বোলানের গান পোড়ো বোলানে আজও নাচে খুলি
মুখে লাল কালো রং। আলখাল্লার মতো পোশাক। হাতে ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাণ্ডব নৃত্য করতে করতে চলেছেন এক দল মানুষ। সঙ্গে রয়েছে মড়ার খুলি।
প্রতি বছর গাজনের সময় কাটোয়ার বিভিন্ন গ্রামের শিব মন্দিরে এবং কেতুগ্রামের সীতাহাটি, বারান্দা, গঙ্গাটিকুড়ি, শিবলুন, পূর্বস্থলীর মেড়তলা, বর্ধমানের কুড়মুন গ্রামে এই দৃশ্য দেখা যায়। এই তাণ্ডবনৃত্যই গ্রাম বাংলায় ‘পোড়ো বোলান’ নামে পরিচিত। এ ছাড়াও বিভিন্ন পাল্লা গান গেয়ে বেড়ায় একদল মানুষ। তাঁদের বলা হয় ‘দাঁড় বোলান।’ দাঁড় বোলানের গানে পৌরাণিক বা সাম্প্রতিক নানা কাহিনী তুলে ধরা হয়। এ বছর এই বোলান ঐতিহ্যের ব্যতিক্রম ঘটেনি ঠিকই, তবে দলের সংখ্যা বেশ কিছুটা কমে গিয়েছে।

চলছে নৃত্য। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।
লোকসংস্কৃতি দফতর সূত্রে জানা যায়, ৩৫০-৩৭৫ বছর আগে ‘বোলান’ শুরু হয় রাঢ় বাংলায়। বর্ধমানের মহারাজা কীর্তিচাঁদের সময় এই বোলানের রমরমা শুরু হয়েছিল। আগে বোলান মুখে মুখে গাওয়া হত। ১৮৫০ সালের পর খাতায় লেখা শুরু হয়। লোকসংস্কৃতির গবেষকরা জানিয়েছেন, সাধারণত চৈত্র মাসের শেষে শিব গাজন উপলক্ষে শ্রমজীবী মানুষ যে বিনোদনমূলক সঙ্গীত অভিব্যক্তিকে বেছে নেন, সেটাই বোলান। এর দুই রূপ-পোড়ো বোলান ও দাঁড় বোলান। তাঁরা জানান, বহু বছর ধরে চলে আসা এই লোকসঙ্গীতের রমরমার আর নেই। তবে এখনও অস্তিত্ব পুরোপুরি মুছে যায়নি। কাটোয়ার লোকসংস্কৃতি গবেষক তুষার পণ্ডিতও বলেন, “ফি বছর যে ভাবে বোলান দলের সংখ্যা কমছে, তাতে এর অস্তিত্ব বেশি দিন টিকে থাকবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।”
পোড়ো বোলানের পটভূমি ও পরিবেশ মূলত তান্ত্রিক। বিচিত্র বেশ, চিত্রিত মুখ, মুখোশ ও নরমুণ্ড নিয়ে চলে এই নৃত্য। প্রথমে আসরের মাঝে শব বা নরমুণ্ড নিয়ে নাচ হয়। পরে হাতে ত্রিশূল বা তলোয়ার নিয়ে বিভিন্ন দলের লোকেরা শকুনের মত শিকারের চার দিকে বৃত্তাকারে ঘুরে ঘুরে ঢাকের তালে তালে নাচ করেন। আর এই সব দলের নেতারা মাথার খুলি পাহারা দিয়ে বসে থাকেন। আর গান গেয়ে ‘শকুনরূপী’ মানুষের কাছ থেকে খুলিকে রক্ষা করার চেষ্টা করেন। শেষে খুলি নিয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারি করেন। একদল জেতার পর পালা শেষ হয়।
দাঁড় বোলান এর থেকে অনেকটাই আলাদা। সাধারণ পরিবেশে এই বোলান গাওয়া হয়। তিন-চার জন নিয়ে দল গড়া হয়। একজন পুরুষ মহিলা সেজে থাকেন। এই দলের নেতারা পালাকার দিয়ে গান লিখিয়ে আনেন। পৌরাণিক ও সামাজিক নানা বিষয় নিয়ে গান গাওয়া হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দাঁড় বোলানের এক দলপতি বলেন, “রাজনৈতিক পরিবেশের কারণেই এ বছর সাম্প্রতিক ঘটনার পালা নিতে অস্বীকার করেছি।” পোড়ো বোলানের দলের নেতারাও এই আঙ্গিক পরিবেশনে এখন খুব একটা স্বচ্ছন্দ নন। এমনই এক দলের নেতা সুশান্ত থান্দার বলেন, ‘‘পুলিশের অত্যাচারের জন্যই আমার মরার খুলি পাচ্ছি না। অস্ত্রশস্ত্র নিয়েও প্রকাশ্যে ঘুরতে পারছি না।” বর্ধমান জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “অভিযোগ থাকে না বলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থাও নিতে পারি না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.