোটা ঘটনা থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে সংযত প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। দলের মুখপাত্র রশিদ অলভি শুধু বলেছেন, “আইন আইনের পথেই চলবে। সর্বোচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছে, তাতে রাজনীতি টানা ঠিক হবে না।” পঞ্জাবের শাসক দল শিরোমণি অকালি দল সরাসরি ভুল্লার আবেগের স্রোতে ভাসতে চাইছে। দলের সাধারণ সম্পাদক পি এস চন্দমুজরা জানিয়েছেন, এই রায় তাঁরা আশা করেননি। এই মামলায় আইনি দিক না দেখে সম্প্রদায়ের ভাবাবেগ ও মানবিকতার কথাই মাথায় রাখা হবে বলে ভেবেছিলেন তাঁরা। এখনও তিনি মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা উচিত।
তবে রাজনীতির শিবির নির্বিশেষে আনেক শিখ নেতার আশঙ্কা, এই রায় পঞ্জাবে ফের অশান্তি ডেকে আনতে পারে। আফজলের ফাঁসির পরে ন্যাশনাল কনফারেন্স ও কংগ্রেসের মধ্যে অল্পবিস্তর চাপানউতোর হলেও একযোগেই কাশ্মীরে অশান্তি সামাল দিয়েছে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারকে। কিন্তু শরিক বিজেপি-কে কিন্তু ভুল্লার প্রশ্নে পাশে পাচ্ছে না অকালি দল। বিজেপি-র নতুন মুখপাত্র আজ সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়ে দিয়েছেন, “অকালির সঙ্গে আমরা একমত নই। বিজেপি মনে করে, সন্ত্রাসবাদীদের কোনও ভাবে প্রশ্রয় দেওয়া যায় না।”
তামিলনাড়ুতেও কম স্পর্শকাতর নয় বিষয়টি। রাজীব গাঁধীর খুনিদের প্রাণরক্ষার জন্য বিধানসভায় সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাব পাশ হয়েছিল এ রাজ্যে। আজকের রায় ওই খুনিদের ক্ষেত্রে কী প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে তামিলনাড়ুর বিভিন্ন মহলে ইতিমধ্যেই চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে।
ভারতে পরপর ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় মানবাধিকার সংগঠনগুলি সরব হয়ে উঠেছে এ নিয়ে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এ দিনই ভুল্লারের ফাঁসি রদের আবেদন জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির কাছে। |
|
|
|
|
|