|
|
|
|
বাবা জ্ঞান দিয়ো না |
হাসিতেই ফাঁসিও |
মুচকি হাসি, প্রাণখোলা হাসি, দেঁতো হাসি। আছে শোভাময় হাসিও। উত্তমকুমার বা মাধুরী দীক্ষিতের
ভুবন
ভোলানো হাসিতে কাত হননি এমন মানুষ মেলা ভার। মন কেমন করা হাসির মৌতাত নিয়ে লিখছেন রেশমি বাগচি |
হাসি মেপেজুপে হয় নাকি |
ছেলেটির নাম বরফি। কানে শোনে না, কথাও বলতে পারে না। কিন্তু বরফির মুখের মিষ্টি হাসি দেখে সকলের মন গলে জল। বিশেষ করে মেয়েরা তো তার হাসির দিওয়ানা। আর সেই সুযোগে কতই না কাণ্ডকারখানা করে সে।
ঠিক ধরেছেন, অনুরাগ বসুর ছবি ‘বরফি’র কথাই বলছি। রণবীর কপূরকে বেশ মানিয়েছিল চরিত্রটায়। একটা মিলও আছে চরিত্রর সঙ্গে তাঁর। উভয়েই হাসির জাদুতে মাত করতে পারেন সকলকে। বলাই বাহুল্য, রণবীরের হাসির ফাঁদে ফাঁসেননি, এমন নারী খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। হাসি হচ্ছে ফ্লার্ট করার এক নম্বর উপায়। যে পুরুষ, বা যে নারী সময় বুঝে সঠিক হাসি হাসতে জানেন তার আকর্ষণে জড়াতে বাধ্য অপর পক্ষ।
অভিষেক সবেমাত্র কলেজে ঢুকেছেন। ক্লাসের মেয়েরা ওঁর গুড লুকস, আর হাসিতে হাবুডুবু খায়। অভিষেকের কথায়, “আমার হাসি দেখে যদি কারও ভাল লাগে, তাতে আমার কী দোষ?” আসলে উনি বেশ ভাল করেই জানেন যে মেয়েরা ওঁর প্রেমে গদগদ।
কিন্তু কারও দিকে তাকিয়ে হাসলেই বুঝি প্রেম? কখনওই না, হাসি হচ্ছে নিজেকে এবং অন্যকে ভাল রাখার মূল মন্ত্র, বলছেন পরিচালক অনুরাগ বসু। “আমাদের জীবন এত ছোট, এত সমস্যায় ভরপুর, তার
মধ্যে একমাত্র রিলিফ হচ্ছে হাসি। সেই হাসি কী মেপেজুপে হয় নাকি?,” বললেন তিনি।
|
ঝড় তোলা দুষ্টু হাসি |
কথা প্রসঙ্গে আরও বললেন অনুরাগ, “উত্তমকুমারের মতো ভুবন ভোলানো হাসি হলে কোনও মেয়েই নিজেকে ঠিক রাখতে পারবে না। ‘বরফি’ চরিত্র তৈরির সময় তিনি এটাই মাথায় রেখেছিলেন। অনুরাগের মতে, “আপনার জীবনে যত কঠিন পরিস্থিতিই আসুক না কেন, সেই পরিস্থিতিতে কী ভাবে হাসবেন তা বরফি করে দেখিয়েছে। সঙ্গে একটু দুষ্টুমি।” অনুরাগ বসুর নিজের জীবনে মেয়েদের দুষ্টু হাসি কী রকম ঝড় তুলত? জানালেন, “অনেক মেয়ের হাসিই মনে রাখার মতো। কিন্তু কোনও দিন কারও হাসি দেখে মিসজাজ করিনি।”
সবাই বলে, প্রত্যূষার হাসি নাকি মাধুরী দীক্ষিতের মতো। আগে কোনও অনুষ্ঠান বা গেট টুগেদারে গিয়ে প্রাণ খুলে হাসতেন। তাঁর হাসি যে অনেকের মনে প্রেমের সঞ্চার ঘটাত, সেটাও বেশ বুঝতেন। এই অবধি ঠিক আছে। