|
|
|
|
|
বিনোদন |
চিরকালের চেনা শিবঠাকুর
আর মেলুহার কর্মবীর মহাদেব |
|
গাজনের মেলা থেকে বেস্ট সেলার বই। মহাদেবের জুড়ি নেই। লিখছেন তন্নিষ্ঠা সিংহ |
‘দ্য ওথ্ অফ বায়ুপুত্রাস্’ বইটি প্রকাশের সঙ্গেই অমিশ ত্রিপাঠি তার স্বতন্ত্র তিন খণ্ডে শিবকাহিনীর বৃত্তটা সম্পূর্ণ করলেন। যাঁরা এখনও এতে হাত ছোঁয়ানোর সুযোগ পাননি তাঁদের বলি, আমাদের চেনা শিবঠাকুরের জীবনের কল্পকথাই এর বিষয়। সেই মহাদেব যিনি দেবাদিদেব, দুষ্টের দমনকারী, নীলকণ্ঠ।
অমিশ ত্রিপাঠির এই বইয়ের প্রথম ধাপই হল ভারতীয় পুরাণের চেনা গল্প থেকে দেবতাকে বের করে নিয়ে এসে তার পুর্ননিমাণ করা, বা বলা ভাল, দেবতা কীভাবে দেবতা হলেন তা নিজের মতো করে দেখানো। এখানে তিনি আমাদের এমন এক নশ্বর মানুষে বিশ্বাস করান যিনি সাধারণ তিব্বতীয় আদিবাসী নেতা। ধর্মের দেখনদারি, বাহ্যিক আড়ম্বরের সঙ্গে বিজ্ঞান, যুক্তির আলাপ ঘটান অমিশ, যা শুধু মনকে নাড়া দেয় না বরং ভাবায়। বইয়ে সিন্ধু সভ্যতার কিছু টুকরো প্রসঙ্গ রয়েছে যা বুদ্ধিকে নাড়া দেয় এবং নিচু ক্লাসের কথাগুলো অহরহ মনে পড়তে থাকে।
|
অমিশ ত্রিপাঠি |
প্রত্যেক চরিত্রের মানবিক দিকগুলি ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক। প্রত্যেক তথ্য এবং তার বিস্তারিত খুঁটিনাটি-সহ ভারতীয় ইতিহাসের কালসরণীর পুননির্মাণ ঘটিয়েছেন। তিন খণ্ডের প্রথমটা, ‘দ্য ইমমর্টালস্ অফ মেলুহা’ আমাদের মনকে অতীতে নিয়ে গিয়ে পাঠকের সঙ্গে নায়কের পরিচয় ঘটায়। নায়ক বলতে সেই রক্ষাকর্তা, যাঁর কণ্ঠ নীল। বাঁকা হরফে লেখা কথোপকথনের অংশগুলো আমাদের প্রশ্ন হয়ে ওঠে। কেন তিনিই? কে তিনি? বিশ্বে তারই কণ্ঠ নীল হল কেন? কীভাবে হল? মেলুহাবাসী কী চায়? নীলকণ্ঠের প্রচলিত লোককাহিনী আর শিবের অসহায়তা অমিশ যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তা আমাদের নায়কের মননকে বুঝতে সাহায্য করে। এবং সবচেয়ে আশ্চর্যের যে শিব আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতোই। আর দেবাদিদেবের এই পার্থিবতা আমাদেরও প্রাত্যহিকের ক্ষণস্থায়ী বাধা পেরিয়ে উঠতে সাহায্য করে। যেমনটা মহাদেব নিজেই বলেছেন, একজন মানুষ তখনই মহাদেব হয়ে ওঠে যখন সে ভালর জন্য লড়াই করে। কেউ মহাদেব হয়ে জন্মায় না।
একজনের ভাগ্য তার কর্মের উপরে নির্ভর করে, লিঙ্গের উপর নয়।-অমিশ এই সমস্তটাই তুলে ঘরেছেন তাঁর লেখায়। আর যাঁরা প্রেমে পড়েছেন বা পড়তে চলেছেন এই বই নিশ্চিত তাঁদের মনে নাড়া দেবে। সূর্যবংশী রাজা দক্ষের মেয়ে সতীর জন্য শিবের প্রেম বহু প্রেমাতুর হৃদয়কে নাড়া দেবে এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই পাঠক তাদের সুখ-দুঃখের সঙ্গে নিজেদের এক করে ফেলবেন।
