তারাবাজি
ফ্যামিলি নম্বর ওয়ান
জীবনে জয়-পরাজয় তো থাকেই।
তবু কখনও দেখবেন না ‘নাইট’দের ভেঙে পড়তে।
জীবনের নানা ওঠা-পড়ায় মানুষের সব চেয়ে বড় বন্ধু, তার পরিবার। দিন রাত্রি সামনে থেকে নানা পরিস্থিতির সম্মুখীন হন।
কলকাতা নাইট রাইডার্সের পরিবারও তেমনই।
প্লেয়ার হোক কী মালিক বা কর্মকর্তা, কেকেআর-য়ে সবাই আমরা এক পরিবারের। শুধু কি তাই! আসলে কেকেআর-য়ের এক্সটেন্ডেড পরিবারের সদস্য শুধু প্লেয়ার বা মালিকরা নন। তাঁদের পরিবারও।
আইপিএল-য়ের প্রথম দুই সিজনে তো ম্যাচ জয়ের থেকে হারের সংখ্যাই বেশি ছিল কেকেআর-য়ের ঝুলিতে। তবু কখনও হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েননি কেকেআর-য়ের কোনও সদস্য।
কেকেআর-য়ের পরিবারের কথা বলতে গিয়ে প্রথমেই যাঁর কথা উল্লেখ করতে হয়, তিনি হলেন জুহি চাওলা। আমরা যারা সেই প্রথম দিন থেকে কেকেআর-য়ের সঙ্গে আছি, তারা জানি জুহি থাকা মানেই কী অসাধারণ মানসিক সাপোর্ট পাওয়া। ওঁর হাসি দেখলেই তো হতাশা কেটে যায়...
ঈশ্বরের উপর খুব বিশ্বাস জুহির। কলকাতায় ম্যাচ থাকলে নিয়ম করে কালীঘাটে পুজো দিতে যান। পুজোর প্রসাদ নিজের হাতে করে সবাইকে খাওয়ান। একদিনের জন্যও সেই রুটিনে ছেদ পড়েনি।

টিমকে চিয়ার করছেন সপরিবার কিং খান
আবার ম্যাচ জিতলে তেমনই বাচ্চাদের মতো উল্লসিত হন। সে আনন্দের বহিঃপ্রকাশ কল্পনা করা যাবে না। ওই খুশি, ওই বাচ্চাদের মতো ম্যাচ জেতা সেলিব্রেট করা দেখার জন্যই তো প্লেয়াররা জেতার জন্য আরও ইন্সপায়ার্ড হয়ে যান। অন্য টিম তো সেখানেই কয়েক গোল খেয়ে গেল।
জুহি এমনই। ম্যাচ শেষের পর সবার মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করেন। একেবারে মায়ের মতো। জুহির ঈশ্বরে বিশ্বাসের কথা তো আগেই বললাম। ম্যাচের মাঝে গ্যালারিতে ওঁর বসার জায়গায় চোখ পড়লেই দেখতাম, উত্তেজনার মুহূর্ত তৈরি হলেই চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করে ঠাকুরকে ডাকছেন।
তবে যাকে না ডাকলেও সব সময় টিমের সঙ্গে পাওয়া যায়, তার নাম শাহরুখ খান। ম্যাচ ছেড়ে দিন, প্র্যাকটিসেও দেখতে পাবেন ‘কিং খান’কে। কোথায় নেই? ওর অফুরান এনার্জির উদাহরণ পেয়েছিলাম সেই প্রথম দিন থেকেই।
দ্বিতীয় সিজনের একটা ঘটনা বলি। শাহরুখের তখন কাঁধে চোট। সেই অবস্থাতেও মাঝেমাঝে নেটে নেমে পড়ছেন আমাদের সঙ্গে। কেপ টাউনে নেট সেশন শেষের পরেও কয়েক জন প্র্যাকটিস করছিলেন। আমি বল করছিলাম। ক্রিস গেইল ব্যাট করছিল। শাহরুখ এসে কয়েকটা বল করল। ওর একটা ইনসুইংয়ে গেইলও পরাস্ত!
শাহরুখের এনার্জিটাই আলাদা। যত দূর মনে পড়ছে আইপিএল-য়ের চতুর্থ সিজন। শাহরুখ তখন জার্মানিতে। ছবির প্রচার বা ছবি রিলিজের জন্য গিয়েছে। এতটাই টিম অন্ত প্রাণ, সেখান থেকে দু’বার প্লেন পাল্টে হাজির হল মাঠে। ম্যাচের ঠিক আগে। কোনও জেট ল্যাগ নেই। কোনও ক্লান্তি নেই শরীরে। কী করে যে এত এনার্জি পায়, কে জানে? অসম্ভব এনার্জি। আর সেটাই ছড়িয়ে দেয় টিমের মধ্যে।