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, অনেকেই প্রত্যূষার হাসি দেখে ভাবতেন, সেও বুঝি প্রেমে আগ্রহী। তখন পালানোর পথ খুঁজে পেতেন না। অগত্যা, হাসিতে রেশনিং। অভিনেত্রী শ্রাবন্তীর এ রকম অভিজ্ঞতা কম হয়নি। হিন্দিতে একটা কথা আছে না, ‘হসি তো ফসি’। ছেলেরা ধরেই নেয় মেয়েরা ওদের দেখে হেসেছে মানে প্রেমে পড়েছে। “এমন কত হয়েছে। হয়তো আমার বোনেদের সঙ্গে কোথাও গিয়েছি। হাসি-মজা করতে করতে যেই ছেলেদের দিকে চোখ পড়েছে, তারা ভেবে বসল অন্য কিছু। ব্যস, অমনি ফিসফিসানি শুরু,” শ্রাবন্তী জানালেন। এই রকম পরিস্থিতিতে পড়লে শ্রাবন্তীর মতে, একটু গম্ভীর হয়ে, ভ্রু হাল্কা তুলে, অ্যাটিটিউড দেখিয়ে, ভুল ভেঙে দেওয়া উচিত। ভাবনার নৌকোকে বেশি ভাসতে না দেওয়াই ভাল। অতএব, ধীরে চলো বন্ধু। |
|
হাসির নৌকো বেয়ে |
সত্রাজিতের বক্তব্য, সুন্দরী মহিলা তাঁকে দেখে মিষ্টি করে হাসলে, মনে হতেই পারে যে, তাঁর প্রতি বাড়তি আগ্রহ আছে। আর তা ছাড়া ছেলেরা হাসি শোভিত নারীর প্রতি এমনিতেই আকৃষ্ট হয়। ওঁর যুক্তি, “মেয়েরা তো এমনি এমনি কাউকে দেখে হাসে না, কাউকে ভাল লাগলে তখনই হিরের দ্যুতির মতো হাসি মুখে খেলা করে।” ভুল ভাঙালেন অভিনেতা পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। হাসির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরি বলে তিনি মনে করেন। যদি সত্যি কোনও নারী এক জন পুরুষকে প্রেমের নজরে দেখেন, হাসির সঙ্গে তাঁর চোখও কথা বলে। ভুল বোঝার অবকাশই নেই। তখন কী করেন পরাণ? “কী আর করব! হালকা করে কেটে পড়ি। এখন যখন অল্পবয়সি নায়িকারা আমায় ঘিরে থাকে, তখন ভাবি, হায় রে! কেন এত দিন আগে জন্মালাম!” চিরাচরিত রসিকতায় বললেন পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। এমন কেউ আছে যাঁর হাসি আজও মনে পড়ে? “মেয়েটির নাম জানি না। চন্দননগরে থাকতাম তখন। অফিস সেরে বাড়ি ফিরতাম যখন, সে রোজ তার বাড়ির জানলায় দাঁড়িয়ে আমায় দেখত। চোখ দু’টি খুব সুন্দর ছিল। কাজেই না তাকিয়ে থাকতে পারতাম না। মনে মনে নাম দিলাম সুনয়না। এ রকম কিছু দিন চলার পর একদিন সে আমাকে দেখে হাসল। এত মিষ্টি তার হাসি, আজও ভুলতে পারিনি,” জানালেন পরাণ। সেই হাসির অর্থ বুঝতে একটুও সময় লাগেনি তাঁর। |
হাসি দিয়ে দারুণ ফ্লার্ট করা যায়, প্রেম নয় |
এমনটাই মনে করেন ইমন। ইমন খুব ঝকঝকে, স্মার্ট মেয়ে। মাস্টার্স করছে। ওঁর কথায়, “আমার হাসি দেখে যদি কেউ কমপ্লিমেন্ট না দেয়, তখন আমার খুব মন খারাপ হয়।” কমপ্লিমেন্ট পেতে ভাল লাগে যাঁর কাছ থেকে, তাঁর প্রতি একটা ভাল লাগা নিশ্চয়ই তৈরি হয়। সাময়িক ভাল লাগা, স্থায়িত্ব খুব কম। প্রেমের ধারে কাছে নয় বিষয়টি। শুধুই ফ্লার্ট।
অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় বললেন, “আপনি যে ফ্লার্ট করছেন, তা আপনার হাসি দেখেই বোঝা যায়। সেই হাসিতে গভীরতা থাকে না, চটক থাকে। ‘সি ইউ বাট ডোন্ট টাচ’ টাইপের হাবভাব। প্রাণখোলা হাসি নয় সেটা। হাসির মধ্যে সরলতা, নিজস্বতা না থাকলে ঠিক বুঝতে পারা যায়।” তাঁর পরবর্তী ফিল্ম ‘আমি আর আমার গার্লফ্রেন্ডস’এ পার্নোর চরিত্র এমন একটি মেয়ের যাঁর দিকে তাকিয়ে কেউ হাসলে তাঁর মনে হয় বুঝি প্রেমে পড়েছে। এটা একটা স্তর। যখন আপনি একলা, মনে হয় কেউ বন্ধু হোক, মন যখন ‘অ্যাটেনশন’ পেতে চায়, তখনই এই রকম প্রবণতা দেখা যায়। স্বস্তিকার মনে কারও হাসি দেখে প্রেমের সঞ্চার হয়েছে কখনও? “হয়েছে মানে? বহু বার হয়েছে। এক বার, দু’বার হয়েছে বললে পাঠকরা আমাকে মিথ্যেবাদী বলবে,” জানালেন স্বস্তিকা। ক্লাস সিক্স বা সেভেনে পড়াকালীন তিনি এমনই এক টল, ডার্ক, হ্যান্ডসাম ছেলেকে দেখে ফিদা হয়েছিলেন। রাস্তায় দেখা হলে বা চোখাচোখি হলে আর কে পায়! বন্ধুদের কাছে রিপোর্ট, “জানিস, আমার দিকেই দেখছিল।” হেসে বলেন স্বস্তিকা। |
পাশের বাড়ির মেয়েটি যখন হাসে |
সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার ফিরে গেলেন আজ থেকে ৪০ বছর আগে। বললেন, “রাস্তায় চলতে গিয়ে যদি কোনও মেয়ের আঙুলের স্পর্শ পেতাম, সারা শরীরে যেন কারেন্ট বয়ে যেত। সাইকেল করে যাচ্ছি, পাশের বাড়ির মেয়েটি আমায় দেখে হাসল, পৃথিবীটা অন্য রকম হয়ে গেল মুহূর্তে। এই অনুভূতির জগতে বাস করতে ভাল লাগত।” তবে তাঁর মতে এখন এই সব অতীত। আগে কারও সঙ্গে পরিচয় করতে গিয়ে সবাই একই ডায়লগ বলত, আপনাকে কোথায় যেন দেখেছি! এখন এগুলো বোকামো মনে হয় সমরেশবাবুর। আগের সঙ্গে এখনকার ফারাকটা কোথায়? উত্তরে তিনি শোনালেন তাঁর এক অভিজ্ঞতা। “এই তো কিছু দিন আগে রাত সাড়ে আটটা নাগাদ মেট্রোতে ফিরছি। খুব একটা ভিড় নেই। দু’টি ছেলে, একটি মেয়ে উঠলেন। সিটে না বসে দাঁড়িয়েই গল্প করছেন ওঁরা। একটি ছেলের স্টেশন এসে গিয়েছে। মেয়েটি গভীর আলিঙ্গন করে, তাকে চুমু খেলেন। সব যাত্রীই হাঁ হয়ে দেখল দৃশ্যটি। পরের স্টেশনে মেয়েটি নামবেন। এ বার তিনি তাঁর সঙ্গে থাকা, অপর ছেলেটিকেও একই রকম ভাবে আলিঙ্গন করলেন ও চুমু খেলেন। মেয়েটি নামার পর, ছেলেটি সিটে বসে চোখ বন্ধ করে, মিটিমিটি হাসতে লাগলেন। দেখে মনে হল, ও ওই মুহূর্তটা মনে করেই হাসছে।” সমরেশবাবুর মনে হয়েছিল, আসলে মেয়েটির চুম্বন প্রেমের নয়, এক ধরনের আদর। |
হাসি দেখে কুপোকাত |
এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই যে প্রেম আর হাসির সম্পর্ক খুব মজবুত। না হলে বছরের পর বছর মোনালিসাকে দেখে আমরা প্রেমে পড়তাম না। কিন্তু মোনালিসার মতো সবাই তো আর আপনার প্রেমের অনুভূতি জেনে, চুপ করে থাকবে না। এ বার থেকে আপনাকে দেখে কেউ হাসলে প্রথমেই প্রেম ভেবে ফেলবেন না। খেয়াল করে দেখুন তাঁর চোখ কী বলছে, তিনি আপনার প্রতি কতটা ইন্টারেস্ট দেখাচ্ছেন।
