‘সাজানো পরিষেবা’র ঘনঘটা সেই একইরকম। বদলে গিয়েছে শুধু জায়গাটা।
মালদহের জায়গায় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ।
মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে পরিকাঠামোর যা হাল, তাতে মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার (এমসিআই)-এর অনুমোদন পেতে যে অসুবিধা হবে, স্বাস্থ্যকর্তাদের সে আশঙ্কা ছিল। মেডিক্যাল কলেজের নির্মাণই এখনও সম্পূর্ণ নয়, তার উপর যত জন চিকিত্সক কিংবা স্বাস্থ্যকর্মী আবশ্যক তার সিকিভাগও জোগাড় হয়নি। ফলে, ‘মালদহ-মডেল’ অনুসরণ করা ছাড়া উপায় কী?
শনিবার পরিদর্শকদের সামনে পরিষেবা প্রমাণে মরিয়া মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ তাই ঘাটতি ঢাকতে বীরভূম, উত্তরবঙ্গ এমনকী কলকাতার সরকারি হাসপাতাল থেকে ‘ভাড়া’ করে আনলেন চিকিত্সক। ‘নেই’-এর দীর্ঘ তালিকা ঢাকতে লালবাগ হাসপাতাল থেকে রাতারাতি উঠিয়ে আনা হল ইউএসজি মেশিন। এমনকী পরিদর্শকেরা ‘ওটি-সেন্টার’-এর খোঁজ করায় কলেজের প্রশাসনিক অফিসের উল্টো দিকে নির্মিয়মাণ ভবনটিকে নির্বিকার মুখে দেখিয়ে দিয়েছেন হাসপাতালের অধ্যক্ষ প্রদীপকুমার সাহা।
তিনি স্বীকারও করে নিচ্ছেন, “উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ, আরজিকর, কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের মত রাজ্যের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজগুলি থেকে চিকিত্সক আনতে হয়েছে। সব মিলিয়ে আমরা ৪৫ জন সিনিয়র রেসিডেন্ট এবং ৩০ জন জুনিয়র রেসিডেন্ট-এর তালিকা তৈরি করে পরিদর্শকদের জমা দিয়েছি। রাতারাতি এত চিকিত্সক পাব কোথায়!”
গত ৪ ও ৫ এপ্রিল বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ থেকে আসা ওই চিকিত্সকদের কাউকে ‘অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর’ কাউকে বা ‘অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর’ হিসেবে দেখানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ‘ভাড়া’য় আসা ওই চিকিত্সকেরা। গত দু’দিন ধরে তাঁরা রয়েছেন মেডিক্যাল কলেজের কাছাকাছি বা শহরের লালদিঘি পাড়ার বিভিন্ন হোটেলে। চিত্তরঞ্জন মেডিক্যাল কলেজের চিকিত্সক স্বপন সামন্ত গত পয়লা এপ্রিল বহরমপুরে এসেছেন ‘হাজিরা’ দিতে। তিনি বলেন, “হোটেলে উঠেছি। তবে কত দিন থাকতে হবে ঠিক জানি না।” এক চিকিত্সকের কথায়, “এমসিআই প্রতিনিধির সামনে হাজির করানোর জন্য অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ও অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিসেবে অনেককে ভাড়া করে নিয়ে আসা হয়েছে। আমিও তাঁদের এক জন।”
শুধু চিকিত্সক নন, পরিষেবার প্রমাণ রাখতে ধার করে আনা হয়েছে লালবাগ মহকুমা হাসপাতালের আল্ট্রাসোনোগ্রাফি মেশিনটিও। যদিও প্রদীপবাবু তা মানতে চাননি। তবে লালবাগ হাসপাতালের ওয়ার্ডমাস্টার শিশির সাহা বলেন, “এখান থেকে একটি ইউএসজি মেশিন বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়েছে। কেন বলতে পারব না। সুপার বিষয়টি জানেন।”
দুই পরিদর্শক সুচেতা চৌধুরী ও বিকাশ সিংহ হাসপাতালের কাণ্ডকারখানা দেখে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। শনিবার সকালে কলেজের পরীক্ষাগারে খাঁচার মধ্যে কোনও গিনিপিগ দেখতে না পেয়ে সুচেতাদেবী প্রশ্ন তুললে অধ্যক্ষ জানান, ৮টি গিনিপিগ ছিল। কিন্তু রাতারাতি সব ক’টিই মারা গিয়েছে। যা শুনে মুচকি হেসেছেন তিনি। যা দেখে কলেজের এক চিকিত্সকের মন্তব্য, “ওই হাসিতেই যা বোঝানোর বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি!”
|
ইউরোলজি বিভাগ পরিচালনা ও সেখানকার রোগীদের চিকিত্সার জন্য সম্প্রতি কলকাতার কোঠারি মেডিক্যাল সেন্টারের সঙ্গে চুক্তি করেছে আরজি স্টোন ইউরোলজি অ্যান্ড ল্যাপ্রোস্কোপি হাসপাতাল। এ ছাড়াও, ভারতে সংস্থার ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে একগুচ্ছ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছ তারা। ঢাকুরিয়ায় সম্প্রতি একটি ৬০ শয্যার হাসপাতালও চালু করেছে আরজি স্টোন। |