|
|
|
|
কাজিয়া কৃষি ও বিদ্যুৎ দফতরের |
মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস সার, সেচে বিদ্যুৎ অমিলই |
সুমন ঘোষ • মেদিনীপুর |
চৈত্র শেষের প্রবল তাপে জল মিলছে না সেচে। আর সেচের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণার পর পেরিয়ে গিয়েছে প্রায় ৬ মাস। ফলে চাষের ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সেচের ব্যবস্থা রয়েছে এমন জায়গাতেও নষ্ট হচ্ছে ধান। কারণ, অগভীর নলকূপ থাকলেও তাতে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। জলস্তর এতটাই নেমে গিয়েছে যে, ডিজেল দিয়ে পাম্প চালিয়ে সেচ দিতে গেলে খরচ পড়বে অনেক বেশি। এই পরিস্থিতিতে চাষিকেই সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে কতটা জমির ধান সেচ তিনি বাঁচাবেন। আর কতটা নষ্ট করবেন!
মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, সেচের সুবিধের জন্য চাষিদের বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার ব্যাপারে এককালীন ৮ হাজার টাকা ছাড় দেবেন। কৃষি দফতরের মাধ্যমে এই সংযোগ দেওয়ার কথা। ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় প্রথম ধাপে ২০৫০ জনকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা স্থির হয়েছিল। প্রশাসনিক পরিসংখ্যান বলছে, ১৪৭৯ জন চাষি জেলার ব্লকের কৃষি দফতরের সহ-অধিকর্তাদের কাছে আবেদনও করেছিলেন। যার মধ্যে ১৪১৯ জনকে সংযোগ দেওয়া যেতে পারে বলে ব্লক স্তরের কমিটি সুপারিশ করে। কিন্তু গত মার্চ মাস পর্যন্ত একজনকেও সংযোগ দেওয়া যায়নি। |
|
জলাভাবে নষ্ট হচ্ছে চাষ। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি মতো সংযোগ না পেয়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ, পথ অবরোধ করেছেন চাষিরা। সম্প্রতি বিনপুরের প্রশাসনিক সভায় গিয়ে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ চেয়ে আবেদনও জানান তাঁরা। এরপর কিছুটা নড়ে বসে প্রশাসন। টাকা না থাকায় যে এমন সমস্যা হচ্ছে তা কিন্তু নয়। কৃষি দফতর সূত্রে খবর, এই প্রকল্পের জন্য কৃষি দফতরের কাছে ১ কোটি ৬৪ লক্ষ টাকা রয়েছে। চলতি মাসে তড়িঘড়ি ৪২৮ জনকে সংযোগ দেওয়া যাবে বলে সিদ্ধান্ত হয় জেলা স্তরের বৈঠকে। কিন্তু এখনও সংযোগ দেওয়া হয়নি। কৃষি দফতর জানিয়েছে, ৪২৮টি আবেদনকারীকে সংযোগ দেওয়ার অনুমতি পাওয়ার পর বিদ্যুৎ দফতর জানায়, প্রতিটি ক্ষেত্রে সমীক্ষা করে দেখতে হবে সংযোগের জন্য কত খরচ হবে। এমনকি একটি ব্লকে ১০০ জনের সংযোগ দিতে হলে একটি চেকে টাকা দেওয়া যাবে না। প্রতিটি উপভোক্তার নামে আলাদা করে চেক দিতে হবে-এরকম নানা বাহানায় দেরি হচ্ছে। আর বিদ্যুৎ দফতর জানিয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে যে নিয়ম রয়েছে তার উল্টো পথে কিছুতেই তাঁরা যেতে পারেন না।
বিদ্যুৎ সংযোগ আবেদন জানিয়েছিলেন নয়াগ্রাম ব্লকের গোয়ালডিহার বাসিন্দা মনীষা দাস। তাঁর কথায়, “বিনপুরের সভায় গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকেই ট্রাক্টরের চাবি নিয়েছিলাম। এই সময়ই বিদ্যুৎ সংযোগের কথাও বলেছিলাম। সুফল মেলেনি।” মনীষাদেবীর স্বামী মেঘনাদ দাস বলেন, “৫ বিঘে জমিতে ধান চাষ করেছি। ডিজেল দিয়ে পাম্প চালিয়ে ৫ বিঘের ধান বাঁচাতে পারব না জেনেই এখন ৩ বিঘে জমির ধান নষ্ট করতে হচ্ছে।” পিংলার গোপীনাথপুর গ্রামের প্রশান্ত দাসও বিদ্যুৎ সংযোগ চেয়ে আবেদন জানিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, “সেচের অভাবে সকলেরই ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ সংযোগ থাকলে কাউকে ক্ষতির মুখে পড়তে হত না।” বোরো ধানের সময়ই বেশি সেচের প্রয়োজন হয়। সাধারণত, এই চাষ শুরু হয় জানুয়ারি মাস থেকে। এপ্রিল মাসে ধান উঠে যায়। কিন্তু গাছে শিস আসার সময়েই যদি জল না থাকে তাহলে কী লাভ।
কৃষি দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর মিহিরচন্দ্র রায় বলেন, “আমরা অনেক আগেই আবেদন সংগ্রহ করে বিদ্যুৎ দফতরে পাঠিয়েছিলাম। বিদ্যুৎ দফতরই দেরি করছে।” আর বিদ্যুৎ দফতরের জোনাল ম্যানেজার বিনয় সেন বলেন, “আবেদন আসার পর স্থানীয় ভাবে সমীক্ষা করতে দেখতে হয় যে সেখানে সংযোগ দেওয়ার পরিস্থিতি রয়েছে কিনা। সেই কাজ দ্রুত গতিতে করার চেষ্টা হচ্ছে।” তাহলে এখনও একজন আবেদনকারীও সংযোগ পাননি কেন? তার সদুত্তর মেলেনি কারও কাছেই। |
|
|
|
|
|