স্ত্রী এলিজাবেথ, ছেলে প্রেস্টনের সঙ্গে ব্রেট লি
গৌরী খানও দেখেছি একই রকম এনার্জেটিক। সব ম্যাচে হাজির থাকেন। শাহরুখের ছেলে-মেয়েরাও তেমনই। এমন নন-স্টপ এনার্জি মনে হয় পারিবারিক জিন থেকে এসেছে। গৌরী খান খেলার ব্যাপারে শাহরুখের মতো প্রবল উৎসাহী না হলেও, আরিয়ান কেকেআর-য়ের সব ব্যাপারেই আগ্রহী। বাবার সঙ্গে নেটেও বল করতে নেমে যায়।
তবে কেকেআর পরিবারের সব থেকে বিচ্ছু মেম্বার প্রেস্টন চার্লস। ব্রেট লির ছেলে। প্রেস্টন থাকলে প্লেয়াররা টেন্সড হওয়ার চান্সই পান না। ভীষণ অ্যাকটিভ। আর খুব দুরন্ত। সব সময় কিছু না কিছু করছে। আসলে এটাই কেকেআর-য়ের সম্পদ। পরিবারের সাপোর্ট। কত আপ্স অ্যান্ড ডাউন গিয়েছে কেকেআর-য়ে। কত হাই পয়েন্ট-লো পয়েন্ট এসেছে। তবু দলটা রক সলিড থেকেছে।
কর্মকর্তাদের পাশাপাশি প্লেয়ারদের পরিবারও থাকে সব সময় সাহায্য করার জন্য। ব্রেট লির পরিবারকে তো প্রায়ই দেখবেন ওর সঙ্গে থাকতে। গৌতম গম্ভীর, ব্রেন্ডন ম্যাকালামের বৌ, জাক কালিসের পার্টনারকে দেখা যায় সাপোর্ট করতে।
গম্ভীরের সাফল্যের ক্ষেত্রে ওর বৌ, নাতাশা একটা বড় ফ্যাক্টর। একটা সাইলেন্ট ফোর্স। সুনীল নারিনের গার্লফ্রেন্ড খুব সুইট। এই তো এ বার প্রথম ম্যাচের পর শুনলাম ওরা কলকাতার নিউ মার্কেটে কেনাকাটা করতে গিয়েছিল। একদিন মজা করে ওর গার্লফ্রেন্ড বলছিল, সুনীল এত কম কথা বলে যে মেক আপ করার জন্য ওকেই বেশির ভাগ সময় বকবক করতে হয়। রজত ভাটিয়ার বৌকেও মাঝে মাঝে কেকেআর ম্যাচে গ্যালারিতে দেখতে পাবেন। পায়ে প্লাস্টার নিয়েও নেহা হাজির ছিল ম্যাচ দেখতে।
শাহরুখের মতোই এনার্জিতে ভরপুর কেকেআর-য়ের আর এক মালিক জে মেটা। এতটা ইনভল্ভমেন্ট টিমের সঙ্গে ভাবতে পারবেন না। সব সময় টিমের পাশে।
এমনকী অফ সিজনেও প্রত্যেক প্লেয়ারকে ব্যক্তিগত ভাবে উৎসাহ দেন। যে কোনও সমস্যায় জে মেটার দরজা কেকেআর সদস্যদের জন্য সব সময় খোলা। একবার তো জে মুম্বইতে নিজের বাড়িতে কেকেআর-য়ের সবাইকে নিমন্ত্রণ করলেন। আমরা সবাই মিলে গিয়ে হইহই করে খেয়ে এলাম।
সবার কথাই যখন উঠল, তখন এক জনের কথা না বললে কেকেআর পরিবারের ছবিটা অসমাপ্ত থেকে যাবে। তিনি হলেন ভেঙ্কি মাইসোর। উনি কেকেআর-য়ের সিইও হয়ে আসার পরেই কিন্তু টিমের চরিত্রটা আমূল বদলে গিয়েছিল। উনি আসার পরে টিমের সাফল্য তো আর নতুন করে বলার নয়। ওঁর পরিবারও সব সময় মাঠে থাকে কেকেআর-কে চিয়ার করতে। ভেঙ্কি গোটা টিমের ক্ষেত্রে আসলে আঠার মতো। কেকেআর-য়ের আর এক নোঙর যেন জয় ভট্টাচার্য। ডাগ আউটের চমশা পরা সুদর্শন ওই বাঙালিকে সব সময় পাবেন দলের সুখে-দুঃখে।
স্নায়ুর যুদ্ধে প্রতি মুহূর্তে যে অসম্ভব চাপ তা উতরে গিয়ে আত্মস্থ হতে শেষ পর্যন্ত পরিবারই সবচেয়ে বড় সহায়। কেকেআরও তার ব্যতিক্রম নয়।

আইপিএল কন্যেরা
লভ অল: একসঙ্গে। সাইনা নেহওয়াল,
সানিয়া মির্জা। সঙ্গী ডায়ানা হেডেন। হায়দরাবাদে
মা শিল্পা: ছেলে ভিয়ানের সঙ্গে রাজস্থান রয়্যালসের
খেলা দেখছেন শিল্পা শেঠী। রয়েছেন বোন শমিতা শেঠীও



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.