|
|
|
|
ডেবরা-সবং রাস্তা মেরামত |
পড়ে বরাদ্দ টাকা, থমকে কাজ ‘তাপ্পি’ মারার আশ্বাস পূর্তমন্ত্রীর |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা ও মেদিনীপুর |
কাজে গতি না থাকার অভিযোগে ডেবরা-সবং রাস্তা সংস্কার ও তৈরি প্রকল্পের কাজ থেকে রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন সংস্থাকেই সরিয়ে দিল রাজ্যের পূর্ত দফতর। বর্ষার আগে পশ্চিম মেদিনীপুরের এই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার কাজ শুরু না-হওয়ায় তাঁদের দুর্ভোগ বাড়বে বলে মনে করছেন এলাকার বাসিন্দারা।
পশ্চিম মেদিনীপুরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোর মধ্যে ডেবরা-সবং অন্যতম। দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটি বেহাল। খানাখন্দে ভরা রাস্তার উপর ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করে। এই রাস্তা তৈরিতে প্রযুক্তিগত ত্রুটি ছিল বলেও অভিযোগ। ফলে একটু দ্রুত গতিতে গাড়ি চালালেই গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ রাখা কঠিন হয়। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। গত বছর এই রাস্তা সংস্কারের পাশাপাশি তিনটি সেতু তৈরির জন্য ১০৪ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। কেন্দ্রীয় সড়ক তহবিল থেকে এই টাকা বরাদ্দ করা হয়। |
|
রাস্তার অবস্থা। |
ডেবরা, পিংলা, সবংএই তিনটি ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকার উপর দিয়ে চলে গিয়েছে ২৬.৮ কিলোমিটার এই রাস্তাটি। এক পাশে রয়েছে খড়্গপুর ২ নম্বর ব্লক, নারায়ণগড়। অন্য দিকে, পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুর। বাড়জীবন, ফতেপুর ও গোদাবাজারএই তিনটি জায়গায় সেতু তৈরি হবে। ৭ মিটার চওড়া রাস্তা তৈরি হবে। পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘা, পটাশপুর রুটের বাস ছাড়াও রাস্তা দিয়ে ছোট বড় মালবোঝাই গাড়িও চলাচল করে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, অর্থ বরাদ্দ হওয়ার পর গত অক্টোবরে রাজ্য সরকার নিয়ন্ত্রণাধীন সংস্থাটিকে কাজের দায়িত্ব দেয় পূর্ত দফতর। ওই সংস্থা আবার আরও কয়েকটি ঠিকা-সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করে। বিভিন্ন জায়গায় মোরাম ফেলা হয়। মাটি কাটা হয়। তবে এটুকুই। অন্য দিকে, রাস্তার কাজ নিয়ে পূর্ত দফতরের কাছেও নানা অভিযোগ আসতে থাকে। পরিস্থিতি দেখে দফতরের মধ্যে চিঠি চালাচালি শুরু হয়। শেষমেশ ওই সংস্থাকে কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। গত ২২ মার্চ সংস্থাকে কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর ফলেই প্রশ্নের মুখে পড়েছে ডেবরা-সবং রাস্তা তৈরি প্রকল্পের ভবিষ্যত। ঠিক ছিল, ২০১৪ সালের অক্টোবরের মধ্যে কাজ শেষ হবে। এখন তা অসম্ভব। এই নিয়ে সংশয়ও তৈরি হয়েছে বিভিন্ন মহলে।
প্রকল্পের কাজ হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সবংয়ের বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার আক্ষেপ, “প্রায় তিন বছরের চেষ্টায় কেন্দ্রের কাছ থেকে এই প্রকল্পের জন্য টাকা বরাদ্দ করানো গিয়েছে। গত বছর এই টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। কিন্তু কাজের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।” |
|
বরাদ্দের পরিমাণ। |
পূর্তমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষ দস্তিদারও নিশ্চিত করে সময়সীমা জানাতে পারেননি। কারণ কবে কাজ শুরু হবে তা এখনও নিশ্চিত নয়। তাঁর কথায়, “এক সপ্তাহের প্রকল্পের জন্য নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হবে।” কিন্তু রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন সংস্থাটিকে বাদ দেওয়ার কারণ সম্পর্কে পূর্তমন্ত্রীর জবাব, “কাজের গতি সন্তোষজনক নয় (‘নন পারফরম্যান্স’)।” তবে সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর শান্তনু সেন পাল্টা বলেন, “আমরা হতবাক! আমাদের কী অপরাধ জানি না। আমরা সরকারের কাছে চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছি, আমাদের হাত থেকে কাজ নিয়ে নেওয়া হল কেন?” তিনি জানান, গত অক্টোবর মাসে পূর্ত দফতর প্রকল্পের দায়িত্ব দেওয়ার পরে তাঁদের সংস্থার পক্ষ থেকে সার্ভের কাজ, মাটি ভরাটের কাজ করা হয়েছে। এর জন্য ইতিমধ্যে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা খরচও হয়েছে। সরকারি এক সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ত দফতরের আধিকারিক ও ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবেই এই প্রকল্পের গতি থমকে গিয়েছে। পূর্তমন্ত্রী অবশ্য এই অভিযোগকে আমল দেননি। তাঁর মতে, সরকরি নিয়ন্ত্রণাধীন সংস্থাটির পুর্নগঠনের প্রয়োজন রয়েছে।
জেলা পরিষদের সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “ওই রাস্তাটি গুরুত্বপূর্ণ। বাস-লরি চলাচল করে। সরকারের উচিত, দ্রুত পদক্ষেপ করা।” পূর্তমন্ত্রী অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, বর্ষার আগেই রাস্তার খানাখন্দ ‘তাপ্পি মারার কাজ’ শেষ করে ফেলা হবে। |
ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল। |
|
|
|
|
|