তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা আগেই জারি করেছে আবহাওয়া দফতর। সে কথা মাথায় রেখে নানা এলাকায় বেশ কিছু পদক্ষেপের কথা জানাল জেলা প্রশাসন। আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে জলকষ্ট যাতে বড় আকার না নেয়, দুই মহকুমাশাসক এবং বিডিও-দের সঙ্গে বৈঠক করে সে ব্যাপারে নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা।
আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা যায়, এ দিন জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের থেকে যা ২ ডিগ্রি বেশি। গত বছর তীব্র গরম চলাকালীন শিল্পাঞ্চলে ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছিল। |
সে কথা মাথায় রেখেই এ বার সতর্কবার্তা জারির সঙ্গে সঙ্গে নানা পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক। তিনি জানান, আসানসোল শিল্পাঞ্চলে প্রায় তিনশোটি গভীর নলকূপ খোঁড়া হয়েছে। কেলেজোড়া প্রকল্প থেকে জল সরবরাহ যাতে কোনও ভাবে বিঘ্নিত না হয়, পুর কর্তৃপক্ষকে তা দেখতে বলা হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের আধিকারিকদের ডেকে পাঠিয়ে অপেক্ষাকৃত শুষ্ক এলাকাগুলিতে টিউবওয়েল তৈরি করে জলের সমস্যা মেটানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যে সব এলাকায় পুকুর ও কুয়োয় জলস্তর নেমে বা শুকিয়ে গিয়েছে সেখানে ট্যাঙ্কে করে পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, রোগী ভর্তি ওয়ার্ডগুলিতে পর্যাপ্ত পাখা, কুলারের ব্যবস্থা রাখতে। লোডশেডিংয়ের সময়ে বিদ্যুত্ সরবরাহের ব্যবস্থা করার জন্য পর্যাপ্ত জেনারেটর লাগাতে বলা হয়েছে। জেলাশাসক বলেন, “এই সব কাজের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করা হয়েছে। টাকার অভাবে কোনও কাজ আটকাবে না।” |
উত্তুঙ্গ পারদের প্রাক-বৈশাখ। দুর্গাপুর, অন্ডাল ও আসানসোলে সোমবার দুপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র। |
এ ছাড়াও গরমে ছাত্রছাত্রীরা সমস্যায় পড়লে স্কুল কর্তৃপক্ষকে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আসানসোল মহকুমা হাসপাতালের সুপার নিখিলচন্দ্র দাস জানান, গরমে পথচলতি মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁদের চটজলদি মহকুমা হাসপাতালে এনে চিকিত্সার যাবতীয় ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পর্যাপ্ত স্যালাইন ও জীবনদায়ী ওষুধের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
গরমে ইতিমধ্যেই কাহিল শক্তিগড় থেকে বরাকর, সব এলাকার মানুষজনই। সন্ধ্যার পরে তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও সারা দিন চড়া রোদে জেরবার সবাই। সোমবার দুপুরে জেলার শহরাঞ্চলগুলিতে রাস্তাঘাটে তুলনামূলক ভাবে লোকজন কম দেখা গিয়েছে। রোদের আঁচ থেকে বাঁচতে সর্বাঙ্গ টুপি, চশমা, পোশাকে মুড়ে পথে বেরোচ্ছেন মানুষ। রাস্তার পাশে ঠান্ডা পানীয়, আখের রস, ডাব বিক্রি হচ্ছে দেদার।
আসানসোল মহকুমায় প্রায় প্রতি বছরের মতো এ বারও ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে মহকুমার নানা জায়গায় পানীয় জলের হাহাকার শুরু হয়ে গিয়েছে। আসানসোলের ৫০টি ওয়ার্ড-সহ কুলটি, বারাবনি, সালানপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে পানীয় জলের সঙ্কট শুরু হয়েছে। জলস্তর নেমে যাওয়ায় পুকুর এবং কুয়ো শুকিয়ে কাঠ। প্রায় প্রতি দিনই নানা জায়গায় পানীয় জলের দাবিতে জি টি রোড-সহ বিভিন্ন রাস্তা অবরোধ করছেন বাসিন্দারা। এরই মধ্যে যতটা সম্ভব পানীয় জলের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। |