দীর্ঘসূত্রতা? চূড়ান্ত অপেশাদারিত্ব? না কি অকর্মণ্য প্রশাসন?
নির্ধারিত দিনের দু’দিন পরে এআইএফএফ অফিসে গেল আইএফএ থেকে পাঠানো নথিপত্র-সহ আবেদন পত্র। আর তার জেরেই এএফসি ‘এ’ লাইসেন্স করার স্বপ্ন ভেঙে গিয়েছে দেশের তিন প্রাক্তন ফুটবলারের। এক জন আবার মেয়ে।
তাঁরা কারা? বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য। অচিন্ত্য বেলেল। কুন্তলা ঘোষ দস্তিদার। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তিন জনই খেলেছেন চুটিয়ে। প্রথম দু’জন আবার মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের দাপুটে সদস্য ছিলেন তাঁদের ফুটবল জীবনে। সাঙ্গ করেছেন এএফসি ‘বি’ লাইসেন্স-ও। চলতি বছরে ‘এ’ লাইসেন্স করার জন্য আইএফএ-তে আবেদনও করেছিলেন নির্ধারিত সময়ের (৮ মার্চ, ২০১৩) মধ্যেই। কিন্তু আইএফএ থেকে তিন ফুটবলারের আবেদন দিল্লির ফুটবল হাউস-এ গিয়েছে ১১ মার্চ! ফলে স্রেফ দেরিতে আসার কারণেই বাতিল হয়ে গিয়েছে তিন জাতীয় ফুটবলারের ‘স্লট’। আইএফএ-র এই চূড়ান্ত অপেশাদার মনোভাবে স্পষ্টতই হতাশ বিশ্বজিৎ, অচিন্ত্য, কুন্তলাদের প্রশ্ন, “এ ভাবে চললে বাংলা থেকে ‘এ’ লাইসেন্স কোচ উঠবে কী ভাবে?”
এখানেই শেষ নয়। মধ্য কলকাতার সুতারকিন স্ট্রিট থেকে নয়া দিল্লির দ্বারকায় অবস্থিত ফুটবল হাউস। আইএফএ অফিস থেকে এআইএফএফ দফতর। ১৪৬১ কিলোমিটার যাত্রাপথের মাঝ রাস্তা থেকে উধাও যাঁরা প্রো-লাইসেন্স করতে চেয়েছেন তাঁদের যাবতীয় নথিপত্র-সহ আবেদনপত্র। তাতে আটকে গিয়েছে প্রো-লাইসেন্স প্রক্রিয়াও। আইএফএ সচিব উৎপল গঙ্গোপাধ্যায় স্বীকার করে নিয়েও অবশ্য বললেন, “প্রথম ক্ষেত্রে আবেদন দেরি করে গিয়েছে। আর দ্বিতীয় ক্ষেত্রে কাগজপত্র মাঝরাস্তায় উধাও হয়েছে। আমাদের কাছে রসিদ আছে। ফেডারেশন সচিবকে অনুরোধ করেছি যাতে আবেদনকারীদের ভবিষ্যৎ নষ্ট না হয়। আশা করি তিনি অনুরোধ রাখবেন।”
অন্য দিকে, ফেডারেশনের অ্যাকাডেমি এবং কোচিং বিভাগের প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত পুষ্পার্ঘ্য চট্টোপাধ্যায় বললেন, “দেরির জন্যই এএফসি-র নিয়ম মেনে বাতিল হয়েছে তিন ফুটবলারের আবেদন।” ফেডারেশন সূত্রে খবর, ‘এ’ লাইসেন্স করার জন্য ইতিমধ্যেই স্ট্যান্ডবাই রয়েছেন ছ’জন। আগামী সোমবার থেকে শুরু হতে চলা ‘এ’ লাইসেন্স কোর্সে বিশ্বজিৎদের অন্তর্ভুক্তি কী ভাবে হবে, উৎপলবাবুর অনুরোধ কী ভাবে রাখবেন ফেডারেশন সচিব তা বোধগম্য নয় ফুটবল মহলের।
হতাশ কুন্তলা বলছিলেন, “সুযোগ এসেও চলে গেল। জানি না কী হবে?” ছ’ বছর ধরে ‘বি’ লাইসেন্স করে বসে থাকা হতাশ অচিন্ত্যর প্রতিক্রিয়া, “আট তারিখে যদি শেষ দিন হয় তা হলে আইএফএ সে দিন কেন তা পাঠাবে? আগে পাঠাল না কেন? আর সে দিন তো হার্ড কপি গিয়েছে। ই-মেল বা ফ্যাক্স করা হয়নি?” আর বিশ্বজিতের আক্ষেপ, “বলে আর কী হবে? বাংলার যা ক্ষতি হওয়ার তা হচ্ছে। সঙ্গে আমাদেরও।”
বাংলা থেকে এই তিন ফুটবলার সুযোগ না পেলেও ক্লাবের তরফে আবেদন করে এ বার ‘এ’ লাইসেন্স করছেন হেমন্ত ডোরা, গৌতম ঘোষরা। ফেডারেশন সচিবকে আবেদনের ভিত্তিতে সুযোগ মিলেছে সাব্বির আলিরও। তাঁরাও বলছেন, বিশ্বজিৎ, অচিন্ত্যদের দুর্ভাগ্য। গাফিলতি না করেও ওদের বঞ্চিত হতে হল। |