ডিকার মাস্টারস্ট্রোকে প্রায় নকআউটে ইস্টবেঙ্গল
ইস্টবেঙ্গল-২ (চিডি, লালরিন্দিকা)
তাম্পাইন্স রোভার্স-১ (সাইফুল)
ঠিক যেমন বলিউডের সিনেমায় হয়। বিপক্ষ ঘাড়ে চেপে বসেছে। ঘিরে ফেলেছে চার দিক দিয়ে। একদম শেষ দিকে নায়কের একটা ‘মাস্টারস্ট্রোক’। আর তাতেই কেল্লা ফতে।
লাল-হলুদ জার্সি গায়ে লালরিন্দিকা রালতের ফুটবল জীবনের চিত্রনাট্যও যে হুবহু সে রকমই। ফেড কাপ সেমিফাইনালে ১১১ মিনিটে গোল করে দলকে জিতিয়েছেন। আই লিগেও গ্যাংটকে ভাইচুংয়ের দলের বিরুদ্ধে ৮২ মিনিটে তাঁর এক মাত্র গোলেই এসেছিল তিন পয়েন্ট।
এ দিনও তার অন্যথা হল না। ম্যাচের একদম শেষ লগ্নে পাঁচ গোলে জেতা ম্যাচ একাধিক সুযোগ নষ্টের জন্য ১-১। সবে গজরগজর শুরু হয়েছে গ্যালারিতে। ঠিক তখনই ২২ গজের দূরপাল্লার শটে তাম্পাইন্স গোলকিপার সাসা দ্রাভেনকে হারিয়ে মর্গ্যানের দলকে জয় এনে দিলেন সেই লালরিন্দিকাই। সমর্থকদের আদরের ‘ডিকা’। মালয়েশিয়ার সেলাঙ্গরের বিরুদ্ধে ঠিক এ রকমই গোল করেছিলেন যুবভারতীতে। তাম্পাইন্সের বিরুদ্ধে অ্যাওয়ে ম্যাচেও গোল ছিল। আর মঙ্গলবার তাঁর গোলে জয়ের পর এএফসি কাপে গ্রুপ ‘এইচ’ থেকে চার ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে কার্যত শেষ ষোলোয় জায়গা করে নিল ইস্টবেঙ্গল। অঙ্কের হিসাবে নিজেদের অবস্থান মজবুত করতে আরও এক পয়েন্ট যদিও দরকার মেহতাব-সঞ্জুদের।
চিডির গোল। মঙ্গলবার যুবভারতীতে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
বারবার শেষ লগ্নে দলের জয়ে এ রকম নায়কোচিত ছাপ রাখার রহস্যটা কী? মিজোরামের ছেলে অবশ্য খেলা শেষে তা ভাঙেননি। বললেন, “কোচের নির্দেশ রয়েছে। কথা বলা যাবে না। তবে গোল করার জন্যই মাঠে নামি।”
দলের প্রতি যখন লালরিন্দিকাদের এই দায়িত্ববোধ তখন সুর কাটছে জার্সি বিভ্রাটে। এ দিন যখন খেলা শুরুর পাঁচ মিনিট পর দেখা গেল টানেল বেয়ে রিজার্ভ বেঞ্চের দিকে যাচ্ছেন ইস্টবেঙ্গল রক্ষণ এবং আক্রমণের দুই অস্ত্র ওপারা এবং চিডি। মুহূর্তে গ্যালারি-প্রেস বক্সে গুঞ্জন, “ড্রেসিংরুমে কিছু হয়েছে? ওরা বাইরে কেন?” পরে জানা গেল, লাল-হলুদ জার্সি পরে প্রথমে খেলার কথা ছিল চিডিদের। কিন্তু সোমবার ম্যানেজার্স মিটিংয়ে তা বদলে যায়। ঠিক হয় ইস্টবেঙ্গল সাদা জার্সি পরে খেলবে। কিন্তু সেই তথ্য জানানো হয়নি ফুটবলারদের। মেহতাবরা তাই মাঠে চলে এসেছিলেন লাল-হলুদ জার্সি নিয়েই। মর্গ্যানের