অন্তত দু’শো কোটির লগ্নি প্রস্তাব আগাম পকেটে নিয়েই আজ এ রাজ্যে ব্র্যান্ড-গুজরাতের পর্দা তুলবেন নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী।
গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী সোমবার রাত্রে কলকাতায় পা রাখার আগেই এই বিনিয়োগের কথা ঘোষণা করে স্থানীয় এক শিল্প গোষ্ঠী। শিল্পমহলও মেনে নিচ্ছে, প্রকাশ্যে ঘোষণা না-করলেও একান্ত বৈঠকে ছোট-বড় এমন লগ্নি প্রস্তাব স্থানীয় শিল্পপতিদের কাছ থেকে আরও পাবেন তিনি। কিন্তু শিল্পমহলের মতে, এর পিছনে শুধু কোনও ব্যক্তির একক ক্যারিশমা বা জাদু নেই। বরং প্রায় প্রতি পায়ে শিল্পের মন পড়ার ক্ষমতা আর তা মাথায় রেখে দেওয়ার ঢালাও সুবিধাই চুম্বকের মতো বিনিয়োগকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে মোদীর গুজরাতে। ঠিক যা করতে না-পেরে আজ পশ্চিমবঙ্গের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গিয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা।
কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অন্য রাজ্যে আসবেন এবং সেখান থেকে লগ্নি প্রস্তাব পাবেন, এমন ঘটনা স্বাভাবিক। কিন্তু মোদীর পশ্চিমবঙ্গ সফর যে-কারণে বার বার আলাদা মাত্রা পাচ্ছে, তার অন্যতম কারণ সম্ভবত লগ্নিকারীদের আতস কাচে দুই রাজ্যের প্রায় দুই মেরুর ভাবমূর্তি। |
দিল্লিতে ফিকি লেডিজ অর্গানাইজেশনের মঞ্চে নরেন্দ্র মোদী। সোমবার। ছবি: পিটিআই |
শিল্পের অভিযোগ, এ রাজ্যে কোনও প্রকল্পের জন্য জমি পাওয়া দুষ্কর। খামতি রয়েছে পরিকাঠামোয়। ক্ষমতায় এসে বর্তমান সরকার কিছু পদক্ষেপ করলেও এখনও যে-কোনও প্রকল্পের সায় মেলে প্রায় শামুকের গতিতে। ফলে লগ্নির ঝুলি হাতে এ রাজ্যে কড়া নাড়া বিনিয়োগকারীর সংখ্যা তেমন বেশি নয়। তার উপর বাইরের বা স্থানীয় লগ্নিকারীরা যা-ও বা প্রস্তাব দিচ্ছেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা আটকে যাচ্ছে জমি জটে। নইলে চেপে বসছে লাল ফিতের ফাঁস।
অথচ এই প্রতিটি মাপকাঠিতেই শিল্পপতিদের কাছে দারুন নম্বর পায় মোদীর গুজরাত। শিল্পমহলের মতে, জমি পাওয়া থেকে প্রকল্পের অনুমতি লাভ পুরো প্রক্রিয়াই সেখানে অসম্ভব মসৃণ। নইলে সিঙ্গুরের মতো অত বড় মাপের প্রকল্প অত সহজে অত তাড়াতাড়ি সানন্দে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হত না বলেই তাদের দাবি। তাই এমন রাজ্যে বিনিয়োগ করার ‘লোভ’ সামলানো বেশ কঠিন বলে মেনে নিচ্ছেন শিল্পপতিরা।
বণিকসভার এক কর্তার মতে, “পরিকাঠামো, করছাড়, ব্যবসা শুরুর সরল ও দ্রুত প্রক্রিয়ার মতো একগুচ্ছ সুবিধা পেলে যে-কোনও রাজ্যেই লগ্নি করবে শিল্প।” জনৈক শিল্পপতি আবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন, “লগ্নিবিমুখ এক রাজ্যের শিল্পের কাছ থেকে ২০০ কোটির বিনিয়োগও কম নয়।” ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে তাঁর দাবি, “এ রাজ্যে সম্প্রসারণ করতে না-পেরে ক’বছর আগে গুজরাতে যাই। আখেরে তা লাভজনক হয়েছে।”
তবে শুধু ব্যবসা নয়। মোদীকে ঘিরে শিল্পমহলের প্রবল উৎসাহের আর এক বড় কারণ রাজনীতিও। উৎপাদন শিল্পের এক প্রতিনিধির মতে, জাতীয় রাজনীতিতে মোদীর গুরুত্ব যে-ভাবে বাড়ছে, তাতে তাঁর সঙ্গে গা-ঘেঁষাঘেঁষির সুযোগ শিল্পমহল ছাড়বে না, এটাই স্বাভাবিক।
|
এই সংক্রান্ত খবর
• খোলস ছেড়ে মাতালেন মহিলামহল
|