বার বার ঘুরে তাকাবেন না একদম। মনের মধ্যে যতই তোলপাড় হোক, আপনার মুখে হাসি যেন বজায় থাকে। দেখবেন, তিনি এসে আপনার মোবাইল নাম্বারটা চাইলেন, নিজেরটিও দিলেন।
|
ফ্লার্ট যখন আর্ট |
|
অগ্নিমিত্রা পল: যাঁকে ফ্লার্ট করার ইচ্ছে তাঁর সম্পর্কে হোমওয়ার্ক থাকা চাই। নিজের বুদ্ধি-জ্ঞানগম্যিকেও কাজে লাগাতে হয়। ‘আপনাকে দেখতে খুব স্মার্ট লাগছে’এই কথাটা একটু ঘুরিয়ে, রসিয়ে বললে ভাল। রসিকতা বোধ থাকতেই হবে ফ্লার্টের মধ্যে। মেয়েদের মধ্যে হালকা ন্যাকামি না থাকলে ফ্লার্ট জমে না। ‘ইগনোর’ করাও কিন্তু ফ্লার্ট করা। |
|
রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়: হালকা কথা, একটা মিষ্টি আমেজ থাকলে ফ্লার্ট জমে। কথা হবে এমন ভাবে যাতে দু’জনেই ক্ষণিকের আনন্দ পায়। একটু রোম্যান্স। একটু কৌতূহল। তারই ভিত্তিতে কথা। ফ্লার্ট করতে হলে সাজিয়ে গুছিয়ে যে কোনও বিষয়ে দু’ চার কথা বলার মতো ‘ফান্ডা’ থাকা খুব দরকার। |
|
|
|
তনুশ্রী চক্রবর্তী: যাঁকে ফ্লার্ট করতে ইচ্ছে করছে তাঁকে কোনও রকম ভাবে ফ্লার্ট না করাটাই হল আসলে ফ্লার্ট করা। একটু কম কথা বললে নজর কাড়া যায়। কখনও কখনও সুন্দর নীরবতাই অনেক কিছু বলে দেয়। ফ্লার্ট করতে গিয়ে হঠাৎ বেশি উচ্ছল হয়ে ওঠা বা গায়ে পড়া ব্যবহার করা একদম চলবে না। একটা আড়াল রাখতেই হবে। |
|
|
মিঠুন চক্রবর্তী: একটা হয় উদ্দেশ্য মূলক ফ্লার্টিং। অন্যটা সুইট ফ্লার্টিং। সুইট ফ্লার্টিং আমার খুব পছন্দ। যে মেয়েটিকে বা ভদ্রমহিলাকে ফ্লার্ট করা হবে তাঁর ভাল লাগা আর অনুভূতির জায়গাগুলো বুঝে ফ্লার্ট করা উচিত। চোখ সুন্দর, মুখ সুন্দর...এ সব বলে ফ্লার্ট করা পুরনো হয়ে গিয়েছে। ফ্লার্টিংয়ে যেন দু’তরফের সায় থাকে। যিনি পছন্দ করছেন না তাঁকে একেবারেই ফ্লার্ট করতে যাবেন না। ভয়ঙ্কর তিক্ততা হয়ে যেতে পারে। |
|
বিক্রম ঘোষ: প্রথম ‘ইমপ্রেশন’টা এমন হবে যাতে অন্য পক্ষ বেশ স্বস্তি পায়। ‘কমফর্ট জোন’ চাই। সেই সঙ্গে একটু উৎকণ্ঠা বা রোমাঞ্চও জাগিয়ে রাখতে হবে। কোনও মেয়ের সঙ্গে প্রথম আলাপ বা ভাল লাগাতেই নিজের সম্পর্ক ভ্যাড়ভ্যাড় করে সব বলে দেওয়া একদম নয়। কিছুটা বলে বাকিটা রহস্যের মধ্যে রাখা। তবেই না ‘ম্যাগনেটিজম’টা থাকবে। (এ সবই বললাম পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে। এখন আমি কাউকে ফ্লার্ট করি না। একদম না।) |
|
|
শতাব্দী রায়: ফ্লার্ট করার প্রথম শর্ত নিজে যে রকম, সেই ব্যক্তিত্বকেই একটু সাজিয়ে গুছিয়ে তুলে ধরা।
কোনও রকম ‘হিপোক্রেসি’ চলবে না। যখনই যাকে ভাল লাগবে, সেটা স্বচ্ছন্দ ভাবে মানে যতটা সম্ভব
স্মার্টলি বলতে পারলেই আপনি সফল। ফ্লার্ট করার পক্ষে এসএমএস খুব ভাল উপায়। সরাসরি কথা
বলাও হল না, অথচ অনেক কথাই টুকরো টুকরো লেখায় বলে দেওয়া গেল। |
|
সাক্ষাৎকার: সংযুক্তা বসু |
|
|
|
|
|