মেয়র পদত্যাগ করলে শিলিগুড়ি পুরসভায় জোট নিয়ে ফের আলোচনায় রাজি তৃণমূল। মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব সাংবাদিক বৈঠকে এ কথা জানিয়েছেন। তবে তাঁর ওই প্রস্তাব উড়িয়ে দিয়েছে জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিধায়ক শঙ্কর মালাকার। জোটের আলোচনার ইঙ্গিত ছাড়াও কংগ্রেস নিয়ন্ত্রিত সংখ্যালঘু পুরবোর্ডের উপর চাপ বাড়াতে ‘প্রশাসক নিয়োগ’-এর পথ খোলা রয়েছে বলে গৌতমবাবু জানান।
তিনি বলেন, “মেয়র পদত্যাগ করলে পুরসভা নিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনায় রাজি। এখনই প্রশাসক নিয়োগের চিন্তাভাবনা না থাকলেও সেই রাস্তা খোলা থাকছে।” পুরসভার এই পরিস্থিতির জন্য শঙ্করবাবু উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীকেই দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, “পুরসভা এবং বাসিন্দাদের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। মেয়র পদত্যাগ করার কোনও প্রশ্নই নেই। গৌতমবাবু ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। তিনি চাইলে আগেই পুরসভাকে সংকট মুক্ত করা যেত। জোটের শর্ত মেনে চেয়ারম্যান বা একটি মেয়র পারিষদ পদ ছেড়ে দিতে আমরা তাঁকে বারবার আলোচনার জন্য চিঠি দিলেও তিনি উত্তর দেওয়ার সৌজন্য দেখাননি।” প্রশাসক নিয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে শঙ্করবাবুর জবাব, “গৌতমবাবু মেয়র হতে না পেরে প্রশাসক নিয়োগ করে বকলমে ক্ষমতা ভোগ করতে চাইছেন। প্রশাসক নিয়োগ হলে আমরা পাল্টা আদালতের দ্বারস্থ হব।” পুর কমিশনার প্রভুদত্ত ডেভিড প্রধানের বিরুদ্ধেও তৃণমূলের হয়ে কাজ করার অভিযোগ তুলেছেন শঙ্করবাবু। প্রয়োজনে তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করবেন বলে জানিয়ে দেন। যদিও এ ব্যাপারে পুর কমিশনার কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ দিকে সোমবার, রাজ্যের পুর দফতরের যুগ্ম সচিবের তরফে একটি চিঠি পাঠিয়ে ‘বাজেট পাস’ নিয়ে বিতর্কের মধ্যে শিলিগুড়ি পুর কমিশনারকে জরুরি এবং বিশেষ কিছু কাজ চালানোর নির্দেশ দেওয়ায় এই পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু পুর পরিষেবা পাওয়ার ব্যাপারে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তাতে মেয়র-সহ তাঁর পারিষদদের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে বলেই অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে পুর কমিশনার, পুর সচিব এবং ফিনান্স অফিসারের ভূমিকা নিয়ে পুর কর্তৃপক্ষ চটেছেন। এ দিন পুর কমিশনারের আপ্ত সহায়ককে পূর্ত বিভাগের অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়েছেন মেয়র। পুর সচিব এবং ফিনান্স অফিসার পুরসভার তরফে গাড়ি ব্যবহারের যে সুবিধা পান তার ব্যবহারেও রাশ টেনেছেন তিনি। এতদিন তাঁরা ২৪ ঘণ্টা গাড়ি ব্যবহারের সুবিধা পেলেও এখন থেকে শুধু অফিসে যাতায়াতের জন্য তারা গাড়ি ব্যবহার করতে পারবেন। অফিসের কোনও কাজে কোথাও যেতে গাড়ি প্রয়োজন হলে অনুমতি নিয়ে তবেই যেতে হবে। মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, “কমিশনার আমাকে না জানিয়েই ওই কাজ করেছেন। এক্তিয়ার বহির্ভূত কাজ করলে মানা হবে না।”
গৌতমবাবু জানান, এই মুহূর্তে মেয়রের হাতে উন্নয়ন কাজের ক্ষমতা নেই। তিনি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর এবং শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরাসরি শহরের উন্নয়ন কাজ করবেন। কংগ্রেসের বক্তব্য তিনি যদি শহরের উন্নয়ন চান তা হলে আগেই সেই কাজ করলেন না কেন? মন্ত্রীর দাবি, ইতিমধ্যেই শহরের জল প্রকল্পে ৩১২ কোটি টাকা মঞ্জুর হতে চলেছে। ‘স্টেট প্ল্যানিং বোর্ড’ বিষয়টি দেখছে। তৃণমূলের মেয়র পারিষদেরা কী কী কাজ করেছেন শিলিগুড়িবাসীকে জানাতে প্রচার কর্মসূচি নেবেন। |