দাড়ি কাটবি না, মোদীকে বলেছিলেন গুরুজি
সাধু হতে চেয়েছিলেন। হয়ে গেলেন দাড়িওয়ালা রাজনীতিক। সবই গুরুজির কথায়!
নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী।
মঙ্গলবার বেলুড় মঠে গিয়ে নিজেই জানালেন, তিনি আজ যা, তার পিছনে রয়েছে ‘গুরুজি’র আশীর্বাদ। এমনকী তাঁর ট্রেডমার্ক যে দাড়ি, সেই দাড়ি ‘গুরুজি’র নির্দেশে রাখা। এ দিন সেই ‘গুরুজি’কে প্রণাম করেই তিনি বললেন, “একদিন আমি সন্ন্যাসী হতে এসেছিলাম। আপনি বলেছিলেন, সে পথ আমার জন্য নয়। তাই আজ আমি যা হয়েছি, কিংবা জীবনে আরও যা উন্নতি করব, তার সব কৃতিত্বই আপনার।”
‘গুরুজি’ মানে, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের পঞ্চদশ অধ্যক্ষ স্বামী আত্মস্থানন্দ। যাঁর সঙ্গে মোদীর সম্পর্ক ছাত্রজীবন থেকে।
ষাটের দশকে মোদী তখন নেহাতই মাধ্যমিক পাশ এক কিশোর। বেলুড় মঠে চলে এসেছিলেন, সন্ন্যাসী হবেন বলে। মিশনের তৎকালীন অধ্যক্ষ, স্বামী মাধবানন্দ ছেলেটিকে ফিরিয়ে দিয়ে বলেন, “বাড়ি গিয়ে আরও পড়াশোনা করো।” মোদী ফিরলেন, কিন্তু দমলেন না। ষাটের দশকের একেবারে শেষে কী সত্তরের দশকের গোড়ায় ফের গেলেন আলমোড়া রামকৃষ্ণ আশ্রমে। উদ্দেশ্য একই, সন্ন্যাসী হওয়া। দুই মাস থাকার পরে সেখান থেকেও মোদীকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এর পরে রাজকোট কলেজে পড়াশোনা করতে করতে মোদী রাজকোট আশ্রমে গেলেন সাধু হতে। কিন্তু এক মাস থাকার পরে সেখান থেকেও ফিরে আসতে হল। সেই সময় রাজকোট আশ্রমের অধ্যক্ষ ছিলেন স্বামী আত্মস্থানন্দ। তিনিই মোদীকে বলেছিলেন, “এই পথ তোর জন্য নয়। তুই অন্য ভাবে দেশের কাজ করবি।”
বেলুড় মঠের সংগ্রহশালা ঘুরে দেখলেন মোদী। —নিজস্ব চিত্র
বেলুড় মঠে প্রেসিডেন্ট মহারাজের ঘরে বসে প্রবীণ সন্ন্যাসীদের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এ দিন পুরনো দিনের সে সব গল্পই করছিলেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী। আত্মস্থানন্দের কথাতেই সন্ন্যাসী হওয়ার স্বপ্ন ত্যাগ করেন তিনি। কিন্তু কলেজপড়ুয়া যুবক রাজকোট আশ্রমে আসা-যাওয়া বন্ধ করেননি। নিয়মিত আসতেন, স্বামী আত্মস্থানন্দের সাহচর্যে বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতেন। সেই সব স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়েই বেরিয়ে পড়ল, স্বামী আত্মস্থানন্দই মোদীকে বলেছিলেন ‘তুই দাড়ি কাটবি না।’ ‘গুরুজির’ সেই কথা আজও পালন করে চলেছেন নরেন্দ্র।
এ দিন নরেন্দ্র তাঁর আরও একটি ইচ্ছার কথা জানিয়ে গিয়েছেন। আমদাবাদ টাউন হলের পাশে কিছুটা জমি-সহ একটি দোতলা বাড়ি রয়েছে। সেই বাড়িতে এক সময় সাত দিন কাটিয়ে ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। বাড়িটির মালিকানা রামকৃষ্ণ মিশনের হাতে তুলে দিতে চান তিনি। কিন্তু মোদীর অনুরোধ, মালিকানা হস্তান্তরের সময় স্বামী আত্মস্থানন্দ যদি গুজরাতে আসেন! স্বামী আত্মস্থানন্দের সচিব স্বামী বিমলাত্মানন্দ বলেন, “আমরা ওনাকে বলি, আপনি বেলুড়ে এসে মালিকানা হস্তান্তর করে দিয়ে যাবেন। কথাটা শুনে তিনি শুধু হেসেছেন।”
রামকৃষ্ণ মিশন সূত্রেই খবর, ২০০৫ সালের ১৮ এপ্রিল বডোদরার দিলরাম বাংলোর মালিকানা রামকৃষ্ণ মিশনের হাতে তুলে দেওয়ার সময়ও নরেন্দ্র এই শর্ত রেখেছিলেন তিনি তাঁর গুরুজির হাতেই মালিকানা তুলে দেবেন। সেই মতো তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বামী আত্মস্থানন্দের হাতেই বরোদা রামকৃষ্ণ মঠের মালিকানা তুলে দেওয়া হয়। এর পরে এই আট বছরে আর গুরুজির সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়নি নরেন্দ্রর।
বেলুড় মঠে আসার আগে এ দিন ভোরে দক্ষিণেশ্বরে মা ভবতারিণীর মন্দিরে যান মোদী। সেখানে পকেট থেকে পেন বের করে মা কালীর পায়ে স্পর্শ করিয়ে নেন মোদী। শ্রীরামকৃষ্ণের ঘর, মা সারদার ঘর, পঞ্চবটী, কুঠিবাড়ি ঘুরে দেখেন। যাওয়ার সময়ে বলেন, “অনেক দিন পরে মন্দিরে এসে খুব আনন্দ পেলাম।”
সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ তিনি পৌঁছন বেলুড় মঠে। সঙ্গে ছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। মিশনের তরফে তাঁদের স্বাগত জানান স্বামী শুভকরানন্দ-সহ অন্য সন্ন্যাসীরা। শ্রীরামকৃষ্ণ মন্দিরে অর্ঘ্য দিয়ে পুরনো মন্দির, স্বামীজির ঘর, স্বামী ব্রহ্মানন্দের মন্দির, মা সারদার মন্দির, স্বামীজির সমাধিস্থল ঘুরে মোদী সোজা চলে যান শ্রীরামকৃষ্ণ সংগ্রহশালায়। সেখানে শ্রীরামকৃষ্ণের হাতের লেখা, স্বামীজিকে লেখা জামশেদজি টাটা-র লেখা চিঠি-সহ শিকাগো শিল্প-কলা কেন্দ্রের প্রতিরূপ খুঁটিয়ে দেখেন। স্বামীজির ঘরে বসে প্রায় কুড়ি মিনিট ধ্যান করেন। এর পরে চলে যান স্বামী আত্মস্থানন্দের ঘরে।
যাওয়ার আগে বলে যান, “স্বামীজি চাইতেন, ভারতবর্ষ এক দিন পৃথিবীর মধ্যে আদর্শ আসন গ্রহণ করবে। আমার আশা, স্বামীজির সেই ইচ্ছা বাস্তবে রূপায়িত হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.