আমার কিট ব্যাগে একটা নতুন জিনিস ঢুকেছে। একটা পুরোদস্তুর নতুন ব্যাট। যেটা সুন্দর ‘কথা’ বলে! হ্যাঁ, ‘কথা’ বলে। বেশির ভাগ ভাল ব্যাটই যা করে থাকে। বল যখন ব্যাটে এসে লাগে, সুন্দর আওয়াজ হয়। আর আপনি বোঝেন, এটাই সেটা!
শনিবার জয়পুরে পা রেখে আমি এই ব্যাটটা পেয়েছি। আর প্রথম ব্যবহারেই ব্যাটটার ‘কথা’ বলা টের পেলাম হাল্কা। রেশমের মতো মসৃণ। একেবারে সোজা। সাত থেকে আট ‘গ্রেন’-এর ব্যাট। যেন একটা আট লেন-এর হাইওয়ে! নিখুঁত স্বরলিপির মতোই ব্যাটটারও ভারসাম্য। আর বরাবরের মতো আমি ব্যাটটার নাম দিয়েছি ‘রকি বালবোয়া’।
একটা ছোট গল্প এ বার আমি আপনাদের বলতে চাই। খেলতে গেলে সাধারণত আমি চার-পাঁচটা ব্যাট সঙ্গে নিই। আর তাদের আলাদা-আলাদা নাম দিইরকি টু, রকি থ্রি, রকি ফোর, রকি ফাইভ। এবং সেরা ব্যাটটার নাম রাখি রকি বালবোয়া। রকি ফোর আর ফাইভ-ও ভাল ব্যাট। আর ভগবান না করুন, সে দু’টো ব্যবহারও করি যখন রকি বালবোয়া-র কিছু হয়-টয়। রকি থ্রি আমার সঙ্গে আমার হোটেলের ঘরে থাকে। যেটা দিয়ে যখন মনে করি আমি শ্যাডো প্র্যাক্টিস করি। রকি টু নেটে ব্যবহৃত হয়। তবে মাঝেমধ্যে। |
জয়পুরে গম্ভীরের ছবি তুলেছেন উৎপল সরকার
|
ভিসিআরের যুগে শিশু থেকে আমার বড় হয়ে ওঠার দিনগুলোতে আমি সর্বদা রকি সিনেমাগুলোয় ডুবে থাকতাম। কে জানে, আমি হয়তো সব সময় আন্ডারডগ থাকতে পছন্দ করি! এটাও ঠিক জানি না যে, আমি কবে আর কী ভাবে রকি বালবোয়ার প্রেমে পড়েছিলাম। তবে ওই ছবিটা আমি বার বার, হাজার বার দেখতে পারি। হয়তো সেই ডায়লগটার জন্য, যেটা আমাকে আমার এই জীবনে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। যেখানে বলছে, “তুমি কত জোরে মারলে সেটা আসল নয়। আসল হল তুমি কতটা মার হজম করতে পারলে আর সেটা হজম করেও কতটা নিজেকে এগিয়ে নিয়ে গেলে। আর এ ভাবেই জিততে হয়!”
আমার ছেলেরা, আমার টিম কেকেআর-ও বহু মার হজম করেছে। কিন্তু লড়াকুর মতোই সেই সব মার হজম করেও নিজেদের এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। গত বছর জয়পুরেই রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে আমাদের সেই রকম একটা মার হজম করতে হয়েছিল। ২২ রানে আমরা ম্যাচটা হেরেছিলাম। এবং অন্যগুলোর মতোই জয়পুরের মারটাও আমার দলকে নেতিয়ে দেওয়ার বদলে বেশি তাতিয়ে দিয়েছিল। পরের ম্যাচটাই আরসিবি-র বিরুদ্ধে আমরা বড় ব্যবধানে জিতেছিলাম। ছেলেরা, তোমাদের জন্য আমি গর্বিত। |
ভাগ্য কখনও-সখনও নিষ্ঠুর হতেও পারে। গত বার জয়পুরের হোটেলে যে ঘরে আমি ছিলাম এ বারও সেই ঘরটাতেই আছি। ঘরটা নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু আমার কয়েক জন টিমমেট আমাকে মনে করিয়ে দিতে কিছুতেই ভুলছে না যে, গত বার আমি রাজস্থান রয়্যালসের সঙ্গে এই ম্যাচটায় প্রথম বলেই আউট হয়েছিলাম। এটা নিয়ে আমরা মজা করছি, একই সঙ্গে সামনের দিকে তাকাচ্ছি।
জয়পুরের মতো শহরগুলো, যেগুলো দিল্লি বা কলকাতার মতো মেট্রো শহর নয়, সেগুলো আমি পছন্দ করি। কেমন একটা হাত-পা ছড়ানো মেজাজ এই শহরগুলোর। আপন গতিতে এখানে সব কিছু ঘটে চলে। জয়পুরে আবার লোকজনেরা খুব রংচঙে জামাকাপড় পরে থাকেন। যে ব্যাপারটা বেশ ভাল লাগে আমার। এবং সেই ভাল লাগাটা ম্যাচের জন্য আমার প্রস্তুতিতেও সাহায্য করে।
পাক্কা দু’ঘণ্টা আমার এই লেখাটা লিখতে লেগেছে। কারণ তার মধ্যেই আমাকে অটোগ্রাফ দিতে হল। জয়পুরের কয়েক জন পুরনো বন্ধুর ফোন ধরতে হল। জনাকয়েকের সঙ্গে দেখাও করলাম। আর হ্যাঁ, এ সবের মধ্যেই আমার ব্যাটের কাছেও আমি ফিরে গিয়েছিলাম। রকি থ্রিযার গায়ে কয়েকটা টোকা মারলাম। তার পর হাতে তুলে নিলাম। সব শেষে একটা বিরাট ফলো থ্রু ঠিক যেন একটা দুর্দান্ত স্ট্রেট ড্রাইভ মারলাম! |