প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর থেকে ছাত্রেরা গেটের বাইরে থাকা তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)-এর মিছিলে ঢিল ছুড়েছিলেন তৃণমূল নেতাদের এই তত্ত্ব আদালত শুক্রবার খারিজ করে দিল। ঢিল ছোড়ায় অভিযুক্ত দুই ছাত্রের জামিন মঞ্জুর করলেন বিচারক।
তৃণমূলের তরফে তথাগত সাহা ও চিনু হাজরা বৃহস্পতিবার জোড়াসাঁকো থানায় দুই ছাত্র (এক জন প্রেসিডেন্সিতে পড়েন, অন্য জন প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী) দেবর্ষি চক্রবর্তী ও ছন্দক চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেছিলেন।
অভিযোগের বক্তব্য: দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের হেনস্থার প্রতিবাদে টিএমসিপি বুধবার প্রতিবাদ-মিছিল বার করেছিল। অভিযোগের বয়ান মোতাবেক, মিছিলটি প্রেসিডেন্সির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর থেকে ঢিল এসে পড়ে, তাতে এক জনের মাথা ফেটে যায়।
এবং এই সূত্রে দেবর্ষি-ছন্দকের নামে ঢিল ছোড়া ও অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ আনেন তথাগতবাবুরা।
দেবর্ষি প্রেসিডেন্সিতে ইতিহাসের স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। আর প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী ছন্দক বর্তমানে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিল্ম স্টাডিজের স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় বর্ষে। দু’জনেই ছাত্র রাজনীতিতে (ইন্ডিপেন্ডেন্ট কলসলিডেশন) যুক্ত, বুধবার ঘটনার সময়ে দু’জনেই প্রেসিডেন্সি চত্বরে হাজির ছিলেন। |
জামিন পেয়ে বেরোচ্ছেন দেবর্ষি (ডান দিকে) ও ছন্দক। —নিজস্ব চিত্র |
অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তাঁদের পাল্টা দাবি: বাইরে থেকে একতরফা হামলা হয়েছে, প্রেসিডেন্সির ভিতর থেকে কোনও প্ররোচনাই ছিল না। “বরং দরজা ভেঙে ওরাই আমাদের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে।” বলেন দেবর্ষি।
তথাগতবাবুর অভিযোগের ভিত্তিতে জোড়াসাঁকো থানা মামলা শুরু করেছে। এ দিন দেবর্ষি ও ছন্দক কলকাতার ব্যাঙ্কশাল কোর্টে আত্মসমর্পণ করেন। তাঁদের তরফে আগাম জামিনের আবেদন পেশ করা হয়। সওয়ালে দুই ছাত্রের কৌঁসুলি শিবজ্যোতি মিত্র বলেন, “আমার মক্কেলরা নিজেরাই আক্রান্ত। যাঁরা মার খেয়েছেন বলে অভিযোগ করলেন, পুলিশ তাঁদের কোনও ডাক্তারি পরীক্ষা করাল না! উল্টে আমার মক্কেলদের বিরুদ্ধে মামলা হল!”
জামিনের বিরোধিতা করে সরকারি আইনজীবী কৃষ্ণচন্দ্র দাস বলেন, “কে আক্রান্ত হয়েছেন, কে হননি, কিংবা কে বা কারা প্ররোচিত করেছেন মূল মামলার বিচারের সময়েই তার শুনানি হবে।” দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারক সুব্রত চট্টোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, পুলিশ অভিযোগের সমর্থনে কোনও তথ্য-প্রমাণ পেশ করতে পারেনি। তাই দুই অভিযুক্তের (দেবর্ষি ও ছন্দক) জামিন মঞ্জুর হল।
এ দিকে দুই ছাত্রের বিরুদ্ধে শাসকদলের তরফে ‘মিথ্যে অভিযোগ’ দায়ের করা হয়েছে বলে এ দিন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন প্রেসিডেন্সির এক ছাত্র। এ প্রসঙ্গে রাজ্যপাল বলেছেন, “মিথ্যে অভিযোগ সব সময়েই মিথ্যে। মিথ্যে অভিযোগকে কখনও গুরুত্ব দিতে নেই। দেশের রাজনীতি ক্রমশই স্থূল হয়ে পড়েছে। প্রশাসনকে দেখতে হবে, এমন যেন আর না-ঘটে।”
তৃণমূল এখন কী বলছে?
তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য এখনও নিজেদের বক্তব্যে অটল। দলের মহাসচিব তথা শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন বলেন, “বুধবার ওখানে (কলেজ স্ট্রিটে) দিল্লির ঘটনার প্রতিবাদে মিছিল ছিল। তৃণমূলের সব শাখা সংগঠনের লোকজন সেখানে ছিলেন। তারা দেখেছেন, প্রেসিডেন্সির ভিতর থেকে ঢিল পড়েছে।”
অন্য দিকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের মন্তব্য, “যারা পাপ করেছে, তারাই নিজেদের অপরাধ ঢাকতে আক্রান্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে! আসলে পুলিশকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে শাসকদল। প্রেসিডেন্সির মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ঐতিহ্য সম্পর্কে
ওই হামলাকারীদের কোনও ধারণাই নেই।” |