|
|
|
|
হুল্লোড় |
টাকা দিয়ে আমার বিশ্বাস কেনা যায় না |
‘এক থি ডায়েন’য়ের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন ডাকিনী বিদ্যার
শিক্ষিকা
ঈপ্সিতা রায় চক্রবর্তী। কেন? জানালেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্তকে |
চারদিকে ‘এক থি ডায়েন’য়ের বিরুদ্ধে আপনার তোলা আপত্তির চর্চা চলছে। এই বিতর্কের শুরু কোথায়? প্রায় দু’মাস আগে ছবির প্রযোজকরা একটা প্রস্তাব দিয়েছিল, যাতে আমি একতা কপূরের ছবির প্রোমোশনে যোগ দিই। আমার প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল ছবিটা সম্পর্কে তো আমার কোনও ধারণাই নেই। শুধুমাত্র কিছু অভিনেত্রীর নাম জানতাম। শুনেছিলাম তাঁরা ওই ছবিটি করছেন। আমাকে ছবির প্রোমোশনে থাকতে গেলে, আমার তো সিনেমার গল্পটা জানা প্রয়োজন। উল্টো দিক থেকে সঙ্গে সঙ্গে প্রস্তাব আসে যে, আমাকে সেটা ই-মেলে জানানো হবে। তার কিছু দিন পরে, আবার একই প্রস্তাব। তখন ইউনিটের এক মহিলা আমাকে জানান যে, তিনি ছবির ডিরেক্টরকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলবেন। কথা প্রসঙ্গে এই মহিলা আমাকে এটাও বলেন, ছবিতে “উই আর গোয়িং টু পারপেচুয়েট দ্য মিথ”। তার অর্থ হল আমরা কুসংস্কারটা বজায় রাখব। এর পর ডিরেক্টর ফোন করে আমাকে বেশ সোজাসাপ্টা ভাবেই বলেন যে, ছবিটা নাকি প্রথম থেকে শেষ অবধি পুরোটাই ‘ডার্ক’।
|
ঈপ্সিতা রায় চক্রবর্তী |
এই শুনে আপনার কী প্রতিক্রিয়া ছিল?
আমি বলেছিলাম যে ছবিতে যদি কিছুই ভাল না থাকে, তা হলে আমাকে সেটা প্রোমোট করতে কেন বলা হচ্ছে? আমার এত বছরের পড়াশোনা এবং চর্চার বিষয় থেকে তো এটা ভিন্ন মেরুর চিন্তাধারা। আমি এটাও ওঁকে বলি যে বারবার আমি ছবিটার গল্প জানতে চেয়েছি, কিন্তু আমাকে কিছুই জানানো হয়নি। প্রায় দশ দিন আগে আমার কাছে আবার ফোন আসে, বলা হয় যে, ৬ তারিখে ছবির প্রোমোশনে এই সিনেমার সঙ্গে জড়িত টিমটি কলকাতায় আসবে। আমি তখনই জানিয়ে দিই যে, আমি ছবির প্রোমোশনে থাকতে পারব না।
প্রোমোশনে থাকার জন্য কি আপনাকে টাকাপয়সা দেওয়ারও কথা হয়েছিল?
কী আর বলব! আমাকে বলা হয়েছিল, টাকাপয়সাটা কোনও সমস্যাই হবে না। এটা শুনে খুব অপমানিত বোধ করেছিলাম। টাকা দিয়ে আমার বিশ্বাস কেনা যায় না। ওঁরা কী ভাবে টাকা দিয়ে আদর্শ জলাঞ্জলি দেওয়া যায়! আমি গল্পটা জানি না। পরে একটা ই-মেল পাঠানো হয়েছিল। যাতে ছবিটার একটা ট্রেলার ছিল। সেটা দেখেই আমি ওঁদের সঙ্গে টেলিভিশন চ্যানেলে চ্যানেলে ঘুরে বেরিয়ে বলব ছবিটা দেখুন। আমি ইন্টারনেটে ছবিটার সিনপসিস পড়েছি। বুঝেছি এ রকম ছবি দেখানো হলে গ্রামে গ্রামে ডাইনি সন্দেহে মেয়েদের উপর অত্যাচার আরও বেড়ে যাবে। সমাজের ক্ষেত্রে এটা খুবই ক্ষতিকারক। মেয়েদের প্রতি অ্যাটিচিউডটাই ঠিক নয়। আমি আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি যে, কঙ্কনা সেন শর্মার মতো একজন শিক্ষিত মহিলা এই রকমের একটা ছবি করতে রাজি হয়েছিলেন।
আপনি সেন্সর বোর্ডে কথা না বলে সোজা ভারতের রাষ্ট্রপতির নজরে এ বিষয়টা নিয়ে এলেন কেন?
