ডিম থেকে হাঁস হয়, তা বলে হাঁস থেকে ডিম?
বৃহস্পতিবার এমনটাই ঘটছে মালদহে। ছিলেন সিনিয়র চিকিৎসক। এক দিনের জন্য তাঁদের হতে হয়েছে জুনিয়র রেসিডেন্ট! আবার যাঁরা ছিলেন অ্যাকাউন্টেন্ট বা করণিক তাঁদের এক দিনের জন্য ‘অভিনয়’ করতে হয়েছে স্বাস্থ্যকর্মীর। মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার (এমসিআই) পরিদর্শকেরা এসেছেন যে! তৃতীয় বর্ষের পঠনপাঠনের অনুমোদন পেতেই হবে মালদহ মেডিক্যাল কলেজকে।
মালদহ মেডিক্যাল কলেজের পরিকাঠামোর যা হাল, তাতে এমসিআই-এর অনুমতি পেতে যে অসুবিধা হবে, সেই আশঙ্কা স্বাস্থ্যকর্তাদেরও পুরোমাত্রায় ছিল। মেডিক্যাল কলেজের নির্মাণই এখনও শেষ হয়নি। তার উপর যত ডাক্তার, সিনিয়র-জুনিয়র রেসিডেন্ট এবং স্বাস্থ্যকর্মী দরকার তার সিকিভাগও জোগাড় হয়নি। ফলে অন্য জায়গা থেকে লোক নিয়ে এসে এমসিআইকে দেখিয়ে অনুমোদন জোগাড়ের চেষ্টা করা হবে, তা স্বাস্থ্য দফতর এক রকম স্বীকারই করেছিল। অভিযোগ, এ দিন হয়েছেও তাই।
মালদহ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ উচ্ছ্বল ভদ্রের বক্তব্য, কলকাতা থেকে ৩৫০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরে এই জায়গায় চাকরি করতে কেউ আসতে চাইছে না। তিনি বলেন, “সিনিয়র-জুনিয়র মিলিয়ে ৬১ জন রেসিডেন্ট চিকিৎসক থাকা চাই। মাত্র ১৩ জনকে পাওয়া গিয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীর ৭৬টি পদে আছেন মাত্র ৩ জন। এই অবস্থায় কিছু করার নেই।” |
কলেজে কর্মরত ৪৮ জন অভিজ্ঞ চিকিৎসককে পরিদর্শকদের কাছে সদ্য কাজে যোগ দেওয়া সিনিয়র ও জুনিয়র রেসিডেন্ট হিসাবে দেখানো হয়েছে, জানিয়েছেন মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকেরাই। অধ্যক্ষের সাফাই, “সবাই তো এমবিবিএস পাশ। একদিনের জন্য কে কী পদে রইলেন তাতে কী এসে যায়!” মেডিক্যাল শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমরা অনেক সৎ। দক্ষিণে নানা জেলা থেকে ডাক্তারদের ভাড়া করে তুলে আনা হয় মেডিক্যাল কলেজগুলিতে। আমরা তো সরকারি চিকিৎসকদেরই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখাই। এতে কোনও অন্যায় নেই। মেডিক্যাল কাউন্সিল সব জানে।”
মেডিক্যাল কলেজের অফিসের করণিক ও অ্যাকাউন্টস বিভাগের লোকেদের স্বাস্থ্যকর্মী সাজিয়ে পেশ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। তবে এই ভাবে অনুমোদন জোগাড় করলেও কলেজের তৃতীয় বর্ষের ক্লাস ও হাসপাতাল, দুই-ই কী করে চালানো যাবে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন চিকিৎসক ও মেডিক্যালের পড়ুয়ারা।
তৃণমূলপন্থী চিকিৎসক সংগঠন ‘প্রগ্রেসিভ ডক্টর্স অ্যসোসিয়েশন’-এর জেলা সম্পাদক বিমল পণ্ডিত জানান, তাঁরাও কলেজের অনুমোদনের স্বার্থে এই ‘সাজানো’ ঘটনায় সহযোগিতা করেছেন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী আবু হাসেম খান চৌধুরীর বক্তব্য, “ক’দিন আগে আমি কলেজে গিয়ে পরিকাঠামোর সমস্যার কথা শুনেছি। সে জন্য অনুমোদন যাতে এমসিআই না আটকে দেয়, তা দেখার চেষ্টা করব। তবে সিনিয়র-জুনিয়র রেসিডেন্টের সমস্যার কথা জানি না। কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।”
বৃহস্পতিবার বি জে মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষক হিতেন্দ্র আর শাহ ও গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষক দেবব্রত গোস্বামী মালদহ মেডিক্যাল কলেজে পৌঁছান। এমসিআইয়ের ওই প্রতিনিধি দলটি মেডিক্যালের বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখেন। দেবব্রত গোস্বামী বলেন, “আমরা সব খতিয়ে দেখছি।” |