জঙ্গিদের হাত থেকে বেঁচেছিলেন মার্গারেট, রক্ষা পাননি ইন্দিরা
ফাতটা ছিল মাস খানেকের। বিশ্বের দুই প্রান্তে জঙ্গিরা হামলা চালিয়েছিল দুই মহিলা প্রধানমন্ত্রীর উপরে। বেঁচে গিয়েছিলেন মার্গারেট থ্যাচার। বাঁচেননি ইন্দিরা গাঁধী। ইন্দিরার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাই নিজের পরিস্থিতির মিল খুঁজে পেয়েছিলেন থ্যাচার। ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রীর অন্ত্যেষ্টিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।
১৯৮৪ সালের ১২ অক্টোবর ব্রাইটনে চলছিল কনজারভেটিভ পার্টির সম্মেলন। রাত জেগে পরের দিনের বক্তৃতার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন থ্যাচার। হঠাৎ বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল তাঁর হোটেল। হামলার পিছনে ছিল জঙ্গি সংগঠন আইরিশ রিপাবলিকান আর্মি। থ্যাচার ও তাঁর স্বামী ডেনিস বেঁচে গেলেও নিহত হন কনজারভেটিভ পার্টির দুই এমপি-সহ পাঁচ জন। পার্টির সম্মেলন কিন্তু বাতিল হয়নি। থ্যাচার সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, জঙ্গিদের কাছে মাথা নত করার প্রশ্নই নেই। সোৎসাহে তাঁর বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছিলেন কনজারভেটিভ পার্টির সমর্থকরা।
অক্টোবর মাসে নিজের শিখ দেহরক্ষীদের হাতে ইন্দিরার খুন হওয়ার ঘটনা সত্যিই নাড়িয়ে দিয়েছিল থ্যাচারকে। দু’জনের মধ্যে মতপার্থক্য ছিল অনেক। বিদেশনীতিতে আমেরিকার চেয়ে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অনেক বেশি ঘনিষ্ঠ ছিল ইন্দিরা। আবার ব্রিটেনের বেশ কিছু এলাকায় প্রবাসী শিখ সম্প্রদায়ের মধ্যে খলিস্তানি জঙ্গিদের কার্যকলাপ নিয়ে সরব হয়েছিল ভারত।
মার্গারেট থ্যাচারের সঙ্গে ইন্দিরা গাঁধী। নয়াদিল্লিতে।—ফাইল চিত্র।
কিন্তু, ইন্দিরার মৃত্যুতে তুচ্ছ হয়ে গিয়েছিল সে সব মতপার্থক্য। দিল্লিতে এসে ইন্দিরা গাঁধীর মৃতদেহে মালা দেওয়ার পর থ্যাচার বলেছিলেন, “ইন্দিরার অভাব অনুভব করব।” অনেকের মতে, দৃঢ হাতে শাসন চালানোর বিষয়ে থ্যাচারের সঙ্গে কিছুটা মিলও ছিল ইন্দিরার। তাই তাঁদের মধ্যে ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব ছিল। ইন্দিরার মৃত্যুতে উল্লাসে মেতে উঠেছিল প্রবাসী শিখদের একটি অংশ। তাদের কড়া সমালোচনা করেছিলেন মার্গারেট থ্যাচার। বস্তুত তার পরেই পরিবর্তন এসেছিল ভারত-ব্রিটেন সম্পর্কে। ব্রিটেনে শিখ উগ্রপন্থীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছিল থ্যাচার সরকার। ইন্দিরার সঙ্গে আরও মিল ছিল থ্যাচারের। দু’জনেই অক্সফোর্ডের সমারভিল কলেজের প্রাক্তন ছাত্রী। দু’জনেই যুদ্ধের সময়ে উপযুক্ত নেতৃত্ব দিয়েছিলেন দেশকে। ইন্দিরা ১৯৭১ সালে ভারত-পাক যুদ্ধে, থ্যাচার ফকল্যান্ডসে যুদ্ধের সময়ে। পরে লন্ডনের ইন্ডিয়া হাউসে ইন্দিরার ব্রোঞ্জ মূর্তি উদ্বোধনে প্রধান অতিথি ছিলেন মার্গারেট।
বরাবরই মুক্ত অর্থনীতির সমর্থক থ্যাচার। তাই ভারতে মুক্ত অর্থনীতির হাওয়াকে স্বাগত জানিয়েছিলেন তিনি। ১৯৯৫ সালে রাজীব গাঁধী স্মারক বক্তৃতা দিতে এসে প্রশংসা করেছিলেন ভারতের বাজার খুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজীব, পি ভি নরসিংহ রাও ও মনমোহন সিংহের নেতৃত্বকে। সাফ জানিয়েছিলেন, অর্থনীতিতে অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণই ভারতকে এগোতে দেয়নি। এখন ফের মাথা তুলে দাঁড়াবে ভারত। কারণ, লাইসেন্স রাজ খতম হয়েছে। শুল্ক কমেছে। বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের উপরে নিয়ন্ত্রণ কমেছে। এক কথায়, মাথা তুলছে এক নতুন ভারত।
থ্যাচারের বেসরকারিকরণের ফলে লাভবান হয়েছিলেন এশীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশরাও। ব্রিটিশ গ্যাস, ব্রিটিশ পেট্রোলিয়ামের শেয়ার কিনেছিলেন অনেকে। থ্যাচারের সময়ে কনজারভেটিভ পার্টির ভারতীয় বংশোদ্ভূত ভোটারের সংখ্যা বেড়েছিল।
ইন্ডিয়া হাউস ছাড়াও হিন্দুজাদের দেওয়ালি উৎসব-সহ নানা ভারতীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিতেন থ্যাচার। মতপার্থক্য সত্ত্বেও তাঁর কাছে বরাবরই দেশ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল ভারত। তাঁর কথায় যে দেশ “স্থিতিশীল গণতন্ত্র”, যার আধ্যাত্মিক দিক অপরের উপকার করতে উদ্বুদ্ধ করে ভারতবাসীকে। কারণ থ্যাচারের বিশ্বাস ছিল, মূল্যবোধই হল দেশ বা সমাজের ভিত্তি। মূল্যবোধ কেবল নীতি নয়, মানুষের অনুপ্রেরণাও।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.