বিকল ট্রান্সফর্মার, ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী
ঘরে আলো নেই, জল নেই মাঠে
লাফিয়ে লাফিয়ে গরম বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে জলের চাহিদাও। এই অবস্থায় গত দিন পনেরো ধরে ট্রান্সফর্মার বিকল হয়ে পড়ায় শাক-সব্জি-সহ অন্যান্য ফসল নষ্টের মুখে। বারবার আবেদন জানিয়েও ট্রান্সফর্মার মেরামতি না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন নানুর থানার বড়া সাওতা পঞ্চায়েতের তিনটি গ্রামের বাসিন্দারা। বাগপাড়া,ফজিলাপুর ও দাতিনা গ্রামের বাসিন্দাদের ক্ষোভ, যতবারই আবেদন করা হয়, ততবারই এই পাল্টে দিছি, দেব করে কাটিয়ে দিচ্ছে বিদ্যুৎ দফতর।
পঞ্চায়েত ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ফজিলাপুর ডোম পাড়ায় থাকা ট্রান্সফর্মার থেকে বাগপাড়া, ফজিলাপুর ও দাতিনা গ্রামের আংশিক নিয়ে তিনটি গ্রামের ৬টি সাবমার্সিবল পাম্পে সংযোগ-সহ প্রায় ২৫০ বিঘে জমিতে সেচের ব্যাবস্থা হয়। এপিএল ও বিপিএল নিয়ে প্রায় শ-তিনেক বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। কিন্তু দিন পনেরো ধরে ওই ট্রান্সফর্মার বিকল থাকায় বাসিন্দাদের প্রাণ ওষ্ঠাগত। বাগপাড়ার কার্তিক সরকারের ৮ বিঘে জমি আছে। বিঘে দেড়েক জমিতে সব্জি লাগিয়েছেন, ১০ থেকে ১২ কাঠা জমিতে আখের চাষ, কিছু জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন।
গরমে দুর্ভোগ
সোমবার জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত ১৫ দিন ধরে বিদ্যুৎ না থাকায়
শুকিয়ে গিয়েছে ধানের জমি। গত ১৫ দিন ধরে বিকল হয়ে রয়েছে ট্রান্সফর্মার। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি।
তাঁর কথায়, “দিন পনেরো হল এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। তাপমাত্রা যে হারে বাডছে, জল না দিলে সব ফসল মাঠেই মারা পড়বে। তখন খাব কী?” তাঁর ক্ষোভ, “ট্রান্সফর্মার সারানোর জন্য বেশ কয়েক দিন ধরে আমরা বারে বারে সংশ্লিষ্ট দফতরে মৌখিক ও লিখিত জানিয়েছি। কিন্তু কোন সুরাহা হয়নি।”
ওই গ্রামের স্বপন সাহার একটি ৪০০ ওয়াটের সাবমার্সিবল পাম্প রয়েছে। ওই পাম্পের ওপর নির্ভরশীল ক্ষুদ্র, প্রান্তিক থেকে বড় চাষিরা। তিনি বলেন, “খেত মজুরি করাই হোক অথবা মুনিষ খাটা কোনও রকমে এক দু-বিঘে জমিতে কষ্ট করে যে চাষিরা ফসল লাগিয়েছেন তাঁদের অবস্থা একটু ভেবে দেখুন।” গ্রামের বিপদতারণ সাহা, বিশ্বজিৎ সরকার, শ্রীধর সাহারা কোনওরকম সেচের জল দিয়ে চাষবাস করবেন ভেবে মাঠে নেমেছেন। এই অবস্থায় বিদ্যুৎ না থাকলে যা হওয়ার কথা তাই হয়েছে।
দাতিনা গ্রামের অধরচন্দ্র কোঁয়ার, কঙ্কালি কোঁয়ারদের কথায়, “ফসল তো গেলই! বিদ্যুৎ না থাকায় ঘরে টেকা দায়। ঘরে-বাইরে এই পরিস্থিতিতে এক একটা দিন যে কী ভাবে কাটছে, তা ভগবানই জানেন।” বিপিএল পরিবারের শিশির সাহা, সনৎ সাহা, অজিত থান্দারদের অন্য অভিজ্ঞতা। তাঁদের কথায়, “সরকারি সাহায্যে বিদ্যুতের সংযোগ পেলাম। ভেবেছিলাম সপরিবারে আলোর মুখ দেখতে পাব। এখন যা অবস্থা সেই কেরোসিনের আলোই ভরসা।” এই হাঁসফাঁস গরমে সব রকম সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে একমাত্র বৃষ্টিই।
আর যাঁদের পাড়ায় ট্রান্সফরমার? ওই ফজিলাপুরের ইদু শেখ, কানু শেখ, কটা শেখরা বলেন, “কবে থেকে তিনটি গ্রামের মানুষের সমস্যা জানানো হয়েছে। কেউ শোনেই না। এমনকী স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রশাসনের মাধ্যমে বাসিন্দাদের কষ্টের কথা মৌখিক ও লিখিত বারে বারে জানানো হয়েছে দফতরে।” তাঁদের ক্ষোভ, “বিদ্যুৎ দফতরের বাবুদের বড্ড সময়ের অভাব। তাই আমরা যেমনটা ছিলাম তেমনই থেকে গিয়েছি। এখন আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া, এই তিন গ্রামের মানুষের উপায়ই বা কী আছে!”
সমস্যার কথা এক বাক্যে স্বীকার করে নিয়েছেন পঞ্চায়েত সদস্য থেকে পঞ্চায়েত প্রধান সকলেই। পঞ্চায়েত প্রধান কমলা কিঙ্কর ঘোষ বলেন, “বারে বারে আমি সংশ্লিষ্ট আধিকারিকের সঙ্গে কথাও বলেছি। কোনও অজ্ঞাত কারণে ওই এলাকায় বিকল ট্রান্সফর্মার বদলানো হছে না।” রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির কীর্ণাহার গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রের স্টেশন ম্যানেজার অর্ণব বড়ুয়ার আশ্বাস, “ট্রান্সফর্মারের জোগান ছিল না। তবে ব্যবস্থা করা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে ওই এলাকার সমস্যা মেটানো হবে।” তবে বিদ্যুৎ দফতরের দাবি, মাস দেড়েক আগে ওই এলাকায় নতুন ট্রান্সফর্মার দেওয়া হয়েছিল। সব গ্রাহক এক সঙ্গে পাম্প চালনোয় এই বিপত্তি। এ ছাড়াও জলস্তর নেমে যাওয়ায় বেশি ক্ষমতা সম্পন্ন পাম্প চালাচ্ছে গ্রাহকেরা। এর ফলে চাপ বাড়ছে। এক আধিকারিক জানান, খুব শীঘ্রই ওই এলাকায় বিকল্প হিসেবে আর একটি ট্রান্সফর্মার বসানোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে গ্রাহকেরা বকেয়া না মেটালে, বিকল্প ব্যবস্থা অথৈ জলে যাবে। বিদ্যুৎ দফতর আশার কথা যাই শোনান না কেন, রহমান শেখ ও নার্গিস বিবিরা শুধু আকাশের দিকে তাকিয়ে বৃষ্টির আশায় দিন গুনছেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.