আখড়া, দোকান পুণ্য স্নানের ভিড়ে কাটোয়ার গোপীনাথ মেলা
মানুষের ভিড়ে হারিয়ে যাওয়ার খবর আসছে কখনও। কখনও বা মেলা কমিটির পক্ষ থেকে ‘নিখোঁজ’-এর সন্ধান করা হচ্ছে। শনিবার থেকে শুরু হয়েছে কাটোয়ার গোপীনাথ মেলা। রবিবার সকালে কমিটির তাঁবুতে এক সঙ্গে বসে রয়েছেন কাটোয়ার কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, স্থানীয় অগ্রদ্বীপ গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান নিতাই মুখোপাধ্যায়, সিপিএমের কাটোয়া জোনাল কমিটির সদস্য সুব্রত চৌধুরি। তার কিছুটা দূরেই নিজের আখড়া পরিচালনা করছিলেন রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। কমিটির সম্পাদক অধীর ঘোষ বলছিলেন, “মেলা সবার। সব ধরনের মানুষের জন্য। কিন্তু এখানে রাজনীতির প্রবেশ নেই।”এই মেলা স্থানীয় ভাবে ‘ঘোষ ঠাকুরের মেলা’ বলেও পরিচিত। কাটোয়ার অগ্রদ্বীপে গোপীনাথ মন্দিরকে ঘিরে এই মেলা বসে। কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি থেকে এই মন্দির পরিচালিত হয়। প্রত্যেক বছর পুজোর সময় কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি থেকে গোপীনাথ মূর্তি অগ্রদ্বীপে আসেন। ৬ মাস কাটিয়ে মেলার শেষে ফিরে যান রাজবাড়িতে। আগে এই মেলা রাজবাড়ির প্রতিনিধিরা পরিচালনা করলেও আটের দশকে তৈরি হওয়া গোপীনাথ মেলা সমিতি এখন এই মেলা পরিচালনা করছেন। মেলা সমিতির দাবি, বেশ কয়েক বছর লোক কম হলেও, এই বছর আবার প্রচুর লোক সমাগম হয়েছে। এ বার অন্তত ২০০০ দোকান ও ৫০০ আখড়া এসেছে। মেলা থেকে যে আয় হয় সেই টাকায় মেলার খরচ ও গ্রামোন্নয়নের কাজে লাগানো হয় বলে মেলা কমিটির সদস্যেরা জানান।
ভিড়ে ঠাসাঠাসি কাটোয়ার গোপীনাথ মেলা।
প্রথম দিন চিড়ে মহোৎসব, দ্বিতীয় দিন অন্ন মহোৎসবের পর আজ সোমবার মেলার শেষ দিন। আজ সোমবার বারুণী তিথিতে ‘পূণ্য মুহূর্তে’ কয়েক লক্ষ মানুষ স্নান করবেন বলে প্রশাসন মনে করছেন। ফলে প্রশাসন এ বার অনেক আগে প্রস্তুতি নিয়েছেন। অধীরবাবু বলেন, “এ বার প্রচুর পরিমাণে পুলিশ মেলায় রয়েছে।”
কাটোয়া শ্রীচৈতনের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ জনপদ। কথিত আছে, চৈতন্যদেবের অগ্রগণ্য শিষ্য ছিলেন গোবিন্দ ঘোষ। তিনি অগ্রদ্বীপ গ্রামে গোপীনাথের বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন। গোবিন্দ ঘোষের পাঁচ বছরের সন্তান মারা যাওয়ায় তিনি ধর্মীয় কাজকর্ম থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। চৈতন্যদেব তখন গোবিন্দ ঘোষকে বলেন, “তোমার মৃত্যুর পর আমি পুত্র হয়ে পারলৌকিক কাজ করব।” পরবর্তী সময়ে গোবিন্দ ঘোষ প্রয়াত হলে পুত্র হিসেবে শ্রীচৈতন্য নিজেই পারলৌকিক কাজ করেছিলেন। গোবিন্দ ঘোষের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানকে ঘিরে অগ্রদ্বীপ মেলার সূত্রপাত। মেলায় পানীয় জল এবং শৌচাগার অপ্রতুল।
মেলার পথে ভিক্ষা করছেন সাধুরা।
অগ্রদ্বীপ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান নিতাই মুখোপাধ্যায় বলেন, “পঞ্চায়েতের পরে যতটা সম্ভব পরিষেবা দেওয়া যায়, তার চেষ্টা করে চলেছি।” ভাগীরথীর পশ্চিম পাড় (কাটোয়ার দিকে) সহায়তা কেন্দ্রে বসে কাটোয়া ২ বিডিও স্বপনকুমার পাত্র বলেন, “নৌকোগুলোর উপর নজর রাখতে হচ্ছে। যে কোনও সময় বিপদ ঘটে যেতে পারে। আর যে ভাবে নিখোঁজ সংখ্যা বাড়ছে, শেষ পর্যন্ত কী হবে কে জানে।” কাটোয়ার পাঁচঘড়ার সুন্দরী মণ্ডলকে কয়েক ঘণ্টা পর খুঁজে পেয়ে আত্মহারা পরিজনেরা। আর চোখের জল মুছতে মুছতে বৃদ্ধা সুন্দরীদেবী বলছিলেন, “আর বাড়ি ফেরা হবে না ভাবছিলাম। গোপীনাথকে ডাকছিলাম।” তখনও বাড়ির লোকজনকে খুঁজে না পেয়ে চুপ করে বসেছিলেন দাঁইহাটের এক বালিকা। অধীরবাবু বলছিলেন, “আমরা অনেককে বাড়ি পৌঁছে দিই।”

ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.