শিলিগুড়ি পুরসভার চলতি আর্থিক বছরের বাজেট পাস হয়েছে কি না তা নিয়ে বিতর্কের অবসান এখনও হয়নি। তার জেরে শিলিগুড়ির মেয়র গঙ্গোত্রী দত্তের আর্থিক ক্ষমতা কার্যত খর্ব করে দিল রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। সোমবার পুর দফতরের যুগ্ম সচিবের তরফে শিলিগুড়ির পুর কমিশনার প্রভুদত্ত ডেভিড প্রধানকে পাঠানো এক নির্দেশে ১৬টি ক্ষেত্র নির্দিষ্ট করে সেই খাতে টাকা খরচের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। পুরসভা সূত্রের খবর, নতুন কোনও নির্দেশ না-দেওয়া হলে আগামী জুন মাস পর্যন্ত ওই নির্দেশ পুরসভাকে মেনে চলতে হবে। ফলে, চলতি গ্রীষ্মের মরসুমে পুর এলাকায় জল সরবরাহ বাবদ নতুন কোনও প্রকল্প কিংবা রাস্তা তৈরি, মেরামতির জন্য নতুন কোনও প্রকল্প হাতে নিতে পারবে না পুরসভা। পুরসভার মেয়র বলেছেন, “ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে বলে যা বলা হচ্ছে তা বিভ্রান্তিকর। সব ঠিকই আছে।”
ঘটনা হল, ওই নির্দেশ পাওয়ার পরে ঘরে-বাইরে সমালোচনার মুখে পড়েছে কংগ্রেস পরিচালিত পুরবোর্ড। কারণ, সবে কংগ্রেস এককভাবে মেয়র পারিষদ গঠন করেছে। নয়া নির্দেশের ফলে মেয়র পারিষদরা নতুন করে কোনও প্রকল্প তৈরি করতে পারবেন না। দার্জিলিং জেলা কংগ্রেসের নেতাদের একাংশ উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, মানুষ কংগ্রেস-তৃণমূল জোটকে জিতিয়ে বোর্ড চালানোর রায় দিলেও তা বাস্তবে কার্যকর হল না কেন সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। প্রসঙ্গত, এদিনই পূর্ত বিভাগের মেয়র পারিষদ হিসেবে শপথ নিয়েছেন কংগ্রেসের সুজয় ঘটক। কিন্তু, নতুন কোনও রাস্তাঘাটের প্রকল্প তৈরির ক্ষমতা ওই নির্দেশের ফলে তাঁর থাকল না।
|
একনজরে |
• মিড ডে মিল, অবসরপ্রাপ্তদের ভাতা, মাইনে, ফোন বিল, গাড়ির খরচ, প্রকল্পের ভাতা, স্টেশনারি সরঞ্জাম কেনা, কাউন্সিলরদের গত আর্থিক বছরের তহবিলের প্রাপ্য, মশার তেল, ওষুধ, ব্লিচিং পাউডার, পালস পোলিও, নিরাপত্তা বিষয়ক, মেয়র, চেয়ারম্যান, মেয়র পারিষদ, কাউন্সিলরদের ভাতাএই ১৬টি ক্ষেত্রে টাকা খরচের অনুমতি দেওয়া যাবে।
• নির্দেশ অনুযায়ী মেয়র, মেয়র পারিষদরা নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া বা মেরামতি, কেনাকাটা করতে পারবেন না।
• চেয়ারম্যান নির্বাচন নিয়ে সোমবার উচ্চ আদালত সব পক্ষকে আগামী ১৬ এপ্রিলের মধ্যে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। |
|
তৃণমূলের পক্ষ থেকে সরাসরি মেয়রের ইস্তফা দাবি করা হয়েছে। তৃণমূলের দার্জিলিং জেলার মহাসচিব কৃষ্ণ পালের দাবি, “যেখানে নতুন কোনও প্রকল্প কিংবা ব্যায় বরাদ্দের কোনও আর্থিক ক্ষমতাই মেয়রের হাতে নেই, সেখানে তাঁর পদে থাকার নৈতিক অধিকারও নেই।” যদিও মেয়র জানান, ইস্তফা দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তাঁর চ্যালেঞ্জ, “আমাদের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনা হোক। তা হলেই সব স্পষ্ট হবে।”
বামেদের তরফে মেয়রের আর্থিক ক্ষমতা খর্ব হওয়ায় শিলিগুড়ির উন্নয়নে বিঘ্ন ঘটবে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “যে নির্দেশ এসেছে বলে শুনেছি তাতে মেয়রের আর্থিক ক্ষমতা খর্ব হয়েছে। এতে নানা ক্ষেত্রে শহরের উন্নয়ন স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।” তবে মেয়রের পদত্যাগ কিংবা ইস্তফার দাবি সিপিএমের তরফে করা হয়নি। বরং কংগ্রেস-তৃণমূলের কোন্দলের জেরে কেন শহরবাসী ভূগবেন সেই প্রশ্ন তুলে প্রচারে যাওয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছেন অশোকবাবুরা।
বামেদের সমালোচনার প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের দার্জিলিং জেলার মহাসচিব জানান, সিপিএম ও তার শরিক দলগুলির ১৭ জন কাউন্সিলর মিলে সংখ্যালঘু কংগ্রেসের বোর্ডের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনতেই পারে। সেই কাজটা বামেরা কেন করছেন না সেটা শিলিগুড়ির মানুষ ভালভাবেই বুঝতে পারছেন। কৃষ্ণবাবুর কথায়, “কংগ্রেস জোট হিসেবে জিতে প্রায় দেড় বছর বামেদের সমর্থনে বোর্ড চালিয়েছে। এখনও ফের দুপক্ষ মিলে চালাবে বলেই বাম আমলের দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করেনি কংগ্রেস।” |