|
|
|
|
নাইটদের দুঃস্বপ্ন |
বদলার খিদে মিটল না তিন বছরেও |
রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায় • বেঙ্গালুরু |
সাড়ে ছ’ফুটের শরীরটা দুলছে অল্প-অল্প। শীতল অহঙ্কারে ব্যাট আলগোছে তুলে দেখে নিচ্ছেন ফিল্ড প্লেসিংটা কী রকম। বোলিং রান আপে দাঁড়ানো বস্তুটার দিকে ঠান্ডা একটা দৃষ্টি। রাগ, ঘৃণা, তাচ্ছিল্য তিন রকম অভিব্যক্তির সযত্ন মিশেল সেখানে।
পাগলের মতো চেঁচিয়ে চলেছে চিন্নাস্বামী। চট করে দেখলে, ভারতের ‘ওল্ড ট্র্যাফোর্ড’ মনে হবে। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স নয়, যেন ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড খেলছে! আগুনরঙা ফ্ল্যাগের আস্ফালন স্টেডিয়ামের আনাচ-কানাচে....মহানায়কের দিকে উন্মত্ত আবদার আসছে...‘গেইইইইল...উই ওয়ান্ট সিক্সার...উই ওয়ান্ট সিক্সার...।’ চিন্নাস্বামী রক্তবর্ণ। বিপক্ষ ফ্র্যাঞ্চাইজির রক্ত-প্রত্যাশী! |
|
গ্যালারির বায়নাক্কায় মাথাটা একটু ঝুঁকল। মাথার কালো ফেট্টিটা ঠিক করে নিলেন একবার। বোধহয় বলতে চাইলেন, ‘যা চাইছ, আসছে। একটু ধৈর্য ধরো’। রায়ান ম্যাকলারেন বলটা করে ফলো থ্রু শেষ করারও সময় পেলেন না। ঘাড় ধরে কড়া ‘পানিশমেন্ট’ কভার দিয়ে ঠিকানা সোজা ‘কেয়ার অব গ্যালারি’। পরেরটা লেগে পড়ল, আবার ছয়! এক ওভারে গিলতে হল বাইশ! গেইল-বাবার খপ্পরে পড়ে মুখচোখের এমন অবস্থা হল যে, সেঞ্চুরিয়নের শোয়েব আখতারকে মনে পড়বে মুহূর্তে। বালাজি এলেন স্লোয়ার-সমেত। এবং শেষ বলটা করে তাকালেনও না। কী হবে তাকিয়ে? স্টেডিয়ামের ব্যাকড্রপের সূচিভেদ্য অন্ধকার ফুঁড়ে সেটা বোধহয় ততক্ষণে অনিল কুম্বলে সার্কলে!
দু’টো মাত্র উদাহরণ। কিন্তু তাতে মঙ্গলবারের মর্মান্তিক কাহিনির সারমর্ম ধরা যায়। বাকি বলে লাভ নেই, কেকেআর সমর্থকদের নৈরাশ্য বাড়বে বই তো কমবে না। শাহরুখকেও যা টিটকিরি সহ্য করতে হচ্ছে! কিং খান রাজস্থানের মতো বেঙ্গালুরুতেও ছিলেন না। কিন্তু বাঁচলেন কোথায়? সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে মিনিটে-মিনিটে বিদ্রুপ ‘শাহরুখ, এর পর বাকি জীবনটা ঘুমোলে তুমি গেইলকেই দেখবে!’...‘জামাইকান ফেয়ারওয়েল বিখ্যাত গানটা তুমি শুনেছ? না শুনে থাকলে চিন্নাস্বামীতে দেখে নাও।’ গেইল-সংহার দেখতে দেখতে একটা সময় টিভি ক্যামেরাও ক্লান্ত। বলের পিছনে না ছুটে ছুটল নতুন ‘টপিক’-এর দিকে। কী সেটা? স্পেসস্যুটের আদলে পোশাকে দাঁড়িয়ে তিন আরসিবি সমর্থক। আর এমন অদ্ভুত পোশাকের মানে? সহজ তো গেইলের হাত থেকে বাঁচা! আকাশ থেকে বল সোজা ব্রহ্মতালুতে এসে পড়বে না, গ্যারান্টি আছে?দেখে আশ্চর্য লাগবে। ক্যারিবিয়ানদের নিয়ে আজ পর্যন্ত কম রোম্যান্সের জন্ম হয়নি। ভিভকে নিয়েও কম কিছু হয়েছে? কিন্তু কোনও ব্যাটসম্যানের নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে স্পেসস্যুট-সম পোশাক পরে সমর্থকের স্টেডিয়ামে আবির্ভাব হয়েছে, বলে শোনা যায়নি। ঠিক যেমন মঙ্গলবারের পর গেইলকে নিয়ে নতুন কোনও শব্দবন্ধ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। গেইল-স্টর্ম, গেইল-গিলোটিন সবই ক্লিশে এত দিনে। পুরনো টিমকে দেখলেই তাঁর প্রতিহিংসার গল্প লিখে লিখে। তিন-তিনটে বছর পেরিয়ে গেল। তবু কেকেআর নিয়ে গেইলের প্রতিহিংসার আগুন নিভল না। দিন-দিন আরও বাড়ছে। আর নতুন শব্দ খুঁজে লাভ নেই। বরং আজকের পর ঝড়, সাইক্লোন, টর্নেডো, হারিকেনডিকশনারি থেকে সব ক’টা তুলে দিয়ে স্রেফ ‘গেইল’ শব্দটাকেই বসিয়ে ফেলা ভাল! |
কেকেআর বনাম গেইল |
ইনিংস ৫ • রান ৩১৩ • গড় ১০৪.৩৩ • স্ট্রাইকরেট ১৬৮
• বাউন্ডারি ২৭ • ওভারবাউন্ডারি ২৪ |
২২ এপ্রিল ২০১১, ইডেন |
১০২ ন.আ. (৫৫ বল, ১০×৪, ৭×৬) |
১৪ মে ২০১১ চিন্নাস্বামী |
৩৮ (১২ বল, ৬×৪, ২×৬) |
১০ এপ্রিল ২০১২, চিন্নাস্বামী |
২ (৮ বল) |
২৮ এপ্রিল ২০১২, ইডেন |
৮৬ (৫৮ বল, ৭×৪, ৬×৬) |
১১ এপ্রিল ২০১৩, চিন্নাস্বামী |
৮৫ ন.আ. (৫০ বল, ৪×৪, ৯×৬) |
|
তবু শাসনের পুরো মেজাজকে ধরা যাবে? কেকেআর বোলিং নিয়ে গেইল এ দিন যা করলেন, সংক্ষেপে বলতে হয় ‘খুন’। মাত্র ৫০ বলে ৮৫, ন’টা ছক্কা! বেচারি গম্ভীর। বোলারদের কেউ দু’ওভারে পঁয়ত্রিশ দিচ্ছেন। কেউ তিন ওভারে তেত্রিশ। দেখে হতাশায় বারবার কাঁধ ঝাঁকাচ্ছেন নাইট অধিনায়ক। বিপর্যস্ত, বিধ্বস্ত একটা অবয়বের আদল। রাজস্থানের বিরুদ্ধে হারটা যদি টিমের বহিরঙ্গে প্রভাব ফেলে থাকে, এ দিনের গেইল-নির্যাতন হানা দিল সোজা মস্তিষ্কে। আর সেই হতাশা থেকে এমন স্ফুলিঙ্গ তৈরি হল যে, দিল্লির রঞ্জি টিমের সতীর্থ বিরাট কোহলির সঙ্গেও প্রায় ধাক্কাধাক্কি বাঁধিয়ে ফেললেন গম্ভীর!