দেখুন, আমার মনে হয়, বিষয়টা শুধু মাত্র একটা সিনেমাকে ঘিরে নয়। আমার মনে হয়, এটাকে সামগ্রিক ভাবে দেখা দরকার। কুসংস্কার আরও বেড়ে যাবে, এই সব ধারণা প্রচার হলে। তাতে মেয়েদের উপর অত্যাচার
অনেক বেড়ে যাবে। তাই আমি রাষ্ট্রপতিকে আমার উদ্বেগটা জানাই। এবং উনি জাতীয় মহিলা কমিশনকে বিষয়টা রেফার করেন।
অনেকে বলছেন আপনি ফার্স্ট লেডির খুব কাছের বলে সোজা রাষ্ট্রপতির কাছে নিজের ক্ষোভটা জানিয়েছেন। এ কথা ঠিক?
এটা অতিরঞ্জিত একটা প্রচার। মিডিয়ার সৃষ্টি। আমাদের রাষ্ট্রপতি বাঙালি। অনেকের কথাই উনি শোনেন। |
|
আপনি নিজে এখন কী চাইছেন? ছবিটা ব্যানড্ হয়ে যাক?
আমার নিজের চাওয়া না-চাওয়া নিয়ে কোনও কথা বলতে চাই না। সে রকম কিছু আমি বলিওনি। আমার আদর্শের সঙ্গে ছবিটির বিষয়ের একটা সংঘাত রয়েছে।
এবং সেটাই আমি জাতীয় মহিলা কমিশনের সচিব মমতা শর্মাকে জানিয়েছি। এর পর ব্যাপারটা ওঁরাই খতিয়ে দেখবেন।
অনেকেরই প্রশ্ন ডাকিনী বিদ্যা আসলে কী?
এটা পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ধর্ম। কুসংস্কারের কোনও জায়গা নেই এই বিদ্যায়। আমি বহু বছর ধরে এই নিয়ে চর্চা করছি।
আপনার পিটিশনের ফলে ছবিটার তো অনেক প্রচারও হচ্ছে। সেটা নিয়ে আপনি ভাবছেন না?
গ্রামে গ্রামে ঘুরেছি কুসংস্কার দূর করতে। কখনও ডাইনি সন্দেহ করা মেয়েদের রক্ষা করতে গিয়ে নিজেও আহত হয়েছি। পুরুলিয়ার গ্রামে ঢিল ছুড়েও মারা হয়েছে আমাকে। আমি ছবিটির ট্রেলার দেখেছি। মনে হয়েছে ছবিটি কুসংস্কারাচ্ছন্ন। কোনও বিশেষ ব্যক্তির প্রতি আমার কোনও ক্ষোভ নেই। যদি আমার মত প্রকাশ করার ফলে ছবির প্রচার হয়, তাতে আমি কী করতে পারি?
আপনার লেখা গল্পের উপর ভিত্তি করে তো অঞ্জন দত্তের ছবি করার কথা ছিল। কী হল সেটার?
একটা টেলিফিল্ম বানানো হয়েছিল। নাম ছিল ‘দ্য ম্যানিকুইন’। একজন অভিনেত্রীকে নিয়ে যিনি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারেন না যে তাঁর স্টারডমটা আর নেই।
টেলিফিল্মের কথা বলছি না। একটা পুরোদস্তুর ফিচার ফিল্মের কথা উঠেছিল, যেটায় অপর্ণা সেন আর ঋতুপর্ণ ঘোষের অভিনয় করার কথা ছিল...
দেখুন, আমি কিন্তু অপর্ণা বা ঋতুপর্ণ কারও নামই সাজেস্ট করিনি। অঞ্জন বলেছিল আমাকে একটা গল্প লিখতে যেখানে, একজন বয়স্ক অভিনেত্রী খুব চেষ্টা করেন তাঁর যৌবনকে ধরে রাখতে। উনি চান যাতে নতুন কোনও অভিনেত্রী ইন্ডাস্ট্রিতে এলেই তাঁদের জীবনে একটা বিপর্যয় ঘটে। এই বয়স্ক অভিনেত্রী সুপারন্যাচারাল পাওয়ার দিয়ে তাঁর কার্যসিদ্ধি করার চেষ্টা করেন। অঞ্জনের সঙ্গে এ নিয়ে কথাবার্তা হলেও শেষ পর্যন্ত আর কিছু হয়নি।
ভবিষ্যতে আর ছবি করতে চান?
‘সেক্রেড ইভিল’ বলে আমার একটা গল্প নিয়ে ছবি হয়েছিল। তাতে আমি যে খুব খুশি হয়েছিলাম তা নয়। ভবিষ্যতে চাইব যদি এমন একটা ছবি করা যায়, যেখানে সুপারন্যাচারাল আর সাইকোলজিকে ঠিক মতো ব্যাখ্যা
করা যায়। তবে ছবি করাটা আমার উদ্দেশ্য নয়। |
|
|
|
|
|