জঙ্গলমহলে অবরোধ-আন্দোলন পর্বে প্রচুর গাছ কাটা পড়েছিল। সেই পরিস্থিতি আর নেই। তবে এখনও জঙ্গলমহলে গাছ কাটা চলছে। এ ক্ষেত্রে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীর সঙ্গে বন দফতরের একাংশ হাত মিলিয়েছে বলে অভিযোগ। তাই বন দফতরে জানালেও সুরাহা হচ্ছে না।
বন দফতরের কর্মী-আধিকারিকদের মদতের বিষয়টি জোরালো হয়েছে সিআরপি-র সাম্প্রতিক এক চিঠি ঘিরে। ওই চিঠিতে ইঙ্গিত রয়েছে, ধেড়ুয়ার বিট অফিসার জগবন্ধু মাহাতোর মদতে গাছ কাটা চলছে। অথচ, তাঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেনি বন দফতর।
প্রশাসন সূত্রে খবর, ঘটনাটি গত ৩ মার্চের। ওই দিন সকালে মেদিনীপুর কোতয়ালি থানার বাঘঘোরা ও সংলগ্ন এলাকায় নজরদারি চালাচ্ছিল সিআরপি। তখনই জওয়ানদের নজরে আসে, কিছু শাল গাছ কাটা অবস্থা। পড়ে রয়েছে। দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, ধেড়ুয়ার বিট অফিসার জগবন্ধু মাহাতোই গাছ কাটার অনুমতি দিয়েছিলেন। অথচ, ওই দিন বাঘঘোরায় গাছ কাটার কোনও অনুমতি বন দফতর দেয়নি। গ্রামবাসীর বক্তব্য, কাঠ পাচারের উদ্দেশে বিট অফিসার বেআইনি ভাবে গাছ কাটার মৌখিক অনুমতি দিয়েছিলেন। উদ্ধার হওয়া কাঠ বন দফতরকে দিয়ে দেয় সিআরপি। সেই সঙ্গে সিআরপির ৫০ নম্বর ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার অজিত তিওয়ারি পুরো বিষয়টি লিখিত ভাবে বন দফতরকে জানান। আগেও জগবন্ধুবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। কখনও অভিযোগ করেছেন গ্রামবাসী, কখনও অভিযোগ এসেছে বন দফতরের অন্দর থেকেই। ‘ফরেস্ট ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি’ (এফডিএ) তহবিলের টাকা তছরূপেরও অভিযোগ রয়েছে ওই বিট অফিসারের বিরুদ্ধে। |
বারবার অভিযোগ ওঠা সত্ত্বেও কেন পদক্ষেপ করা হয়নি? সদুত্তর দিতে পারেননি মেদিনীপুরের ডিএফও আশিস সামন্ত। তিনি শুধু বলেন, “বিষয়টি দেখছি।” আর তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ উড়িয়ে জগবন্ধুবাবুর বক্তব্য, “কর্মী সংখ্যা কম। তাই হয়তো জঙ্গল ঠিক ভাবে রক্ষা করতে পারছি না। তবে সব রকম ভাবে চেষ্টা করছি।” গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে অবশ্য জানা যাচ্ছে, নতুন করে কাঠ চোরাকারবারিদের সক্রিয়তা বেড়েছে। ব্যবসায়ীদের ও বন দফতরের একাংশ কর্মীর অসাধু যোগসাজশে সবুজ ধ্বংস হচ্ছে। প্রাক্তন মন্ত্রী তথা এ জেলারই কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়ারও অভিযোগ, “শুধু জঙ্গলের গাছই নয়, পঞ্চায়েত এলাকার গাছও কাটা হচ্ছে। কেউ দেখার নেই।” পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা অবশ্য দাবি করেন, “এখন আর গাছ কাটা পড়ে না। পরিস্থিতি পাল্টেছে। আমাদের সরকার নতুন গাছ লাগানোর উপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছে।” অভিযোগের প্রেক্ষিতে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বন দফতর কড়া পদক্ষেপ করে বলেও জানিয়েছেন সুকুমারবাবু।
এ ক্ষেত্রে যৌথ বাহিনীর ভূমিকাটা ঠিক কী? সিআরপি-র ৫০ নম্বর ব্যাটালিয়নের কমান্ডান্ট শঙ্করলাল সেনগুপ্তের কথায়, “এ ক্ষেত্রে সরাসরি আমরা কিছু করতে পারি না। কাঠ পাচার রুখতে নজরদারি চালানোর কাজ বন দফতরের। তবে দফতর যদি আমাদের সহযোগিতা চায়, আমরা করি।” একই বক্তব্য পুলিশের। জেলা পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরীর কথায়, “বন দফতর আমাদের সাহায্য চাইলে আমরা সাহায্য করি। তল্লাশি চালানো হয়।” বন দফতরের বক্তব্য, পরিস্থিতি আগের থেকে অনেকটাই বদলেছে। এখন গ্রামবাসী এ গিয়ে এসে অবৈধ কাঠ পাচার রুখছেন। |