নিজস্ব সংবাদদাতা • দুর্গাপুর |
শিল্পাঞ্চলে দাদাগিরি, তোলাবাজি চলবে না বলে রবিবারই আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য সম্মেলনে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই কাঠগড়ায় আইএনটিটিইউসি। শহরের একটি নামী উদ্যান রক্ষণাবেক্ষণের ভারপ্রাপ্ত বেসরকারি সংস্থার কর্তাকে সংগঠনের কার্যালয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধরের অভিযোগ দায়ের হয়েছে সংগঠনের ১০ জনের বিরুদ্ধে।
ডিএসপি-র তৈরি কুমারমঙ্গলম পার্ক এ শহরের অন্যতম আকর্ষণ। বছর সাতেক আগে তাদের কাছ থেকে পার্কটি লিজ দিয়েছে একটি বেসরকারি সংস্থা। রবিবার সংস্থাটির ১৭ জন কর্মী পার্কে কাজে না গিয়ে আইএনটিটিইউসি-র সম্মেলনে গিয়েছিলেন। শনিবার বিকেলেও তাঁরা কাজে যাননি। সংস্থার অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার সন্তোষ দাস সোমবার তাঁদের কাজে যোগ দিতে বাধা দেন। না জানিয়ে ছুটি নিলে সেটাই ওই সংস্থার নিয়ম। এতে কর্মীদের
|
প্রহৃত সন্তোষ দাস।
—নিজস্ব চিত্র। |
রোষের মুখে পড়েন তিনি। আধিকারিককে বাঁচাতে গিয়ে আক্রান্ত হন সংস্থাটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর দেবাশিস রায় এবং সিনিয়র ম্যানেজার নদেরচাঁদ মণ্ডল। পুলিশ গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে। এই ঘটনার পরে নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন দেবাশিসবাবু। তিনি বলেন, “এই পার্কে কোনও কর্মী সংগঠন আমরা বরদাস্ত করি না।
আইএনটিটিইউসি অনেক দিন ধরেই সংগঠন খোলার চেষ্টা করছে। তা করতে না দেওয়াতেই বোধহয় এ ভাবে হেনস্থা করা হল। শাসক দলের লোকজনের এই গুন্ডামি ঠেকিয়ে কত দিন এখানে টিকে থাকতে পারব, জানি না! ”
সোমবার সন্ধ্যায় দেবাশিসবাবু দুর্গাপুর থানায় আইএনটিটিইউসি কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাতে আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত ডিএসপি ঠিকা শ্রমিক কংগ্রেসের নেতা আশিস চক্রবর্তীর নাম আছে। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এডিসিপি (পূর্ব) সুনীল যাদব বলেন, “যেহেতু পুলিশ গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করেছে, তাই লিখিত অভিযোগ না পেলেও মামলা দায়ের করা হত।”
দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে সাম্প্রতিক কালে আইএনটিটিইউসি তথা তৃণমূলের বিরুদ্ধে একাধিক বার জঙ্গি আন্দোলনের অভিযোগ উঠেছে। গত ডিসেম্বরে জয় বালাজির ইস্পাত কারখানার ভিতরে আধিকারিকদের হেনস্থার অভিযোগ উঠেছিল। মুখ ঢাকা কিছু দুষ্কৃতীর হাতে সংস্থার এক আধিকারিক নিজেরই আবাসনে প্রহৃত হওয়ার পরে কারখানা তুলে নেওয়ার ভাবনাও শুরু করেন জয় বালাজি কর্তৃপক্ষ। পরে প্রশাসন ও শাসক দলের হস্তক্ষেপে সমস্যা মেটে। বহিষ্কৃত হন অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা অসীম প্রামাণিক। কাঁকসায় এসার অয়েলের মিথেন উত্তোলন প্রকল্পের কাজেও বারবার বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে। ক’দিন আগেই কলকাতার একটি পাঁচতারা হোটেলে রাতারাতি ঝান্ডা তুলে আইএনটিটিইউসি তাদের সংগঠন গড়ে তোলায় ক্ষুব্ধ তৃণমূলের মহাসচিব পার্থবাবু তা ভেঙে দেন। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য ছিল, পর্যটকদের নিরাপত্তা রাজ্য সরকারের কাছে সর্বাধিক অগ্রাধিকারের বিষয়। পরিস্থিতি যে তাতে বদলায়নি, এ দিনের ঘটনাই তার প্রমাণ।
সংস্থা সূত্রের খবর, সোমবার ১৭ কর্মীকে ফিরিয়ে দেওয়ার ঘণ্টা দেড়েক পরে দলে ভারী হয়ে তাঁরা ফিরে আসেন। জোর করে পার্কে ঢুকতে গেলে নিরাপত্তাকর্মী প্রণব ভট্টাচার্যের সঙ্গে বচসা বাধে। তাঁকে মারধর করা হয়। পরে ওই কর্মীরা পার্কে ঢুকে কাজকর্ম বন্ধ করে দেন। দেবাশিসবাবুর অভিযোগ, “সন্তোষবাবু প্রতিবাদ করায় মোবাইল কেড়ে নিয়ে তাঁকে তুলে নিয়ে যায়। খবর পাই, কালীদাস রোডে ডিএসপি ঠিকা শ্রমিক কংগ্রেসের অফিসে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমি নদেরচাঁদবাবুকে নিয়ে সেখানে যাই। তৃণমূল বিধায়ক নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়কেও ফোন করি। গিয়ে দেখি, সন্তোষবাবুকে সবাই মিলে লাঠি-রড দিয়ে মারধর করছে আইএনটিটিইউসি-র কিছু সদস্য। বাধা দিতে গেলে তারা আমাদের উপরে চড়াও হয়। সঙ্গে গালিগালাজ।” দুর্গাপুর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে দেবাশিসবাবু ও নদেরচাঁদবাবুকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সন্তোষবাবু এখনও চিকিৎসাধীন।
সংগঠনের সম্মেলনে যোগ দিতে কেরলে গিয়েছেন দুর্গাপুরের সিটু নেতা তথা প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক বিপ্রেন্দু চক্রবর্তী। তাঁর মন্তব্য, “ওই দলের নিচু তলার কর্মীদের উপরে নেতৃত্বের নিয়ন্ত্রণ নেই। তাই বারবার এমন হচ্ছে।” আইএনটিটিইউসি-র বর্ধমান জেলা সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পার্থবাবুর স্পষ্ট নির্দেশ, এই ধরনের ঘটনা বরদাস্ত করা হবে না। পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক। সংগঠনও প্রয়োজনে অভিযুক্তদের বহিষ্কার করবে।” দুর্গাপুর (পূর্ব) কেন্দ্রের বিধায়ক তথা আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পুলিশ তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নিক।” |