রুদ্ধদ্বার বৈঠকে লগ্নির আহ্বান মুখ্যমন্ত্রী মোদীর
থা ছিল শুধু রথই দেখবেন। কিন্তু কলাও বেচে গেলেন নরেন্দ্র মোদী।
বণিকসভার মঞ্চে দাঁড়িয়ে মঙ্গলবার কলকাতায় আগাগোড়া জাতীয় রাজনীতির কথা বলে গেলেন বিজেপির ‘বিকাশ পুরুষ’। বিঁধলেন কেন্দ্রের ইউপিএ সরকারকে। প্রধানমন্ত্রীর কুর্সির দিকে চোখ রেখে দৌড় শুরু করা মোদীর পক্ষে যা একান্ত স্বাভাবিক। কিন্তু এক বার সেই মঞ্চ ছাড়ার পর শিল্পপতিদের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে তিনি ফের পুরোপুরি গুজরাতেরই মুখ্যমন্ত্রী। নিজের রাজ্যের জন্য লগ্নি টানতে অক্লান্ত। প্রশাসনিক দ্রুততাকে হাতিয়ার করে বিনিয়োগের পথ মসৃণ করতে সদা তৎপর।
এ দিন বক্তৃতার পর তিন বণিকসভার (এমসিসি চেম্বার, ভারত চেম্বার ও ইন্ডিয়ান চেম্বার) বাছাই করা সদস্যদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক বসেন মোদী। সেখানে ২৯ জন শিল্পপতিকে তিনি জানিয়ে গেলেন, বিনিয়োগের জন্য তাঁর দরজা সর্বদা খোলা। এবং ওই আমন্ত্রণ যে নিছক কথার কথা নয়, তা বোঝাতে কয়েক জন আমলাকে সঙ্গেই এনেছিলেন মোদী। লগ্নিতে ইচ্ছুক শিল্পপতিদের ফোন নম্বর জেনে নিয়ে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই প্রাথমিক কাজ সেরে ফেলেছেন তাঁরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, ওই বৈঠকে ২০০ কোটি টাকা লগ্নির প্রস্তাবও দিয়েছেন বিড়লা গোষ্ঠীর সরোজ পোদ্দার।
রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বিনিয়োগ টানার আমন্ত্রণের ভিত অবশ্য মঞ্চ থেকেই তৈরি করছিলেন মোদী। কারণ, দিল্লির দিকে চোখ রেখে এ দিন তিনি বক্তব্য সাজিয়েছেন ঠিকই। কিন্তু কেন্দ্রের ব্যর্থতা তুলে ধরতে সব সময়েই তাঁর মাপকাঠি থেকেছে গুজরাত। তিনি নিজেও জানেন, সারা দেশে ‘গুজরাত মডেল’ ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব, এই বিশ্বাসের বীজ বুনে যাওয়াই আগামী লোকসভা ভোটে তাঁর নিরাপদতম বাজি।
শিল্পমহলের সম্বর্ধনা মোদীকে। —নিজস্ব চিত্র
আর ঠিক সেই কারণেই নিজের রাজ্যের উন্নয়নের ‘রহস্য ফাঁস’ করতে গিয়ে সেখানকার অর্থনীতি থেকে বিপণন— সব বিষয়ই ছুঁয়ে গিয়েছেন শিল্পপতিদের ‘নরেন্দ্র ভাই’। তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন, দূরদৃষ্টি থাকলে কী ভাবে ছোট ছোট সিদ্ধান্ত মোড় বদলে দিতে পারে অর্থনীতির। যেমন তাঁর দাবি, “বাজারে ওঠা-পড়া থাকবেই। কিন্তু তার জন্য যেন পুরো অর্থনীতি ধসে না-পড়ে। তাই সেই ঝুঁকি এড়ানোর আগাম বন্দোবস্ত করেছেন তিনি। সমান গুরুত্ব দিয়েছেন কৃষি, উৎপাদন শিল্প ও পরিষেবায়। যাতে কোনও একটি ক্ষেত্র সামান্য খারাপ ফল করলেও, তা পুষিয়ে দিতে পারে বাকি দু’টি।”
সাত নম্বর রেস কোর্স রোডের দিকে চোখ রাখা এই মোদী বিলক্ষণ জানেন, শিল্পে লগ্নির জন্য বাকি দুনিয়া গুজরাতকে যতটা চেনে, কৃষির জন্য তার সিকি ভাগও নয়। তাই এ দিন বণিকসভার মঞ্চেও কৃষি সম্পর্কে বলতে অনেকখানি সময় বরাদ্দ রেখেছিলেন তিনি। তাঁর কথায়, “শিল্পের জন্য জমি নেওয়ার পাশাপাশি ১৮ হাজার হেক্টর কৃষিজমি তৈরি করেছি আমরা। চরিত্র বুঝে চাষ করার জন্য কৃষকদের দেওয়া হয়েছে জমির হেল্থ কার্ড। তথ্য জোগানোর দায় নিয়েছে সরকারই।” চাষিরা যাতে আধুনিকতম প্রযুক্তির সুবিধা নিতে পারেন, তার জন্য ‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাত’-এর আদলে প্রতি দু’বছরে কৃষি-প্রযুক্তি মেলার আয়োজন করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
কৃষিজাত ও তুলোজাত পণ্যের বিদেশের বাজার ধরার বন্দোবস্ত করতে মোদী যেমন ‘ভ্যালু চেন’ তৈরির কথা বলেছেন, তেমনই আমজনতার আর্থিক উন্নতির প্রসঙ্গে তুলে এনেছেন মাথা পিছু আয় বাড়িয়ে ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার কথা। সেই সূত্রে ছুঁয়ে গিয়েছেন শিল্পের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রকে। বলেছেন শূন্য থেকে শুরু করে গুজরাতের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হয়ে ওঠার গল্প। শিল্পপতিদেরও ছুড়ে দিয়েছেন আমন্ত্রণ, “কুছ দিন তো গুজারিয়ে গুজরাত মে।” আবার একই সঙ্গে ডেলয়েটের রূপেন রায়ের প্রশ্নের জবাবে স্পষ্ট জানিয়েছেন, উন্নয়নের জন্য অবিকল একই মডেল সর্বত্র প্রযোজ্য নয়। বরং মূল দর্শন এক রেখে তা সেখানকার উপযোগী করে তোলা জরুরি।
বাস্তবের মাটিতে পা রেখেও স্বপ্ন ফেরি করা এই মোদী তাই স্বাভাবিক ভাবেই প্রশংসা কুড়িয়েছেন শিল্পমহলের। বক্তৃতা শেষে দীর্ঘ হাততালিতে তা বুঝিয়ে দিয়েছেন শ্রোতারা। শিল্পপতি জি পি গোয়েন্কার মতে, “মোদীর স্পষ্ট ভাবনা ও দূরদৃষ্টি রয়েছে। রয়েছে তা কার্যকর করায় ধারাবাহিক সাফল্যও।” বাঁধা গতের বাইরে ভাবনার জন্য প্রশংসা করেছেন শিল্পপতি জে পি চৌধুরী, মহেন্দ্র জালান এবং গৌরব স্বরূপ। মুগ্ধতার রেশ ছড়িয়েছে রাজ্যের শিল্পমহলের পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যেও। সঞ্জীব-পুত্র শাশ্বত গোয়েন্কা, টিটাগড় ওয়াগন্সের উমেশ চৌধুরী, কেভেন্টার্স-এর ময়াঙ্ক জালান, শ্রীবর্ধন গোয়েন্কা-সহ তরুণ শিল্পপতিদের দলও মুগ্ধ মোদী-ম্যাজিকে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.