৮টি গাড়ি উদ্ধার হলেও বেপাত্তা বিধায়কের গাড়ি
বিধায়ক মশাই প্রতিদিনের মতোই প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। ভ্রমণ সেরে বাড়ি ফিরছেন। এমন সময়ে ছেলের ফোন, ‘বাবা গাড়িটা নেই। চুরি হয়ে গিয়েছে।’ বিধায়ক মশাই অবাক! রাতে দেরি করে ফেরায় তিনি নতুন কেনা বোলেরো গাড়িটা আর গ্যারেজে রাখেননি। বাড়ির সামনেই রেখে দিয়েছিলেন। খোঁজ খোঁজ। থানা, পুলিশ। পাঁচ মাস কেটে গেলেও গাজোলের কংগ্রেস বিধায়ক সুশীল চন্দ্র রায়ের চুরি যাওয়া গাড়ি আজও পুলিশ উদ্ধার করতে পারেনি।
কিন্তু এই সূত্র ধরে তদন্তে নেমে একাধিক গাড়ি চুরির চক্র ধরা পড়েছে পুলিশের হাতে। উদ্ধার হয়েছে ৮টি গাড়ি। ‘এতগুলো গাড়ি উদ্ধার হল, আর আপনারটাই পাওয়া গেল না?’ পথে ঘাটে পরিচিত লোকের সঙ্গে দেখা হলেই মালদহ জেলার এই স্মিতবাক বিধায়ককে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। লাজুক হেসে সুশীলবাবু বলছেন, “আমি জনপ্রতিনিধি। আমার গাড়ি পাওয়া না গেলেও অন্যদের গাড়ি উদ্ধার হচ্ছে। এতেও আমার শান্তি। আমার গাড়ি চুরি না গেলে অন্যদের গাড়িগুলিও উদ্ধার হত না।” তবে বিধায়কের গাড়ি উদ্ধার করতে না পারায় গাজোল থানার ওসি অসীম গিরিকে প্রথমে শো-কজ, পরে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
সুশীলবাবুর ডব্লু বি বি ৬৬ কে/৯৯৯৮ বোলেরো গাড়িটি গাজোলে তাঁর বাড়ির সামনে থেকেই চুরি যায় গত ৭ নভেম্বর। এক দিন খোঁজার পরে ৮ নভেম্বর তিনি থানায় ডায়েরি করেন। বিধায়ক মশাইয়ের আরও দু’টি বোলেরো গাড়ি আছে। এখন সে দু’টি তিনি ব্যবহার করছেন। তবে, যত রাতেই বাড়ি ফিরুন, ভুলেও আর সুশীলবাবু বাড়ির সামনে গাড়ি রাখছেন না। বাড়ি ঢুকিয়ে সোজা গাড়ি গ্যারেজে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন। ৮ টি গাড়ি উদ্ধার হয়ে গেলেও বিধায়ক মশাইয়ের গাড়ি উদ্ধার না করতে পেরে পুলিশও রীতিমত চাপে পড়েছে। কেন বিধায়কের গাড়ি পুলিশ উদ্ধার করতে পারছে না? তা নিয়ে বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে চিঠি দিয়েছেন পুলিশকে। কয়েক মাস চেষ্টা করেও গাড়ি উদ্ধারে ব্যর্থ হওয়ায় গাজোল থানার ওসি অসীম বেরাকে সরিয়ে দেওয়ায় এখন গাজোল থানার ওসি সঞ্জয় ঘোষ। তিনি জানান, তদন্তের কাজ চলছে।
বিভিন্ন জেলা এমনকী বিহার, ঝাড়খন্ডেও গাড়ি চুরি চক্রের উপরে পুলিশ নজর রেখেছে। আফশোস করে সঞ্জয়বাবু বলেন, “১ জানুয়ারি একটা বোলেরো উদ্ধার করে ভাবলাম, এবার বোধহয় পেয়েছি। কিন্তু দেখা গেল ওটা এমএলএ সাহেবের গাড়ি নয়।” এমনকি চালককে খুন করে স্করপিও গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যাওয়া একটি চক্রও ধরা পড়েছে সঞ্জয়বাবুদের হাতে। সুশীলবাবু পার্টির নেতা। সেই সূত্রে খোঁজ করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত তিনি চোর অব্দি পৌঁছেছেন। তাঁর কথায়, “স্থানীয় কিছু কচিকাচারাই গাড়িটা চুরি করেছে। তারপরে ওরা কালিয়াচকের একজনের কাছে দেড় লক্ষ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে।
ওরা তা স্বীকারও করেছে। কিন্তু যার কাছে বিক্রি করেছে, তার সন্ধান ওরা জানে না!”
পুলিশ তদন্তে নেমে জলপাইগুড়ি থেকে নদিয়া, বিহারের কিষাণগঞ্জ থেকে শুরু করে ঝাড়খন্ডের নানা জায়গায় দৌড়ে বেরিয়েছে। জলপাইগুড়ির বক্সিহাট থেকে উদ্ধার হয়েছে তিনটি বোলেরো গাড়ি। ঝাড়খন্ড থেকে উদ্ধার হয়েছে আরও দু’টি গাড়ি। একদিন পুলিশ সুশীলবাবুকে ফোন করে জানাল, ‘স্যার আপনার গাড়ি পাওয়া গিয়েছে। কালিয়াচকের এক আমবাগানে রয়েছে।’ সুশীলবাবু গিয়ে দেখেন অবিকল তাঁর গাড়ির মতোই দেখতে। কিন্তু তাঁর গাড়িটি নয়। পরে জানা গেল, ওটা বাঁকুড়ার কোতলপুর থেকে চুরি হয়েছিল। আবার একদিন শুনলেন, উত্তর দিনাজপুরের বুনিয়াদপুরে এক সাধু তাঁর গাড়ি চুরি করে পালাচ্ছিল। লোকেদের হাতে ধরা পড়ে বেদম পেটানি খেয়েছে॥ শেষ পর্যন্ত প্রায় হাল ছাড়া অবস্থা বিধায়কের। এখন তিনি বিমা কোম্পানির দ্বারস্থ হয়েছেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.