বিয়ের অনুষ্ঠানকে ঘিরে বাড়ি গমগম করছে। হঠাৎ পাশের খড়ের পালুই থেকে ছড়িয়ে পড়ল আগুন। পুড়ল খড়ের পালুই-সহ ৪টি বাড়ি। এখানেই শেষ নয়। সেই আগুন নেভাতে বেগ পেতে হল দলকলকর্মীদের। কার্যত যোগাযোগহীন দ্বীপের মতো বিচ্ছিন্ন মুরারই থানার খুটকাইল গ্রামে দমকলের পৌঁছতে সময় লাগল প্রায় দু’ঘণ্টা।
রামপুরহাট দমকল কেন্দ্রের অফিসার ইনচার্জ স্বপন দত্ত জানান, প্রায় তিনটে নাগাদ পাগলা নদীর পাড়ের এই গ্রামে আগুন লাগার খবর পেয়ে দু’টো ইঞ্জিন ও একটি জলের ট্যাঙ্কার নিয়ে রওনা দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “জানতাম ৫০ কিলোমিটার এই পথ যেতে মাঝে দু’টি রেলগেট পার করতে হয়। তার ওপর রয়েছে রাস্তার অবস্থা। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পৌঁছনোর চেষ্টা করি। কিন্তু ভীমপুর মোড়ে পৌঁছে জানতে পারি, বড় ইঞ্জিন নিয়ে ওই গ্রামে যাওয়ার রাস্তা নেই। তখন বড় ইঞ্জিনটি রামপুরহাটে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অথচ যেখানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, সেখানে জলকষ্ট আছে। তাই ছোট ইঞ্জিনটি নদীর উপরে তৈরি বালির রাস্তা দিয়ে কোনও ভাবে গ্রামে নিয়ে যাই। তার পরে পাগলা নদী থেকে জল নিয়ে গিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করা হয়।”
এলাকার বাসিন্দা নৈমুদ্দিন শেখ, দশরথ রবিদাস বলেন, “দীর্ঘ দিন ধরে নদীর উপর সেতুর দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু আজও কোনও কাজ হয়নি। অতিরিক্ত জেলাশাসকের (জেলা পরিষদ) কাছে সেতু নির্মাণের ব্যাপারে বলা হয়েছে। সেতুর অভাবে দমকলের গাড়ি গ্রামে ঢুকতে পারছে না। প্রশাসনের কবে হুঁশ ফিরবে জানি না।” জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) বিধান রায় বলেন, “সেতু নির্মাণের ব্যাপারে কোনও কথা যয়নি। বোল্ডার দিয়ে নদীর পাড় বাঁধানোর জন্য বলা হয়েছে।” এলাকাবাসীর দাবি, মুরারইয়ে একটি দমকলকেন্দ্র হলে ৫০ কিলোমিটার দূরে এই গ্রামে সহজে দমকলের গাড়ি পৌঁছতে পারবে। জেলাশাসক জগদীশ প্রসাদ মিনা বলেন, “অনেক জায়গাতেই সেতু তৈরির অনুমোদন মিলছে। মহকুমাশাসককে এই গ্রামের সেতুর জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে প্রস্তাব পাঠাতে বলব।” মহকুমাশাসক রত্নেশ্বর রায় বলেন, “আমরা খোঁজ নিয়ে দেখব কী ভাবে কী করা যায়।”
অন্য দিকে, সপ্তাহ খানেক আগে মুরারই থানার ধীতোড়া, কুলতোড়া, হরিণডোবা-- গ্রাম তিনটিতে আগুন লেগেছিল। এ দিন ওই সব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের কাছে যান রাজ্যের মন্ত্রী নুরে আলম চৌধুরী। তিনি অবশ্য খুটকাইল গ্রামে যাননি। মন্ত্রীর ফোন বন্ধ থাকায় এ ব্যাপারে কথা যায়নি।
গত সপ্তাহে জেলার বেশ কয়েকটি জায়গায় আগুন লেগে ২০০টিরও বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বাড়ি ক্ষতি হয়েছে ময়ূরেশ্বর থানা এলাকায়। এক দিনে ওই থানার দুই গ্রামের প্রায় ৮০টি বাড়ি পুড়ে গিয়েছিল। ঘটনার দিন সেখানেও দমকল দেরিতে পৌঁছনোয় ক্ষতির পরিমাণ বাড়ে। ওই দিনই ইলামবাজারের দ্বারন্দাতেও ৩০টি বাড়ি আগুনের গ্রাসে পড়েছিল। |