ধুঁকছে টেলিকম শিল্প, পিত্রোদার স্বপ্নে দ্বিতীয় বিপ্লব
ক্ষ্য ছিল, মোবাইল সংযোগের ক্ষেত্রে ২০১৫ সালের মধ্যে চিনকে টপকে যাওয়া। কিন্তু চিনকে পেরিয়ে যাওয়া তো দূর, সরকারের নীতিপঙ্গুত্বের কারণে গত দেড়-দু’বছর ধরে ধুঁকছে ভারতের টেলিকম শিল্প। দু’-দু’বার টুজি নিলাম করেও সরকার স্পেকট্রাম বিক্রি করে উঠতে পারেনি। বিদেশি সংস্থাগুলি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। শুকিয়ে এসেছে বিনিয়োগ। উদ্বিগ্ন টেলিকম বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকারের মনোভাব না বদলালে খুব শীঘ্রই এই শিল্পে বৃদ্ধির হার উল্টোমুখে দৌড়তে শুরু করবে।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা স্যাম পিত্রোদা অবশ্য গত কালও দাবি করেছেন, হতাশ হওয়ার কিছু নেই। প্রথম টেলিকম বিপ্লবের সময়সীমা শেষ। এখন ক্ষেত্র প্রস্তুত হচ্ছে দ্বিতীয় টেলিকম বিপ্লবের। মোবাইল ফোন ব্যবহারে বিশ্বে এখন ভারতের স্থান দ্বিতীয়। কেন্দ্রীয় সরকারের হিসেব বলছে বর্তমানে দেশের প্রায় ৯০ কোটি মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। বছর চার-পাঁচেক আগেও এ দেশে ফি বছর গড়ে প্রায় ১৮ কোটি মানুষ মোবাইল পরিষেবার অন্তর্ভুক্ত হতেন।
সংখ্যাটা ক্রমশ বাড়ছিল। তার ভিত্তিতেই টেলিকম বিশেষজ্ঞরা আশা করেছিলেন ২০১৫ সালের মধ্যে চিনকে ছাপিয়ে যাবে ভারত। কিন্তু টুজি কেলেঙ্কারি সেই গতির রাশ টেনে ধরে। টেলিকম বিশেষজ্ঞদের মতে, টুজি কেলেঙ্কারির পরে সরকার ও বিচারব্যবস্থার অতি-সক্রিয়তার কারণে বিনিয়োগকারীরা ভারতের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। যার প্রভাব পড়ছে বাজারে। এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না করলে পরিস্থিতি আগামী দিনে আরও খারাপ হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
যদিও এই দাবি মানতে নারাজ প্রথম টেলিকম বিপ্লবের অন্যতম হোতা পিত্রোদা। তাঁর মতে, প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর সংস্কার প্রয়োজন হয়। ভারতের বাজারে গত দশকে টেলি-বিপ্লব হয়েছে। কিন্তু টুজি কেলেঙ্কারির পর আসল পরিস্থিতি সামনে আসে। দাম বেড়ে যায় স্পেকট্রাম লাইসেন্সের। ফলে বিভিন্ন সংস্থা এত দিন যে রকম সস্তায় স্পেকট্রাম পেতেন, এখন তা পাচ্ছেন না। মোবাইল পরিষেবা আগের চেয়ে দামি হয়ে উঠেছে।
শুধু তা-ই নয়, বেশি দামের জন্য স্পেকট্রাম বিক্রি করতে ব্যর্থ হচ্ছে সরকার। এই পরিস্থিতি স্বভাবতই মোবাইল সংস্থাগুলির মধ্যে হতাশার সৃষ্টি করেছে। পিত্রোদার দাবি, এই হতাশা সাময়িক। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হলেই ফের এই পরিষেবা ক্ষেত্র চাঙ্গা হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন পিত্রোদা।
বর্তমানে ভারতের গড় জাতীয় আয়ে প্রায় ৭ শতাংশ অবদান রয়েছে টেলিকম শিল্পের। প্রত্যক্ষ ভাবে ৫ লক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষের রুটি-রুজি যুক্ত এই পরিষেবার সঙ্গে। এমন সম্ভাবনাময় একটি ক্ষেত্র কেন হঠাৎ পিছমুখো দৌড়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে, দুই বঙ্গসন্তান তার উত্তর খুঁজেছেন ‘রাইজ অ্যান্ড ডিক্লাইন অফ টেলিকমিউনিকেশন রেভলিউশন ইন ইন্ডিয়া’ বইয়ে। প্রবীরকুমার সান্ডেল এবং দিলীপকুমার ঘোষ। দ্বিতীয় জনের বক্তব্য, টুজি কেলেঙ্কারির পরে সরকারও আতঙ্কে ভুগছে। ওই ধরনের দুর্নীতির পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে বাড়ছে সরকারি হস্তক্ষেপ। ফলে সংস্থাগুলি বিনিয়োগ করতে ভরসা পাচ্ছে না। নয়া নিয়মকানুনের জাঁতাকলে পড়ে ক্ষতি হচ্ছে এই শিল্পেরই।
দুই বিশেষজ্ঞই মনে করেন, এর থেকে সরকারের উচিত ছিল নীতিতে আরও স্বচ্ছতা আনা ও প্রথম থেকেই গৃহীত নীতির সফল রূপায়ণে অনেক বেশি নজর দেওয়া। তার বদলে দুর্নীতির অভিযোগ উঠতেই লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র। এতে বিদেশি লগ্নিকারীদের কাছে ভুল বার্তা গিয়েছে। দিলীপবাবুর বক্তব্য, “নীতির ক্ষেত্রে সরকার প্রথম থেকেই স্বচ্ছতা রেখে চললে ওই কেলেঙ্কারিই হত না।” এ ছাড়া ভোডাফোন সংস্থার সঙ্গে কর আদায় নিয়ে কেন্দ্রের মনোভাবও বিদেশি লগ্নিকারীরা ভাল ভাবে নেননি। আগামি দিনে এই পরিস্থিতি শোধরাতে না পারলে কেন্দ্রেরই ক্ষতি বলে দাবি করেছেন অ্যালকাটেল সংস্থার এক কর্তা, দেবাশিস ভট্টাচার্য। তাঁর বক্তব্য, “সাময়িক ভাবে হতাশা তৈরি হলেও সাড়ে তিন লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে এই শিল্পে। বার্ষিক রাজস্ব আয় হয়েছে প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকা। যা থেকে সরকারের ঘরে এসেছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। ফলে রাজস্ব বাড়ানোর স্বার্থেই সরকারকে এই শিল্পের দিকে নজর দিতে হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.