|
|
|
|
পরিকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা বিশ্ববিদ্যালয়ে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামো উন্নয়ন ও কাজে স্বচ্ছতা আনতে একগুচ্ছ পরিকল্পনা নিলেন কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে যেমন রয়েছে, সাব স্টেশন তৈরি, হস্টেল নির্মাণ, তেমনই রয়েছে কর্মীদের বদলি, ঠিকাদারদের নির্দিষ্ট তালিকা তৈরি প্রভৃতি। দূরশিক্ষা বিভাগে স্থায়ী ডিরেক্টর পদ তৈরির জন্যও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তী জানান, “বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে ও কাজে স্বচ্ছতা বজায় রাখতেই কয়েকটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ধীরে ধীরে এই সব পরিকল্পনাগুলি বাস্তবায়িত করা হবে।”
এতদিন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও স্বচ্ছ বদলি নীতি ছিল না। কর্তৃপক্ষ নিজেদের সুবিধে মতো কয়েকজন কর্মীকে মাঝে মধ্যে বদলি করতেন। ফলে এক শ্রেণির কর্মী দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়তেন। কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ গেলেও তাঁরা কিছু করতেন না বা করতে পারতেন না। কারণ, দীর্ঘদিন কর্মীরা এক একটি বিভাগে কাজ করায় তাঁরা নিজেদের মধ্যে একটি শক্তিশালী চক্র গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল। যে চক্রের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শ্রেণির আধিকারিকের অশুভ আঁতাত তৈরি হয়েছিল বলেও অভিযোগ।
এ বার সেই চক্রটিকে ভাঙতেই উদ্যোগী হলেন কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১৮০ জন কর্মী রয়েছেন। তাঁদের কিছু রেজিস্ট্রার, কিছু পরীক্ষা নিয়ামক, কিছু ইঞ্জিনিয়ারিং-সহ বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত। এ বার নিয়ম করে এক দফতর থেকে অন্য দফতরে এই কর্মীদের বদলি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। উপাচার্য জানান, এই পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়িত করতে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।
দূরশিক্ষা বিভাগে এতদিন অস্থায়ী ডিরেক্টর দিয়েই কাজ চালিয়ে আসা হচ্ছে। এ বার থেকে এই বিভাগটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে চালানোর জন্য একজন পূর্ণ সময়ের ডিরেক্টর নিয়োগেরও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তারই সঙ্গে বিভাগটির জন্য একটি নির্দিষ্ট নিয়মকানুনও তৈরি করা হচ্ছে। তার জন্য নেতাজি মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শুভশঙ্কর সরকার ও এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রাক্তন উপাচার্য রাধারমণ চক্রবর্তীকে দিয়ে একটি কমিটি তৈরি করা হয়েছে। যাঁরা একটি নির্দিষ্ট ও বাস্তব উপযোগী নিয়মকানুন তৈরি করে দেবেন।
উপাচার্য রঞ্জনবাবু জানান, “এক সময় এই দূরশিক্ষা বিভাগের ভীষণ সুনাম ছিল। বর্তমানে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে তা চালু হয়ে যাওয়ায় কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে। আমরা আবার তা ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী।” এই বিভাগে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়, তার সঠিক হিসাব রাখা, নিয়মিত সরকার স্বীকৃত সংস্থাকে দিয়ে অডিট করানো ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নিয়মকানুনের আওতায় তাকে ঢুকিয়ে দিতেই এই উদ্যোগ বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে। ইতিমধ্যেই এই বিভাগে দু’জন অতিরিক্ত ডিরেক্টর নিয়োগ করা হয়েছে। এ বার পূর্ণ সময়ের ডিরেক্টর নিয়োগ ছাড়াও নিয়মটি তৈরি হয়ে গেলে বিভাগটি আরও গতি পাবে বলেই উপাচার্যের অভিমত।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ঠিকাদারের তালিকা তৈরি। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এতদিন কর্তৃপক্ষের খুশি মতো ঠিকাদারদের দিয়ে কাজ করানো হত। এ ক্ষেত্রে নানা সময়ে নানা অভিযোগও এসেছে। তাই এ বার ঠিকাদারদের তালিকা তৈরি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ১০ হাজার টাকার বেশি কেনাকাটা হলেই তার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হবে বলেই উপাচার্য জানান। ১০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কাজ বা কেনাকাটা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকাভুক্ত ঠিকাদারদের দিয়েই করানো হবে। তার থেকে বেশি অঙ্কের হলেই তার জন্য বহুল প্রচার করা হবে। সে ক্ষেত্রে যে কোনও ঠিকাদার তাতে অংশ নিতে পারবেন। উপযুক্ত নথি দেখেই ঠিকাদারদের তালিকাভুক্ত করা হবে বলেও উপাচার্য জানান।
এ বার ৭৫০ কেভি করে দু’টি সাব স্টেশন তৈরি করা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। আগে দু’টি ২৫০ কেভি সাবস্টেশন ছিল। যা দিয়ে কাজ চালানো কঠিন হয়ে পড়ছিল। তারই সঙ্গে ২টি জেনারেটরও কেনা হবে। যাতে ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোর সমস্যা না হয় সে জন্য পদক্ষেপ। ছাত্রদের জন্য হস্টেলের কাজও প্রায় শেষের পথে। দ্রুত হস্টেলটি চালু করার জন্যও পদক্ষেপ করা হবে বলে উপাচার্য জানান। উপাচার্যের কথায়, “বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামো উন্নয়নে সব ধরনের পদক্ষেপ করা হচ্ছে।” |
|
|
|
|
|