অধিকার প্রকল্পে দুর্নীতি ঘাটাল ব্লকেও
ফের ‘অধিকার’ প্রকল্পে প্রকাশ্যে এল শাসকদলের স্বজনপোষণের ছবি। লালগড়ের পর এ বার ঘাটালে।
সম্প্রতি ঘাটাল ব্লকে ‘অধিকার’ প্রকল্পের প্রথম কিস্তির ২৮ হাজার টাকা বিলি হয়েছে। ব্লকের ১২টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৬০ জন উপভোক্তা এই চেক পেয়েছেন। নিয়মানুযায়ী, বিপিএল তালিকায় নাম নেই এ রকম গরিব, গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষেরাই এই প্রকল্পে বাড়ি পাবেন। অথচ উপভোক্তাদের অনেকেরই জমি-বাড়ি, নিজস্ব ব্যবসা রয়েছে। শুধুমাত্র তৃণমূল ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদেই তাঁরা প্রাপক তালিকায় ঠাঁই পেয়েছেন।
যেমন, তৃণমূলের আজবনগর ১ অঞ্চল সভাপতি আনন্দ পালের নিজস্ব বাড়ি থাকা সত্ত্বেও প্রাপক সুলতানপুর পঞ্চায়েতের সোয়াই এলাকার তৃণমূলকর্মী জয়দেব মূলা পেশায় রাজমিস্ত্রি। ইট ও মাটি মিশিয়ে তৈরি নিজের বাড়ি রয়েছে তাঁর। দেওয়ানচক পঞ্চায়েতের হেমন্তপুরের দীপক সামন্ত আবার তৃণমূলের স্থানীয় নেতা। তাঁরও নিজস্ব পাকা বাড়ি ও পাঁচ বিঘারও বেশি জমি জমি রয়েছে। সুলতানপুরের কুরান গ্রামের শঙ্কর সাঁতরারও আছে মাটির বাড়ি, বিঘা তিনেক জমি। একই ভাবে ঘাটালের আজবনগর ২ পঞ্চায়েতের লেদাবড়তলার উত্তম বেরা, বরদা চৌকান সংলগ্ন হাজরাপাড়ার সুশান্ত পাল, পান্নার তৃণমূলের আজবনগর ১ অঞ্চল সভাপতি আনন্দ পাল, শ্যামসুন্দপুরের বাসন্তী চক্রবর্তী-সহ অনেকেই অন্যায্য ভাবে অধিকার প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন।
আনন্দ পালের সেই বাড়ি। নিজস্ব বাড়ি থাকা সত্ত্বেও
প্রাপক তালিকায় নাম আছে তাঁর। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
যিনি উপভোক্তার তালিকা তৈরি করেছেন, ঘাটালের সেই তৃণমূল বিধায়ক শঙ্কর দোলই অভিযোগ কার্যত মেনে নিয়েছেন। তবে তাঁর সাফাই, “তাড়াহুড়ো করে তালিকা করতে গিয়ে কিছু ভুলত্রুটি থেকে গিয়েছে। পরবর্তী সময়ে এমন হবে না।” আরও এক ধাপ এগিয়ে সংবাদমাধ্যমের ঘাড়ে যাবতীয় দায় চাপিয়েছেন শালবনির বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতো। তাঁর বক্তব্য, “সিপিএমের আমলে প্রতি ক্ষেত্রেই এ রকম ঘটনা ঘটত। কই, তখন তো খোঁজ রাখতেন না। এখন এত তালিকা তৈরি করতে গিয়ে কিছু ভুল হয়তো হয়েছে। তার জন্য এত লেখালিখির কী আছে?”
অধিকার প্রকল্পে শাসকদলের স্বজনপোষণের অভিযোগ ঘিরে ক’দিন আগেই শোরগোল পড়েছিল লালগড়ে। প্রতিবাদে ইস্তফা পর্যন্ত দিয়েছিলেন ব্লক যুব তৃণমূলের সভাপতি। ঘাটালেও এই স্বজনপোষণ ঘিরে তৃণমূলের অন্দরে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলের এক ব্লক-নেতার বক্তব্য, “বিধায়ক নিজে তাঁর অনুগত কয়েক জনকে নিয়ে তালিকা তৈরি করেছেন। সমস্তটাই আমরা দলের উচ্চ নেতৃত্বকে জানিয়েছি।” একই সঙ্গে তাঁর আশঙ্কা, “ব্যবস্থা না নিলে পঞ্চায়েতে এর প্রভাব পড়বে।”
অভিযোগ আছে আরও। অধিকার প্রকল্পের টাকা বেছে বেছে তৃণমূল বিধায়কদের দেওয়া হচ্ছে বলে সরব হয়েছে বিরোধীরা। চন্দ্রকোনার সিপিএম বিধায়ক ছায়া দোলই বলেন, “আমাকে প্রকল্পের টাকা দেওয়া হয়নি। অথচ, আমার এলাকায় বহু বুথে গরিব মানুষ বাস করছেন।” তৃণমূলের চন্দ্রকোনা ব্লক সভাপতি অমিতাভ কুশারীও মানছেন, “এখানেও গরিব মানুষকে প্রকল্পের সুবিধা দিলে ভাল হত।” তৃণমূল সূত্রের খবর, বিধায়কেরা প্রাপক তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে ব্লক স্তরের দলীয় নেতাদের সাহায্য নিয়েছেন। আর তাতেই বেড়েছে স্বজনপোষণের সম্ভাবনা। তৃণমূলের ঘাটাল ব্লকের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ মাঝি বলেন, “আমরা এলাকায় অঞ্চল সভাপতিদের দেওয়া নাম চূড়ান্ত তালিকায় তুলেছি। কিছু ভুলত্রুটি থেকে গিয়েছে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.