কথায় আছে, কারও পৌষ মাস তো, কারও সর্বনাশ!
কলকাতার চলতি তাপপ্রবাহের সৌজন্যে মঙ্গলবারের এএফসি কাপ ম্যাচে স্বভাবতই পৌষ মাস ঘরের দল ইস্টবেঙ্গলের। সর্বনাশ সিঙ্গাপুর আগত ট্যাম্পাইন রোভার্সের!
কিছু দিন আগেও আই লিগের ম্যাচগুলো গরমের মধ্যে ভরদুপুরে খেলতে হচ্ছিল বলে সবচেয়ে বেশি সরব হয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ মর্গ্যান-ই। কিন্তু ট্যাম্পাইন রোভার্সের বিরুদ্ধে নামার আগে সাহেব কোচের ‘আসল’ অস্ত্র কলকাতার গরম-ই!
শহরের তাপমাত্রার পারদ আপাতত চল্লিশের আশেপাশে ঘোরাফেরা করছে। দুপুরে রাস্তাঘাটে চলাফেরা করাটাই দুঃসহ। অথচ সেই ভরদুপুরে যুবভারতীর কৃত্রিম ঘাসের মাঠে নব্বই মিনিট ফুটবল খেলতে হবে সিঙ্গাপুরের দলটিকে। এহেন পরিবেশে খেলতে অভ্যস্ত নয় ট্যাম্পাইন। স্বভাবতই কলকাতায় এসে কাহিল হয়ে পড়েছেন তাদের ফুটবলাররা। যে কারণে ম্যাচের আগের দিন জার্সি ছাড়াই অনুশীলন করতে দেখা গেল সিঙ্গাপুরের দলটির বেশ কিছু প্লেয়ারকে। তা সত্ত্বেও প্র্যাক্টিস চলাকালীন বার বার মাঠে বসে পড়ছিলেন তাঁরা। দেড় ঘণ্টার অনুশীলনে দু’বার ‘ড্রিংঙ্ক’স ব্রেক’ও নিতে বাধ্য হন বিদেশি ক্লাবের কোচ নিনাদ বাসিনা। |
অনুশীলনের পর লাল-হলুদ কোচ মর্গ্যানও অবশ্য বলছিলেন, “এই গরমে দুপুরে খেলাটা সত্যিই সমস্যার। আমার ছেলেরা তো অভ্যস্ত। কিন্তু এই গরমে নব্বই মিনিট দৌড়নো সমস্যা হবে ট্যাম্পাইন রোভার্সের।” চিডি-মেহতাবও কোচের সঙ্গে একমত। যুবভারতী ছাড়ার আগে ইস্টবেঙ্গলের নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকার বললেন, “সিঙ্গাপুরে মোটেই এ রকম গরম নেই। দুপুরে ম্যাচ হওয়ায় ওদের সমস্যা হবে। এটা অবশ্যই আমাদের কাছে প্লাস পয়েন্ট।” মেহতাবও বললেন, “এই গরমই হয়তো এই ম্যাচে আমাদের শাপে বর হবে।”
গরমের জন্যই ম্যাচের আগের দিন সকালেও মাত্র ঘণ্টাখানেক অনুশীলন করেছে ইস্টবেঙ্গল। অল্প সময়ের মধ্যেই অবশ্য পাসিং-ফুটবল আর রক্ষণ ও মাঝমাঠের বোঝাপড়া বাড়ানোর উপর জোর দিতে দেখা গেল মর্গ্যানকে। ইস্টবেঙ্গলের অনুশীলন দেখে মনে হল, নিজেদের মধ্যে ছোট ছোট পাস খেলে আক্রমণে ওঠা স্ট্র্যাটেজি হবে ওপারা, পেনদের।
উল্টো দিকে মর্গ্যানের স্ট্র্যাটেজিকে কুপোকাত করার গেমপ্ল্যান তৈরির প্রাণপণ চেষ্টায় ট্যাম্পাইন রোভার্সের কোচও। ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণ আর স্ট্রাইকিং ফোর্সের সঙ্গে মেহতাব, পেনদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে পালটা আক্রমণে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে নিনাদ বাসিনার। সিঙ্গাপুরের দলটির অধিনায়ক ফকরুদ্দিন মুস্তাফিক তো বলেই দিলেন, “ইস্টবেঙ্গলের মাঝমাঠ খুব শক্তিশালী। ওদের মিডফিল্ডারদের উপর আমাদের বাড়তি নজর দিতেই হবে।” গত সপ্তাহেই ঘরের মাঠে ইস্টবেঙ্গলের কাছে চার গোল হজম করতে হয়েছে সিঙ্গাপুরের দলটিকে। তা সত্ত্বেও সেই ম্যাচে জোড়া গোল করে লাল-হলুদের জয়ের নায়ক বরিসিচ আর দলের এক নম্বর স্ট্রাইকার চিডিকে আটকানোর জন্য আলাদা কোনও স্ট্র্যাটেজি থাকছে না ট্যাম্পাইন রোভার্সের!
শহরের কাঠফাটা গরমের পাশাপাশি যুবভারতীর মাঠও ট্যাম্পাইন রোভার্সের সমস্যার তালিকায় উপরের দিকে রয়েছে। তাদের কোচ সোমবার সাংবাদিক সম্মেলনে বলেও দিলেন, “সিঙ্গাপুরে জালান বাসার স্টেডিয়ামের কৃত্রিম ঘাসের মাঠে খেলতে আমার দলের ফুটবলাররা অভ্যস্ত। কিন্তু এখানকার মাঠটার কৃত্রিম টার্ফ জালান বাসারের থেকে বেশ খারাপ।” এমনকী ইস্টবেঙ্গল ফুটবলাররাও বলছেন, আইপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর যুবভারতীর মাঠের দশা আরও খারাপ হয়েছে। খাবড়া তো পরিষ্কার বলে দিলেন, “কৃত্রিম ঘাসের মাঠ কোথাও কোথাও উঁচু-নিচুু হয়ে রয়েছে। অসমান বাউন্সের কারণে বল কন্ট্রোল করা খুব কঠিন, আর এই মাঠে যে কোনও সময়ে ফুটবলারদের চোট লাগতেও পারে।” চিডিও বললেন, “মাঠের দশা আগের চেয়েও খারাপ হয়েছে। খেলতে সমস্যা হচ্ছে।”
যদিও প্রতিপক্ষকে আগের ম্যাচে চার গোল দেওয়ায় লাল-হলুদ শিবিরের আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে। কিন্তু পরের মরসুমে মর্গ্যানের ক্লাব ছাড়ার প্রসঙ্গ কোনও ভাবে কি মঙ্গলবারের খেলায় প্রভাব ফেলবে? চিডিদের কোচ অবশ্য দাবি করলেন, “আমার টিমের ফুটবলাররা প্রত্যেকেই পেশাদার। এই ঘটনা কোনও ভাবেই ওদের খেলায় প্রভাব ফেলবে না।”
|
মঙ্গলবারে এএফসি কাপ
ইস্টবেঙ্গল: ট্যাম্পাইন রোভার্স সিঙ্গাপুর
(যুবভারতী, ৩.১৫)। |