ম্যাচের শুরু থেকেই গম্ভীরকে স্লেজিং করে যাচ্ছিলেন মোজেস এনরিকে। বিরাট সেটা দেখেও কিছু বললেনি। থামানওনি। পাল্টাটা দেওয়া হল বিরাট আউট হওয়ার পর। প্যাভিলিয়নের দিকে হাঁটছেন বিরাট, আচমকাই কেকেআর ক্রিকেটারদের ‘হাডল’ থেকে তাঁকে টার্গেট করে কিছু একটা ভেসে এল। চাইলে বিরাট অগ্রাহ্য করতে পারতেন। না করে তেড়ে এলেন। গম্ভীরও চুপ থাকলেন না। কড়াচোখে এগিয়ে যেতে তাঁকেও দেখা গেল। ভাগ্যিস, ভাটিয়া মাঝে এসে পড়েছিলেন বলে রক্ষে! নইলে আজ দুই দিল্লিবাসীকে নিয়ে তীব্র ঝামেলার আশঙ্কা ছিল।
ঠিক যেমন আশঙ্কা থাকছে আরও অনেক কিছু নিয়ে। যেমন ব্যাটিং, টিম স্ট্র্যাটেজি। লক্ষ্মীরতন শুক্ল আর লি-কে বসিয়ে গম্ভীর নামালেন সঙ্গওয়ান আর ম্যাকলারেনকে। দু’জন মিলে পাঁচ ওভারে দিলেন ৬৮! ব্যাটিংয়ের কথা যত কম বলা যায়, ততই ভাল। কালিসের উপর অতি-নির্ভরতা এ ভাবে চললে বর্তমানে নয়, ভবিষ্যতেও ভুগতে পারে কেকেআর। টিমের মিডল অর্ডার বিপন্ন। ইউসুফ পাঠানকে নিয়ে ময়দানে আবার একটা চুটকি বেরিয়েছে যে, ইউসুফ যে দিন যত রান করবেন, ঠিক তত টাকা ডিসকাউন্ট পাওয়া যাবে গড়িয়াহাটে চৈত্র সেলের বাজারে! মঙ্গলবার ইউসুফ যে গতিতে শুরু করে যা আউট হলেন, অমার্জনীয়। ওই সময় কেকেআর ৯৩-১, হাতে সাত ওভার। গম্ভীরের সঙ্গে ইউসুফ থেকে গেলে স্কোরটা ১৮০-১৯০-এর হাইওয়েতে পৌঁছে যায়। গেইলের পক্ষে যা তাড়া করাও একটু মুশকিলের হত। |
আমার লজ্জা হওয়া উচিত...
কী ভাবে
আমি মায়ের জন্মদিনের কথা বলতে ভুলে গেলাম...
হ্যাপি বার্থ ডে মম!!
এটা আমার
মায়ের জন্য!! ক্রিস তোমাকে রান্না করা
খাবারের মতো ভালবাসে!!
ক্রিস গেইল |
টুইটারে পোস্ট করলেন তাঁকে নিয়ে
করা পুতুলে চুমুর ছবি। |
|
ব্যতিক্রম শুধু অধিনায়ক নিজে। আইপিএল সিক্সে গম্ভীরকে দেখে মনে হচ্ছে, প্রত্যেকটা ম্যাচে নামছেন জাতীয় নির্বাচকদের মুখ মনে করে। দিল্লির বিরুদ্ধে ৪২-এর পর এ দিন ৪৬ বলে ৫৯। বাউন্ডারি, ওভার বাউন্ডারিগুলোকে দেখলে মনে হবে, ওগুলো শট নয় নির্বাচকদের গালে সশব্দ কষাঘাত। কিন্তু গম্ভীরের মুশকিল হচ্ছে, টিমের ব্যাটিং শুধুই তাঁর উপর দাঁড়িয়ে। তিনি চললে, টিমের ব্যাটিং চলবে। না চললে, নয়।
‘একা এবং কয়েক জনের’ কাহিনি এক-আধ দিন চলতে পারে। রোজ-রোজ অসম্ভব। আর বিপক্ষের টিম লিস্টে ক্রিস্টোফার হেনরি গেইল বলে কেউ থাকলে তো আরওই নয়!
|
বিস্তারিত স্কোর... |
|
|
|
|
|