এছাড়া বর্তমান পৃথিবীতে যেখানে গরিবেরা আরও গরিব এবং ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে সেখানে মেলুহা আমাদের কোথাও একটা সাম্যের শিক্ষা দেয়। সকলের জন্য সমান সম্পদ, সমান আইনের কথা বলে। আধুনিক সমাজের জন্যও এই মেলুহীয় চিন্তাভাবনা দিনে দিনে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে।
আরেকটা ব্যাপার যা পাঠকের নজর কাড়বে তা হল- শিব একজন মর্ষকামী। একাধিকবার তিনি শত্রুকে যন্ত্রণা দেন, এমন যন্ত্রণা যা তাকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় এবং তিনি স্থির দাঁড়িয়ে সেই শত্রুকে মরতে দেখেন। প্রাত্যহিকের একঘেয়েমিতে আমরাও তো অনেকসময়েই রক্ত, খুন দেখে বিস্মিত হতে ভুলে যাই। |
|
শিবা ট্রিলজির তৃতীয় বইটি প্রকাশ পাওয়ার আগেই বিক্রি হয়ে গিয়েছিল চার লক্ষ কপি। |
দ্বিতীয় খণ্ড, ‘দ্য সিক্রেট অফ নাগাস’ প্রথম খণ্ডের সঙ্গে মানানসই এবং দ্রুততর। এই বই মাঝপথে নামিয়ে রাখাও তুলনায় কঠিন। যদিও এখানে ঘটনা কম কিন্তু মূল চরিত্রের নানা ভাবনার বন্যায় পাঠক ক্রমাগত বিস্মিত হতে থাকে। নায়কের যন্ত্রণার শেষ হয় এমন জায়গায় যেখানে তিনি জীবন খুঁজে পান, আর এটাই বইটার প্রেক্ষিত। আর নায়কের জীবনের এই প্রত্যেকটা গল্পের ভেতর দিয়ে যেতে যেতে আমাদের বিশ্বাস আরও শক্ত হয়, নায়কের উপর ভরসা এবং নিজের উপরেও ভরসা ফিরে আসে।
তিন খণ্ডের শেষ খণ্ড ‘দ্য ওথ্ অফ বায়ুপুত্রাস্’-এ রহস্যের শেষ সূত্রটা জোড়া লাগে। অমিশ তাঁর দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গী আর কাজের সাযুয্য বজায় রাখেন। এখানকার ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাগ কাটে এক নিষ্ঠুর হত্যাকারীর সঙ্গে সতীর যুদ্ধ। এই তিন খণ্ডের মেরুদণ্ড তৈরি করে প্রচুর চরিত্র-সূর্যবংশী থেকে চন্দ্রবংশী, মেলুহাবাসী থেকে বায়ুপুত্র, বাসুদের ইত্যাদি। কাহিনীটি যেন প্রতিমুহূর্তে পাঠকের চোখের সামনে ভেসে ওঠে। আমরা এই চরিত্রগুলোও পর্দাতেও দেখতে চাই শীঘ্রই।
কাহিনীতে কথোপকথনের কিছু দুর্বল অংশ আর কিছু বিশৃঙ্খলা থাকা সত্ত্বেও এই তিন খণ্ড সাহিত্যের থেকেও বেশি একটা দৃশ্য কাহিনী হয়ে ওঠে। শিবের মহিমাকে এখানে দেখানে হয়েছে মেলুহাবাসীর জীবনরস হিসেবে, আর শিবের প্রেম তীব্র আবেগ, তাঁর দৃঢ়তা অনমনীয়। তাঁর মধ্যে গিয়েই আমরা ঈশ্বরের সঙ্গে একাত্ম বোধ করি, তাঁর সঙ্গেই আমরা বিশ্বাস করি, খারাপের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই। বিশ্বাস করি, আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই ঈশ্বর আছেন।
হর হর মহাদেব! |
|
|
|
|
|