|
|
|
|
এনসিটিসি |
রাজ্যের অধিকার চেয়ে এক বিন্দুতে মমতা-মানিক |
সন্দীপন চক্রবর্তী • কলকাতা |
পঞ্চায়েত ভোট পিছনো-সহ একের পর এক বিষয়ে এ রাজ্যে যখন দু’দল যুযুধান, রাজ্যের অধিকারের প্রশ্নে ফের কাছাকাছি অবস্থানে দেখা যাচ্ছে তৃণমূল এবং সিপিএমকে! লোকসভা নির্বাচনের আগে দু’দলই কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারকে সহজে ছাড় দিতে নারাজ!
দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিয়ে আগামী ১৫ এপ্রিল দিল্লিতে সব রাজ্যের বৈঠক ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। প্রস্তাবিত জাতীয় সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা কেন্দ্র (এনসিটিসি) গড়া নিয়ে সেখানে আলোচনা হওয়ার কথা। সন্ত্রাসবাদ দমন অভিযানে যাবতীয় ক্ষমতা এনসিটিসি-র হাতে তুলে দিয়ে রাজ্য সরকারগুলির এক্তিয়ার খর্ব করা যাবে না বলে সেখানে ফের সরব হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে তৃণমূল-শাসিত পশ্চিমবঙ্গ এবং বাম-শাসিত ত্রিপুরা। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে অবশ্য ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে, রাজ্য সরকারগুলির আপত্তি মাথায় রেখে প্রস্তাবিত এনসিটিসি-র এক্তিয়ারে কিছু রদবদল আনা হবে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কেবল মৌখিক আশ্বাসে ভরসা করতে রাজি নয় দুই রাজ্যই।
ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের কথায়, “গত বছর এনসিটিসি নিয়ে প্রথম বৈঠকেই আমরা তীব্র আপত্তি জানিয়েছিলাম। এ বারের বৈঠকেও আমাদের যুক্তি স্পষ্ট করেই বলা হবে। এখন কেন্দ্রীয় সরকার কী করতে চাইছে, সেই ব্যাপারে লিখিত কোনও বক্তব্য এখনও পাইনি।” যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর স্বার্থে রাজ্যকে এড়িয়ে এনসিটিসি-র মতো সংস্থার হাতে সব ক্ষমতা যে তুলে দেওয়া যায় না, তার ব্যাখ্যা দিয়ে লিখিত বক্তব্যও তৈরি রাখা হচ্ছে ত্রিপুরা সরকারের তরফে। এনসিটিসি নিয়ে আগের বৈঠকের সময় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন পি চিদম্বরম। এখন সুশীল শিন্ডে দায়িত্ব নিয়ে কোন পথে এগোতে চাইছেন, দেখতে চায় সিপিএম। মুখ্যমন্ত্রী মানিকবাবু নিজেই দিল্লির বৈঠকে হাজির থাকবেন।
এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে সে দিন অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সম্মেলনে থাকবেন কি না, তা অবশ্য এখনও চূড়ান্ত নয়। সে দিন বাংলা নববর্ষ। পয়লা বৈশাখে মুখ্যমন্ত্রী কলকাতার বাইরে থাকতে আগ্রহী নন বলেই তৃণমূল সূত্রের খবর। তার আগে ৯ তারিখ যোজনা কমিশনের বৈঠকের জন্য তিনি এক বার দিল্লি যাচ্ছেনও। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর মন্ত্রিসভার কোনও বর্ষীয়ান সদস্যকে ১৫ তারিখের বৈঠকে প্রতিনিধিত্ব করতে পাঠাতে পারেন। তবে তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতার কথায়, “আমাদের রাজ্যের বক্তব্য ইতিমধ্যেই পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত বিষয়। সেখানে রাজ্য পুলিশ এবং গোয়েন্দা সংস্থাকে সামিল না-করে এনসিটিসি নিজের মতো অভিযান চালিয়ে যাবে, এই রূপরেখা তৈরি করলে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকেই আঘাত করা হবে।”
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রে অবশ্য ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে, বেশ কিছু রাজ্যের আপত্তি বিবেচনা করে কোনও রাজ্যে গিয়ে অভিযান চালিয়ে এনসিটিসি তল্লাশি, বাজেয়াপ্ত এবং গ্রেফতার করতে পারবে এই প্রস্তাবিত বিষয়টিতে রদবদল ঘটানো হবে। অভিযান চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হবে রাজ্য পুলিশকেই। তবে আগরতলা বা কলকাতা, কোথাওই এখনও এই সংক্রান্ত কেন্দ্রের কোনও ‘নোট’ পৌঁছয়নি।
রাজ্যের অধিকারের প্রশ্নে কাছাকাছি অবস্থান হলেও পশ্চিমবঙ্গের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য প্রশ্ন তুলছেন। যে পঞ্চায়েত নির্বাচন আইন নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা চলছে, প্রায় একই আইনে ত্রিপুরাতেও নির্বাচন হয়ে আসছে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানাচ্ছেন। সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মানিকবাবুর কথায়, “পশ্চিমবঙ্গের আইনই তো আমাদের কাছে মডেল ছিল। আমরা তাই গ্রহণ করেছিলাম। এই ব্যবস্থাতেই পশ্চিমবঙ্গে সাতটি পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছে। আমাদের রাজ্যেও ভোট হয়েছে। এখন তা হলে সমস্যা কেন?” সময়ে নির্বাচন না-হয়ে পঞ্চায়েতের মেয়াদ ফুরিয়ে গেলে নানা কেন্দ্রীয় প্রকল্পে সাহায্য বন্ধ হয়ে উন্নয়নের কাজই যে থমকে যেতে পারে, বাংলার বাম নেতাদের সুরেই একই উদ্বেগ দেশের একমাত্র বাম-শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর।
প্রসঙ্গত, দেশ জুড়ে জাঠা শেষ করার পরে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য দিল্লিতে ১২ এপ্রিল পলিটব্যুরো এবং ১৩-১৪ তারিখ কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক ডেকেছিল সিপিএম। পশ্চিমবঙ্গে এপ্রিল মাসেই প্রাথমিক ভাবে পঞ্চায়েত ভোটের দিন ঘোষণা হওয়ায় সেই বৈঠক মে পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। যার জন্য এই সিদ্ধান্ত, সেই পঞ্চায়েত ভোটই তার পরে অনিশ্চিত হয়ে গিয়েছে! |
|
|
|
|
|