নন্দীগ্রাম-কাণ্ডে দোষীদের শাস্তির দাবিতে এ বার দিল্লি গিয়ে ধর্নায় বসবে ‘ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি’। নন্দীগ্রামের জনতা এবং ‘শহিদ’ পরিবারগুলির প্রতিনিধিদের সাক্ষী রেখে সোমবার কলকাতায় দাঁড়িয়ে বিচার চাইতে দিল্লিতে দরবার করার ‘চ্যালেঞ্জ’ ঘোষণা করলেন তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। তাঁকে সমর্থন করেই তৃণমূলের মহাসচিব তথা রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হুঁশিয়ারি, “শাসকের পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু অনেকেই এখনও ভিতরে বসে রয়েছে, যারা কলকাঠি নাড়িয়ে বিচারের উদ্যোগকে বিলম্বিত করতে চায়!” শিল্পমন্ত্রীর ইঙ্গিত রাজ্য প্রশাসনের একাংশের দিকেই!
বস্তুত, প্রতিরোধ কমিটিকে সামনে রেখে নন্দীগ্রামে ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ পুলিশের গুলি চালনার ঘটনায় অভিযুক্ত অফিসারদের শাস্তির দাবিতে যে আন্দোলন শুভেন্দুরা শুরু করেছেন, প্রকৃত অর্থে তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের পক্ষে অস্বস্তিকর। কারণ, ওই ঘটনায় অভিযুক্ত হিসাবে যে সব পুলিশ-কর্তার কথা প্রতিরোধ কমিটির নেতারা বলছেন, তাঁরা তৃণমূলের জমানাতেই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন। সেই অস্বস্তি আড়াল করতেই এ বার নন্দীগ্রামের বিচার পাওয়ার দাবিকে কেন্দ্র-বিরোধী আন্দোলনের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার কৌশল নেওয়া হচ্ছে বলে তৃণমূলেরই একাংশের ব্যাখ্যা। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে প্রতিরোধ কমিটির মঞ্চে হাজির হয়ে এ দিন সেই আন্দোলনেই সিলমোহর দিয়ে এসেছেন পার্থবাবু। আর্থিক প্রশ্নে দিল্লির সঙ্গে রাজ্য সরকারের যে টানাপোড়েন চলছে, তাতে এই আন্দোলন বাড়তি মাত্রা যোগ করবে বলেও মনে করা হচ্ছে।
বিধাননগরে ইন্দিরা ভবনের গায়ে সিবিআইয়ের আঞ্চলিক দফতরের সামনে সামিয়ানা বেঁধে জমায়েত করেছিল প্রতিরোধ কমিটি। পার্থ-শুভেন্দু ছাড়াও মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সাংসদ শিশির অধিকারী, বিধায়ক দিব্যেন্দু অধিকারী, রণজিৎ মণ্ডল, সমরেশ দাস, সব্যসাচী দত্ত এবং আবু তাহের, শেখ সুফিয়ান, মানব বেরা, নন্দ পাত্র, ভবানী দাস-সহ প্রতিরোধ কমিটির নেতারা। ভিড়ও হয়েছিল ভালই। নন্দীগ্রামের বিধায়ক তথা ‘শহিদ-জননী’ (ছেলে ইমদাদুলের মৃত্যু হয়েছিল ১৪ মার্চের গুলিতে) ফিরোজা বিবি বলেন বিক্ষোভ-অবস্থানে বলেন, “ক্ষতিপূরণের ৫ লক্ষ টাকা পেয়েছি। কিন্তু টাকা সব নয়। বিচার চাই। সিবিআই হয়তো ভাবছে, নন্দীগ্রামের মা-স্ত্রীদের মুখ টাকা দিয়ে বন্ধ করা যাবে! কিন্তু তা হবে না। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী, প্রাক্তন সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠ-সহ সিপিএমের দোষী নেতা-কর্মী এবং পুলিশ অফিসারদের শাস্তি চাই।”
ফিরোজার নেতৃত্বেই ১৪ মার্চের নিহত পরিবারগুলির প্রতিনিধিরা সিবিআইয়ের আঞ্চলিক দফতরে গিয়েছিলেন সে দিনের ঘটনার তদন্ত শেষ করে চার্জশিট পেশের দাবি জানাতে। সুপ্রিম কোর্ট থেকে রাজ্য সরকার মামলা তুলে নেওয়ায় হাইকোর্টের পুরনো নির্দেশ কার্যকর করতে কোনও বাধা নেই বলে তাঁদের যুক্তি। ফিরে এসে তাঁরা দাবি করেন, সিবিআইয়ের আঞ্চলিক কর্তারা বলেছেন বিষয়টি দিল্লির কেন্দ্রীয় দফতর দেখছে। এই সূত্রেই শুভেন্দু ঘোষণা করেন, “যাঁরা সিবিআই দফতরে গিয়েছিলেন, তাঁদের দিল্লি দেখানো হয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ তা হলে স্বীকার করলাম! দিল্লিতে যন্তর মন্তর বা রামলীলা ময়দানে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসব! সিবিআই অধিকর্তাকে বাধ্য করব। রাজ্যের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রসচিব, মুখ্য সচিব, ডিজি, এডিজি (আইনশৃঙ্খলা)-কে ক্ষমা করবে না নন্দীগ্রামের মানুষ!” নন্দীগ্রামে ১ মে সমাবেশ করে দিল্লি যাত্রার তারিখ ঘোষণা করা হবে।
প্রসঙ্গত, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের অদূরে মাইক বাজিয়ে এ দিনের সভা করা নিয়ে অভিযোগ করেছেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের একাংশ। যার প্রেক্ষিতে সাংসদ শুভেন্দুর বক্তব্য, “মাইক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা ছিল ৬ এপ্রিল পর্যন্ত। সেই জন্য আমরা ৮ তারিখ সভা করছি। সভার জন্য পুলিশের এবং মাইক ব্যবহারের অনুমতি মহকুমাশাসকের কাছ থেকে নিয়েছি। এর পরেও মাইক নিয়ে কোনও অভিযোগ থাকলে মহকুমাশাসককে বলতে হবে।”
|