|
|
|
|
দায়ী পশ্চিমী ঝঞ্ঝা |
অকাল তুষারপাত উত্তর সিকিমে |
অনির্বাণ রায় • শিলিগুড়ি |
পশ্চিমী ঝঞ্ঝার ‘খেয়ালেই’ গত শীতে সমতলের শিলিগুড়ি আর প্রায় ৬ হাজার ফুট উচ্চতার গ্যাংটকের তাপমাত্রা একই জায়গায় ছিল। এখন গ্রীষ্মের শুরুতেই উত্তরবঙ্গ-দক্ষিণবঙ্গ তাপমাত্রা বাড়তে থাকলেও পাহাড়ে নতুন করে তুষারপাত শুরু হয়েছে। শীতের তেমন তুষারপাত না হলেও মার্চের শেষ থেকে টানা তুষারপাত শুরু হয়েছে সিকিম জুড়ে। সাম্প্রতিক নজির ভেঙে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে তুষারপাত চলছে। আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, পশ্চিমী ঝঞ্ঝার খেয়ালে ‘অসময়ে’ তুষারপাত। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা যায়, ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহ বা মার্চের প্রথম সপ্তাহের পরে সিকিমে টানা তুষারপাতের মতো ঘটনা অন্তত সাম্প্রতিক অতীতের মধ্যে ঘটেনি।
উত্তর সিকিমের লাচেন, লাচুং থেকে শুরু করে পূর্ব সিকিমের ছাঙ্গু, নাথুলা, বাবা মন্দির এলাকায় তুষারপাত চলছে। গত শুক্রবার থেকে নতুুন করে টানা তুষারপাত শুরু হয়েছে লাচেন, ইয়ুমথাং, চুংথাঙ, গুরুদোংমার এলাকায়। টানা তুুষারপাতে গত রবিবার থেকে উত্তর সিকিমের বেশ কিছু এলাকায় যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রাস্তায় তুষার জমে থাকায় এই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে। মহকুমা পুলিশ আধিকারিক (উত্তর সিকিম) তাসি জেঙপো বলেন, “বহু রাস্তা বন্ধ হয়ে রয়েছে। প্রতিদিনই তুষারপাত হয়ে চলেছে, এই পরিস্থিতে পর্যটকরা যাতে কোথাও মাঝ রাস্তায় আটকে না পড়েন, সে কারণেই যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।”
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিমের এক আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, “সাধারণত মার্চ মাসের পরে সিকিমে আর তুষারপাত হয় না। এবার শীতের ভরা মরসুমে খুব বেশি তুষারপাত হয়নি, বিক্ষিপ্ত ভাবে পর পর তিন সপ্তাহে তুষারপাত হয়েছিল। অথচ বসন্ত শেষ হয়ে গ্রীষ্মের প্রথমে নতুন করে তুষারপাত শুরু হয়েছে ও টানা চলছে। এখনও পর্যন্ত পশ্চিমী ঝঞ্ঝার যা গতিবিধি তাতে সপ্তাহখানেক তুষারপাত চলতে পারে।”
কেন অকাল তুষারপাত? কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, জম্মু কাশ্মীর থেকে আসা একের পর এক পশ্চিমী ঝঞ্ঝাই সিকিমে টানা তুষার পাতের কারণ। ফেব্রুয়ারির পরে সিকিমের আকাশে পশ্চিমী ঝঞ্ঝার উপস্থিতি অস্বাভাবিক না হলেও চলতি বছরে যে ঝঞ্ঝাগুলি আসছে, সেগুলি শক্তিশালী হওয়ায় তুষারপাত অব্যাহত রয়েছে। কয়েক মাস আগে শীতের মরসুমে সিকিম, উত্তরবঙ্গের আকাশে আসা ঝঞ্ঝাগুলি অনেকটা ওপর দিয়ে চলে যায়। আবহাওয়া দফতরের মতে, নীতের দিকে নিম্নচাপ অক্ষরেখা তৈরি হলে সেই টানে ঝঞ্ঝা নীচে নেমে পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে তুষারপাত ঘটায়।
গত শীতের সময়ে ঝঞ্ঝাগুলি তেমন শক্তিশালী ছিল না, বঙ্গোপসাগরীয় এলাকাতেও নিম্নচাপ তৈরি হয়নি। এ বছরে মার্চ থেকে এ পর্যন্ত অম্তত ১০টি শক্তিশালী পশ্চিমী ঝঞ্ঝা এসে সিকিম পাহাড়ে ধাক্কা মেরেছে। সম্প্রতি যে ঝঞ্ঝাগুলি কাশ্মীর থেকে সিকিমে এসেছে, সেগুলি শক্তিশালী ও ঝঞ্ঝার গর্ভেই ঘূর্ণাবর্তের জন্ম হচ্ছে। সে জন্য সিকিমের উঁচু পাহাড়ে ঘূর্ণাবর্ত-সহ শক্তিশালী ঝঞ্ঝার ধাক্কায় তুষারপাত হয়েই চলছে। গোপীনাথবাবু বলেন, “ঝঞ্ঝাগুলি শক্তিশালী এবং ঘূর্ণাবর্তে ভরা। তাই তুষারপাতও অব্যাহত ।”
শীতের মরসুমের পরেও সিকিমে তুষারপাত চলতে থাকায় স্বাভাবিক ভাবে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। ধসের কারণে সপ্তাহখানেক আগে উত্তর সিকিম বিপর্যস্ত হলেও, তুষারপাতের খবরে পর্যটকদের আসার বিরাম নেই উত্তর সিকিমে। তুষারপাতের কারণে পর্যটক টানাতে পাল্লা দিচ্ছে পূর্ব সিকিমে। আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে এবছরের শুরু থেকেই উত্তরবঙ্গ এবং সিকিমের আকাশে একের পর এক পশ্চিমী ঝঞ্ঝার কারণে সমতলের তাপমাত্রা রেকর্ড কমে যায়। গত ১০ জানুয়ারি শিলিগুড়ি এবং সিকিমের রাজধানী গ্যাংটকের তাপমাত্রা একই সঙ্গে ৩ ডিগ্রিতে নেমে যায়। যা কিনা সাম্প্রতিক সময়ে রেকর্ড। |
|
|
|
|
|