দলের ফুটবলারদের একটা বড় অংশই বিধাননগরে থাকায় তাঁদের বাড়ি গিয়ে জার্সি নিয়ে আসেন ক্লাব কর্মীরা। কিন্তু চিডি, ওপারার ফ্ল্যাট স্টেডিয়াম থেকে দূরে হওয়ায় তাঁদের জার্সি আসে খেলা শুরুর পর। তাই চিডির বদলে মননদীপ এবং ওপারার বদলে রাজুকে নামিয়ে দেন মর্গ্যান। ম্যাচ শেষে সেই বিরক্তি গোপনও করেননি তিনি। বললেন, “এএফসি কাপের ম্যাচে এ রকম অপেশাদার চালচলন অভাবনীয়। সব পরিকল্পনা ভণ্ডুল হয়ে গেল।”
তবে মিনিট পনেরো যেতেই চোট পেলেন বরিসিচ। তাঁর জায়গায় কোচ নামিয়ে দিলেন চিডিকেই। যিনি নিজেই বলেন “আমি পকেটে গোল নিয়ে ঘুরি”, সেই চিডির পা থেকে আট মিনিট পরেই লাল-হলুদের প্রথম গোল। পেন-মেহতাবদের সামলাতে তখন ৪-১-৪-১ ছকে নামা তাম্পাইন্স নাজেহাল। লেফট ব্যাক সাইফুলের দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে আক্রমণের ঝড় তুলছিলেন সঞ্জুরা। কিন্তু করমর্দনের দূরত্বে দাঁড়িয়ে লালরিন্দিকা-চিডিরা গোল মিস না করলে প্রথমার্ধেই বড় ব্যবধানে এগিয়ে যাওয়ার কথা লাল-হলুদ শিবিরের। ঠাঠাপোড়া রোদে যুবভারতীর ফিল্ড টার্ফে ক্লান্তি তখন গ্রাস করেছে সিঙ্গাপুরের দলটির এগারো জনকেই।
সেই তাম্পাইন্সই দ্বিতীয়ার্ধে সাইফুলের অনবদ্য ফ্রি-কিক থেকে গোল শোধ করে গেল। তবে এ ক্ষেত্রে অভিজিতের ছোট্ট ভুল কিছুটা হলেও দায়ী। প্রথম পোস্টের সামনে ওয়াল রেখে তিনি দাঁড়িয়েছিলেন দ্বিতীয় পোস্টে। ভেবেছিলেন বাঁ পায়ের ইনসুইংয়ে প্রথম পোস্টে গোলে বল রাখবেন সাইফুল। কিন্তু গোল হল সেই দ্বিতীয় পোস্টেই।
গোলের পর কখনও ৪-৪-২ কখনও বা ৪-৩-৩ হয়ে যাচ্ছিল তাম্পাইন্স। প্রতি-আক্রমণে এসে এই সময় একটা গোল প্রায় করেও ফেলেছিল তাঁরা। রাজু শরীর ছুড়ে বল বিপন্মুক্ত না করলে ম্যাচের ফল অন্য রকম হতেই পারত।
লাল-হলুদ কোচ বলছেন, “পরের ম্যাচটা জিততে তবে। তা হলেই শেষ ষোলোর প্রথম ম্যাচটা কলকাতায় পড়বে। ছেলেরা সেই চেষ্টাই করবে কথা দিয়েছে।”
২০০৪ সালের পর ফের এএফসি কাপের নকআউটে সে ক্ষেত্রে দেখা যাবে মর্গ্যানের দলকে। মেহতাবরাও বলছেন, “এই সাফল্য কোচের। তাঁর কথা রাখতেই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার চেষ্টা থাকবে আমাদের।”

ইস্টবেঙ্গল: অভিজিৎ, খাবরা, রাজু, গুরবিন্দর, সৌমিক, মেহতাব, সঞ্জু (কেভিন লোবো), লালরিন্দিকা, পেন, মননদীপ (বলজিৎ), বরিসিচ (চিডি)।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.