ভাবমূর্তির চিন্তায় স্বাস্থ্য-পর্যটনে দ্বিধা রাজ্যের
ছরের পর বছর যে সব হাসপাতাল রোগীশূন্য অবস্থায় পড়ে থাকে, সেগুলিকে স্বাস্থ্য-পর্যটনের কাজে লাগানোর প্রস্তাব দিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিযুক্ত বিশেষজ্ঞ কমিটি। প্রথম দফায় দিঘা এবং কার্শিয়াংয়ের যক্ষ্মা হাসপাতালকে বেছে নেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছেন কমিটির সদস্যরা। কিন্তু এই প্রস্তাবকে ঘিরে ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য দফতরে বিতর্ক দানা বেঁধেছে।
মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিযুক্ত ওই মাল্টি ডিসিপ্লিনারি বিশেষজ্ঞ কমিটির বক্তব্য, এমন বেশ কিছু হাসপাতাল রয়েছে, যেখানে রোগী হয় না। অথচ পরিকাঠামো বজায় রাখতে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ হয়। কিছু ডাক্তার, নার্স এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মীকেও সেখানে রাখতে হয়। এই ধরনের অপচয় কী ভাবে এড়ানো যায়, তা খতিয়ে দেখতে রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতাল পরিদর্শন করেছিল কমিটি। তাদেরই প্রস্তাব, হাসপাতাল যদি চালানো না-ই যায়, তা হলে সেটা অন্য কাজে ব্যবহার করাই শ্রেয়। সেই লক্ষ্যে প্রথম বিকল্প হিসেবেই এসেছে স্বাস্থ্য-পর্যটনের কথা।
সেটা কী রকম? বিশেষজ্ঞ কমিটি জানিয়েছে, রেলের ধাঁচে এই কাজ করা যেতে পারে। কমিটির এক সদস্য বলেন, “রেল যেমন হোটেলও চালায়, সেই ভাবেই স্বাস্থ্য দফতর অতিথি নিবাস বা ওই জাতীয় কিছু গড়তে পারে। সাধারণের জন্য তা খুলে দিতে আপত্তি থাকলে স্বাস্থ্য দফতরের নিজস্ব অনুষ্ঠানের জন্য তা ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে কিছু আয়ও হবে।” অন্য এক সদস্যের প্রস্তাব, “ইদানীং অন্য রাজ্য এমনকী বিদেশ থেকেও অনেকে পশ্চিমবঙ্গে চিকিৎসা করাতে আসছেন। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসাপর্ব মিটলে আশপাশে বেড়ানোরও ব্যবস্থা করা যায়। দিঘা বা কার্শিয়াংয়ের অতিথি নিবাস এই ধরনের উদ্দেশ্যেও কাজে লাগানো যায়।”
কমিটির চেয়ারম্যান সুব্রত মৈত্রর কথায়, “দিঘা হাসপাতাল তো পুরো ধু-ধু করছে। অত বড় চত্বর। কিন্তু বেশির ভাগটাই কাজে লাগে না। কার্শিয়াংয়ের টিবি স্যানিটোরিয়ামেরও এক হাল। অত সুন্দর জায়গা। কিন্তু বেশির ভাগটাই খালি পড়ে থাকে। প্রথম পর্যায়ে এই দু’টি হাসপাতালকে বেছে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছি।”
স্বাস্থ্যকর্তাদের একটা বড় অংশই এই প্রস্তাবের বিরোধী। মূলত তাঁদের বিরোধিতার কারণে মুখ্যমন্ত্রী নিজেও এ নিয়ে দ্বিধায় রয়েছেন বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর। এক শীর্ষ কর্তার কথায়, “একেই স্বাস্থ্য দফতরের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। তার উপরে হাসপাতাল বন্ধ করতে শুরু করলে সমালোচনা হতে পারে। তাতে সরকারের ভাবমূর্তিও ধাক্কা খাবে। তার চেয়ে যেমন চলছে, তেমনই চলুক।”
অথচ শয্যার সদ্ব্যবহার করতে না পারাটাই সরকারি হাসপাতালের চেনা ছবি। কোথাও উপচে পড়া ভিড়, আবার কোথাও শয্যা ভরানোই বড় সমস্যা। এই অবস্থা বদলাতে বড় হাসপাতালগুলির সঙ্গে তথাকথিত ছোট হাসপাতালগুলিকে সংযুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বাম আমলেই। যেমন, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সঙ্গে লেডি ডাফরিন কিংবা আরজিকরের সঙ্গে ইন্দিরা মাতৃ সদন ইত্যাদি। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে এই প্রক্রিয়াকে আরও বিস্তৃত করা হয়। কিন্তু তাতেও যে কাজের কাজ কিছু হয়নি, খাস কলকাতার রামরিক দাস বা অবিনাশ দত্ত হাসপাতালের গড়ের মাঠের মতো চেহারায় তা স্পষ্ট। একই অবস্থা জেলাতেও। মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ভিড় হলেও জেলা বা গ্রামীণ হাসপাতালে বহু শয্যাই খালি পড়ে থাকে। স্বাস্থ্য-অর্থনীতিবিদদের মতে, এই ‘বেড অকুপেন্সি রেট’ বাড়াতে না পারার জন্যই স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ টাকার অপচয় হচ্ছে। জটমুক্তির পথ খুঁজতেই হাসপাতাল পরিদর্শন করে তাদের প্রস্তাব জানিয়েছে কমিটি। কিন্তু সেই প্রস্তাবের বাস্তবায়ন কত দূর হয়, সেটাই এখন প্রশ্ন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.