পাকিস্তান হইতে হিন্দু পরিবারগুলির ভারতে চলিয়া আসার ঘটনা ক্রমেই বাড়িতেছে। পর্যটকের ভিসা লইয়া এ-দেশে পৌঁছাইবার পর ভিসার মেয়াদ শেষ হইলেও তাঁহারা আর পাকিস্তানে ফিরিতে চাহিতেছেন না। সে-দেশে তাঁহাদের প্রতি সর্বদা বৈষম্যমূলক আচরণ চলে: সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা, ঘর-দুয়ারে অগ্নিসংযোগ, সম্পত্তি ও দোকানপাটে লুঠতরাজ, মহিলাদের অপহরণ করিয়া এবং বলপূর্বক ধর্মান্তরিত করিয়া বিবাহ— নির্যাতনের তালিকা দীর্ঘ। হিন্দুরা যেখানে ১৯৫১ সালে পাক জনসংখ্যার ২২ শতাংশ ছিলেন, এখন তাঁহারা ২ শতাংশেরও কম। সম্প্রতি কুম্ভমেলায় যোগ দিতে আসার অজুহাতে পাসপোর্ট বানাইয়া রাজস্থান সীমান্ত দিয়া ভারতে প্রবেশ করা ৪৮০ জন পাকিস্তানি হিন্দু ভিসার মেয়াদ ফুরাইলেও স্বদেশে ফিরিতেছেন না। ভারতেই ‘রাজনৈতিক আশ্রয়’ চাহিতেছেন।
অন্য দেশের নাগরিককে রাজনৈতিক আশ্রয় দিবার আইনগত ব্যবস্থা করিবার অর্থ ওই নাগরিকের উপর সংশ্লিষ্ট দেশটির অধিকারের বিরুদ্ধাচরণ। সাধারণ ভাবে ভারত তাহা করিতে চাহে না, কোনও দেশই চাহে না। রাজনৈতিক আশ্রয় কেবল বিশেষ ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, সাধারণ ক্ষেত্রে নহে। সেই হিসাবে এই পাকিস্তানি নাগরিকদের পাকিস্তানে ফেরত পাঠানোই সরকারের আনুষ্ঠানিক কৃত্য ছিল। তবে পাকিস্তানের ক্ষেত্রটি একটি বিশেষ ক্ষেত্রই বটে। শ্রীলঙ্কা কিংবা মায়ানমারের সহিত ভারতের যতই অমধুর সম্পর্ক থাকুক, পাকিস্তান-ভারত সম্পর্কটি সর্ব দিক দিয়াই বিশিষ্ট, ছয় দশকের ঐতিহাসিক প্রেক্ষিতই তাহাকে এই বিশিষ্টতা দিয়াছে। সুতরাং এ ক্ষেত্রে ভারতের উচিত, বিষয়টিকে আলাদা গুরুত্ব দিয়া দেখা: ভারত এই মুহূর্তে সম্ভবত সেই পথেই চলিতেছে। সম্ভবত সে জন্যই কেন্দ্রীয় সরকার আশ্রয়প্রার্থী হিন্দু পরিবারগুলির আবেদন সহানুভূতির সহিত বিবেচনা করিতেছে। সর্বশেষ খবর, এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহের শেষেই এই ‘তীর্থযাত্রী’ দলের ভিসা ফুরাইয়া যাওয়া সত্ত্বেও ভারতীয় বিদেশমন্ত্রক আপাতত তাঁহাদের ভিসার মেয়াদ আরও এক মাস বাড়াইয়া দিয়াছে।
ধর্ম ও সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে দেশবিভাগের পর হইতেই পূর্ব দিকে বাংলাদেশ (সাবেক পূর্ব পাকিস্তান) এবং পশ্চিমে পাকিস্তান হইতে দলে-দলে হিন্দু ভারতমুখী হইয়াছেন। দুই দেশেই হিন্দু জনসংখ্যার হার বিপুল ভাবে হ্রাস পাইয়াছে। হিন্দু শরণার্থীদের ফেলিয়া-আসা সম্পত্তি জবরদখল হইয়াছে। তবু বাংলাদেশে শেখ হাসিনা ওয়াজেদের নেতৃত্বাধীন আওয়ামি লিগ সরকার ‘শত্রু সম্পত্তি আইন’ রদ করিয়া অন্তত তত্ত্বগত ভাবে হিন্দু শরণার্থীদের দখল হইয়া যাওয়া সম্পত্তি ফিরাইয়া দিবার পটভূমি রচিত হইয়াছে। পাকিস্তান কিন্তু তাহার সংখ্যালঘু সমাজ বিষয়ে এ সব কিছুই করে নাই। পরিস্থিতির বিশিষ্টতা বিবেচনা করিয়া ভারতের উচিত, পাকিস্তানের ক্ষেত্রটি আলাদা করিয়া বিবেচনা। পাক ক্রিকেট দলের সফর যখন নিষিদ্ধ হয়, এ ক্ষেত্রেও তেমনই বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন। সঙ্গে প্রয়োজন, কূটনৈতিক স্তরে উদ্বাস্তু পাক হিন্দুদের আশ্রয়প্রার্থনা বিষয়টির যথাযোগ্য আলোচনা। |