যখনই দোরগোড়ায় ভোট এসেছে, সেতু তৈরি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে হাজির হয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতানেত্রীরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেতু নিয়ে গ্রামবাসীদের অভিজ্ঞতা তিক্তই থেকে গিয়েছে। নেতাদের প্রতিশ্রুতি আর ইছামতীর উপরে সেতুর নির্মাণে ফারাক থেকেই গিয়েছে। রাজনৈতিক নেতাদের কথা রাখার দায়বদ্ধতা নিয়ে নানা প্রশ্ন এতদিন শুধু শুনেই এসেছেন, কিন্তু তা এ ভাবে নিজেদের সমস্যা দিয়ে বুঝতে হবে এতটা ভাবেননি বসিরহাটের স্বরূপনগর থানার তরণীপুর ও গোপালপুরের মানুষ। বিশেষত দীর্ঘ সময়ের পর রাজ্যে পালাবদলের পর নতুন সরকার এলেও।
ইছামতী নদীর দুই পারে অবস্থান তরণীপুর ও গোপালপুরের। ইছামতী এখানে খুব বেশি চওড়া না হলেও পারাপার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ভুগে চলেছেন দুই পারের মানুষ। নদী পারাপারের একমাত্র উপায় নৌকা। স্থানীয় শ্রীনাথপুর, গোপালপুর, বালকি, পোলতা, গুনরাজপুর, তরণীপুর, গোবরা-সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার কৃষক তাদের ফসল নিয়ে প্রতিদিন ওই পথ দিয়েই হাটে-বাজারে যাতায়াত করতে হয়। একই পথে নিত্য স্কুলে যেতে হয় কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রীকে। পারাপারের সমস্যার জন্য তরণীপুর ও গোপালপুরের মধ্যে ইছামতীর উপরে সেতু চেয়েছিলেন এলাকার বাসিন্দারা।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ভোট এলে নিজেদের দাবি যতবারই তাঁরা রাজনৈতিক নেতাদের জানিয়েছেন ততবারই মিলেছে প্রতিশ্রুতি। রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদলের পরে তাঁরা ভেবেছিলেন এ বার বোধহয় তাঁদের দাবি মিটবে। কিন্তু সেই আশা পূরণ হয়নি। |
প্রশাসনের এ হেন আচরণে ক্ষুব্ধ এলাকার মানুষ মাস কয়েক আগে নিজেরাই সেতু তৈরির জন্য কমিটি গড়ে আন্দোলন শুরু করেন। তাঁদের অভিযোগ, সেতুর জন্য প্রশাসনের কোনও গা নেই। আসলে এক শ্রেণির সুবিধাবাদী অসাধু রাজনৈতিক নেতার মদতে ফেরিঘাটের ইজারার টাকা যাতে বন্ধ না হয়ে যায় সেই কারণেই সেতু তৈরিতে নজর দেওয়া হচ্ছে না।
বৃহস্পতিবার সকালে কমিটির পক্ষ থেকে গ্রামবাসীরা তরণীপুর ফেরিঘাটের কাছে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। বিক্ষোভের জেরে দু’পারেই বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় পারাপার। বিক্ষোভকারীদের ভয়ে ফেরিঘাটের ইজারা ব্যবসায় যুক্ত কর্মীরা ঘাট ছেড়ে চলে যান। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন স্বরূপনগের বিডিও অরুণাভ পাল, থানার ওসি। শেষ পর্যৗন্ত পুলিশ ও প্রশাসনের প্রতিশ্রুতিতে অবরোধ উঠে গেলেও গ্রামবাসীরা নদীর উপরে বাঁশ বেঁধে সেতু তৈরির কাজ শুরু করে দেন। পুলিশ-প্রশাসনের সামনেই দড়ি, কাটারি, হাতুড়ি নিয়ে কাজে নেমে পড়েন গ্রামবাসীরা।
বনগাঁ দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক সুরজিত্ বিশ্বাস ও স্বরূপনগর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নারায়ণ গোস্বামী বলেন, “দ্রুত সেতু তৈরি করে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’’
বসিরহাটের মহকুমাশাসক শ্যামল মণ্ডল বলেন, “সরকারি ভাবে ওই জায়গায় সেতু তৈরির অনুমোদন পাওয়া যায়নি। তবে গ্রামবাসীদের প্রয়োজনের কথা ভেবে যাতে ওখানে সেতু তৈরি হয় সে জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরগুলিকে জানানো হয়েছে।” |