শিলিগুড়ি লাগোয়া ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি এলাকায় বামফ্রন্ট ঐক্যবদ্ধভাবে পঞ্চায়েতে ভোটে লড়াই করবে বলে ঘোষণা করলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক তথা বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। সোমবার সকালে শিলিগুড়ির মিত্র সম্মিলনী হলে ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি এলাকার দলীয় কর্মীদের নিয়ে এক কর্মী সভা হয়েছে। সেখানে বিমানবাবু উপস্থিত ছিলেন। সভার পর তিনি বলেন, “শিলিগুড়ি লাগোয়া এই এলাকায় সার্বিক ঐক্য হয়েছে। আমরা ফ্রন্টের সব শরিক জোটবদ্ধভাবে লড়াই করব। যখনই পঞ্চায়েত ভোট হোক, আমরা তৈরি।”
শহর লাগোয়া এই ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রটির বিধায়ক উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব। ওই এলাকায় মুখ্যমন্ত্রী সচিবালয়, ফিল্ম সিটি-সহ নতুন উপনগরীর কাজ চলছে। এ দিন বিমানবাবু জানিয়েছেন, ওই এলাকায় জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের ১টি, পঞ্চায়েত সমিতির ১১টি এবং ৮৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতের আসন রয়েছে। এলাকাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জোট শরিকদের সঙ্গে আলোচনা চূড়ান্ত হয়েছে। |
দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিতে চলেছেন বিমান বসু। —নিজস্ব চিত্র। |
ফ্রন্ট সূত্রের খবর, জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদ বর্তমানে সিপিএমের দখলে। এলাকার ডাবগ্রাম-১ পঞ্চায়েতটি সিপিএমের দখলেই রয়েছে। বাকি ডাবগ্রাম-২, ফুলবাড়ি-১ এবং ২ বিরোধীদের দখলে রয়েছে। অধিকাংশ জায়গায় কংগ্রেস, তৃণমূল এবং বিজেপি মিলে বোর্ড চালাচ্ছে। ফুলবাড়ি-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরাট এলাকায় ১৯৯৯ সাল থেকে সিপিএমের সঙ্গে সিপিআই-র আসন সমঝোতা হয়নি। পরপর তিনবার সিপিএম এবং সিপিআই এলাকায় একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। এতে সুবিধা পেয়েছে বিজেপি এবং তৃণমূল। সেখানে এবারই প্রথম সিপিএম, সিপিআই-র আসন সমঝোতা চূড়ান্ত হয়েছে।
আলোচনায় ঠিক হয়েছে, এলাকার পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েত আসন ছাড়াও একটি পঞ্চায়েত সমিতির আসনে সিপিআই লড়বে। এরমধ্যে সিপিএমের জেতা কাওয়াখালি পোড়াঝাড় আসনটিও রয়েছে। জেলা সিপিএমের কয়েকজন নেতা জানান, এবার এই চারটি পঞ্চায়েত এলাকায় বিজেপি, কংগ্রেস এবং তৃণমূল আলাদা প্রার্থী দেবে। সেখানে একজোট হয়ে লড়লে সবচেয়ে বেশি সুবিধাজনক জায়গায় থাকবে বামফ্রন্ট। এর প্রভাব আগামী বছর লোকসভা, শিলিগুড়ি পুরসভা এবং মহকুমা পরিষদ তার প্রভাব পড়বে। সেই বিষয়টি সামনে রেখেই ভোটে নামা হয়েছে।
এ দিন বিমানবাবু জানান, ১৭টি জেলায় আসন সমঝোতা প্রায় চূড়ান্ত। কয়েকটি জায়গায় সমস্যা রয়েছে। উত্তরবঙ্গের মালদহ, কোচবিহার এবং জলপাইগুড়িতে প্রথমে দ্বিপাক্ষিক তার পরে বামফ্রন্টের বৈঠকে আসন চূড়ান্ত হবে। বরাবর আমরা দেখেছি, ভোটে রাজ্য বা কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। বাম আমলেও তাই হয়েছে। কিন্তু ভোট নিয়ে রাজ্য সরকার অদ্ভুত আচরণ করছে। তৃণমূলের পক্ষ থেকে সব ক্ষেত্রে বেশির ভাগ মন্ত্রী নেতানেত্রীরা মন্তব্য করে থাকেন। পঞ্চায়েত ভোটে তা হচ্ছে না। বিমানবাবুর অভিযোগ, “তৃণমূলের অন্দরে সংঘর্ষ চলছে। তৃণমূলের হাতে তৃণমূল, পুলিশ খুন হচ্ছে। তৃণমূল নেতাদের প্রভাব, সম্পত্তি বাড়ছে। সবই মানুষ দেখছে।”
তবে নির্বাচন এখনই না হলে রাজ্যের ক্ষতি হবে বলে মন্তব্য করে বিমানবাবু বলেন, “এখনই ভোট না হলে মানুষের ক্ষতি হবে। রাজ্যের উন্নয়ন বন্ধ হয়ে যাবে। কেন্দ্রীয় প্রকল্প, প্ল্যানিং কমিশনের টাকা আটকে যেতে পারে।” পাহাড় প্রসঙ্গে বিমানবাবুর কটাক্ষ, “এখন যা অবস্থা তাতে সত্যিই পাহাড় হাসছে! জঙ্গলমহলও। আমরা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি। সময় মত পদক্ষেপ ঘোষণা করা হবে।” |