দুষ্কৃতী ধরতে গিয়ে ব্লেডে জখম পুলিশ
সোমবার সকাল ১০টা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুরে, আমতলার চার রাস্তার মোড়ে এক যুবক আর এক জনকে জাপটে ধরে রয়েছে। দু’জনের মধ্যে চলছে প্রবল ধস্তাধস্তি। চোখ বিস্ফারিত করে বহু মানুষ দেখছেন, এক জন অপরের শরীরে এলোপাথাড়ি ব্লেড চালিয়ে যাচ্ছে। আচমকা এই দৃশ্যে হকচকিয়ে যান কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশকর্মীরাও। একটু পরেই ছুটে যান তাঁরা। ধরে ফেলেন দু’জনকেই।
মুখে, শরীরে অসংখ্য ক্ষত নিয়ে অচৈতন্য হয়ে পড়েন জখম ব্যক্তি। কয়েক ঝলক দেখার পরেই শ্যামল দাস নামে ট্রাফিক পুলিশের এক কর্মী ওই জখম ব্যক্তিকে চিনতে পারেন। ক্ষতবিক্ষত ওই যুবক বিষ্ণুপুর থানার এসআই জয়ন্ত পোদ্দার। তড়িঘড়ি তাঁকে আমতলা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গোটা শরীরে প্রায় কুড়িটি সেলাই হয়েছে তাঁর। মুখে কমপক্ষে আটটি ক্ষত রয়েছে বলে জানান চিকিৎসকেরা। অবস্থার অবনতি হচ্ছে দেখে তাঁকে দক্ষিণ কলকাতার একটি নার্সিংহোমে স্থানান্তরিত করা হয়। নার্সিংহোম সূত্রে খবর, জয়ন্তবাবুর অবস্থা স্থিতিশীল। পুলিশ জানায়, যে যুবক তাঁর গায়ে ব্লেড চালায়, তার নাম জয়নাল সর্দার। সে গ্রেফতার হয়েছে। আজ, মঙ্গলবার তাকে কোর্টে তোলা হতে পারে।
জখম পুলিশ অফিসার জয়ন্ত পোদ্দার। —নিজস্ব চিত্র
পুলিশ সূত্রের খবর, কয়েক দিন আগে মুম্বই পুলিশের একটি দল বিষ্ণুপুর থানায় এসে জানায়, মুম্বইয়ের সান্তাক্রুজ এলাকায় কয়েকটি সোনার দোকানে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত কয়েক জন বিষ্ণপুর থানার চণ্ডী গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় আত্মগোপন করে রয়েছে। তাঁরা এ-ও জানান, জয়নাল সর্দার নামে এক জন ওই দলের পাণ্ডা। তদন্তে নেমে বিষ্ণুপুর থানার পুলিশ ওই এলাকার বাসিন্দা জয়নালের হদিস পায়। কিন্তু পুলিশি অভিযানের কথা টের পেয়ে যায় জয়নাল।
এ দিন সকালে আসবাবপত্র নিয়ে ছোট ট্রাকে চেপে চম্পট দেওয়ার চেষ্টা করে জয়নাল। ঘটনার তদন্তকারী অফিসার জয়ন্ত পোদ্দার তা জানতে পারেন। কয়েক জন সঙ্গীকে নিয়ে তিনি রাস্তায় ট্রাকটি থামিয়ে জয়নালকে জাপটে ধরেন। তখনই জয়ন্তবাবুর গায়ে ব্লেড চালিয়ে পালানোর চেষ্টা করে জয়নাল। কিন্তু আক্রান্ত হয়েও জয়ন্তবাবু তাকে ছাড়েননি। পরে ট্রাফিক পুলিশকর্মীরা চলে আসায় তাঁর সুবিধা হয়। জয়ন্তবাবুকে ছাড়াতে গিয়ে আরও তিন জন পুলিশকর্মী অল্পবিস্তর জখম হয়েছেন। তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
তদন্তকারী অফিসারেরা জানান, দক্ষিণ ২৪ পরগনার কয়েকটি রুটের ট্রেকার ও মিনিবাসে চালকের কাজ করে জয়নাল। এলাকাবাসী জানান, মাঝেমধ্যেই সে উধাও হয়ে যেত। বাসিন্দারা জানান, প্রায় বছর দশেক আগে মুম্বই থেকে বিষ্ণুপুরের চণ্ডী এলাকায় এসে বিয়ে করে জয়নাল। সে গাড়িচালক হিসেবেই পরিচিতি।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সান্তাক্রুজ এলাকায় ডাকাতির ঘটনায় কয়েক জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের মোবাইল ফোনেই জয়নালের নম্বরের হদিস পান তদন্তকারীরা। সে যে বিষ্ণপুরের বাসিন্দা এবং ডাকাতির পাণ্ডা, তা-ও জানতে পারে মুম্বই পুলিশ। ভিন্ রাজ্যে ডাকাতির ঘটনায় আরও এক দুষ্কৃতী বিষ্ণুপুর এলাকায় গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠী বলেন, “মুম্বই পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। আর এক দুষ্কৃতীর খোঁজ চলছে।” জয়নাল কী ভাবে রেশন কার্ড ও ভোটার তালিকায় নাম তুলল, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তদন্তকারী অফিসারেরা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.